কলকাতা বিমানবন্দরে ‘হেনস্থা’ রূপান্তরকামীকে, আবারও প্রশ্নের মুখে শহরের মানসিকতা

খুব বেশিদিন আগেকার কথা নয়। ভারতে সমকামিতাকে বৈধ ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রদ করা হয়েছিল ৩৭৭ ধারা। আদালত বৈধতা দিলেও, আমরা, আমাদের সমাজ কি রামধনুকে মেনে নিয়েছিল? সমকামী ও রূপান্তরকামীদের ওপর একের পর এক নির্যাতন এই প্রশ্নটা তুলে ধরছে প্রবলভাবে। ‘ওদের’ দেখলে আমাদের চোখ যে ঈষৎ বেঁকেই যায়, চারপাশের নানা ঘটনায় সেই ছবিটাই উঠে আসে।

সম্প্রতি এইরকমই ঘটনার শিকার হয়েছেন অচিন্ত্য প্রান্তর। ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের অন্যতম মুখ অচিন্ত্য দিল্লি যাওয়ার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছোন। সেখানে তাঁকে একপ্রকার বাধ্য করা হয় পুরুষদের লাইনে দাঁড়াতে। বারবার প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও কোনো কথা শোনা হয় না। এবং অচিন্ত্য’র দাবি, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেকিং করার সময় একরকম হেনস্থাই করা হয় তাঁকে। এই ঘটনা নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, একজন মহিলার সঙ্গে কি এইরকম করতে পারতেন ওই কর্তব্যরত পুরুষ রক্ষী? বারবার বলা সত্ত্বেও পুরুষ, নারীর বাইরে আর কোনো তৃতীয় জায়গা করা হয় না। এটাই কি স্বাধীনতার নমুনা? অচিন্ত্য বলছিলেন, "এটা তো সিস্টেমের চেঞ্জের ব্যাপার। এয়ারপোর্টের মতো জায়গায়, যেখানে মূলত শিক্ষিত, স্বচ্ছল মানুষদের যাতায়াত, সেরকম জায়গাতেই এমন হচ্ছে। তাহলে ট্রেনে বাসে কী হতে পারে, তা তো কল্পনা করা খুবই সহজ। এটা একটা সিস্টেমিক ফেলিওর।"

এই প্রসঙ্গে প্রহর কথা বলেছিল অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার অফ বেঙ্গলের সদস্য রঞ্জিতা সিনহার সঙ্গে। তিনি জানালেন, "আমি গত কুড়ি বছর ধরে এই নিয়ে লড়াই করতে গিয়ে এমন অনেক ঘটনাই দেখেছি। এটা তো নতুন কিছু নয়। আজ অচিন্ত্য'র মতো মানুষ, যারা তরুণ প্রজন্মের, ফেসবুকে লিখেছে বলে বাকিরা জানতে পেরেছে। কিন্তু এমন হাজার-হাজার অচিন্ত্য এরকম অবিচারের শিকার হয়েই বেঁচে আছে। যে সব রূপান্তরকামীরা লেখাপড়া করতে পারেনি, স্কুল-কলেজে যেতে পারেনি, তাদের কী হবে? সর্বত্রই ব্যঙ্গের শিকার হয়েছে বারবার। বিমানবন্দরেও হেনস্থার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। আমাকেও সহ্য করতে হয়েছে এই হেনস্থা। বিষয় হল, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালে আমাদের নিজেদের মতো করে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। বাকি সবার মতোই। কিন্তু কোথায় কী! এত মানুষ আজ সারা দেশে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কথা বলছেন, কেউ কিন্তু একবারও আমাদের অধিকার নিয়ে কথা তুলছে না।"

ঘটনা হল, শুধু বিমানবন্দরই নয়, রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য কোথাও কোনো আলাদা জায়গা নেই। শৌচালয়ও নেই কোনো তৃতীয় দরজা। অচিন্ত্য’র মতো আরও অনেকের সঙ্গে একইরকম ঘটনা ঘটে চলছে অহরহ। এদিকে ভারতে সমকামিতা বৈধ হয়ে গেছে। শুধু কি আইনমাফিক কাজ সেরেই ক্ষান্ত আমরা? সমাজ কি আদৌ মানুষ বলে মনে করে রূপান্তরকামীদের? এই প্রশ্নই উঠে আসছে বারবার।