কোভিড-পরস্থিতি মোকাবিলায় হেল্পডেস্ক প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের

“ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ যেকোনো সামাজিক মাধ্যম খুললেই আমরা দেখতে পাচ্ছি কেউ না কেউ সাহায্যের আবেদন করছেন। কেউ হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন না, কেউ অক্সিজেন বা প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না। অনেকে প্রয়োজনীয় কন্ট্যাক্ট দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয়রা কি এই জরুরি পরিস্থিতিতে একের পর এক কন্ট্যাক্টে ফোন করে ব্যর্থ হবেন? আমরা তাই যতুটুকু সম্ভব সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করছি।” বলছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক স্তরের ছাত্রী ঐশিকা গঙ্গোপাধ্যায়। সম্প্রতি প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা মিলে তৈরি করেছেন একটি হেল্পডেস্ক। ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত মানুষ এবং তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে।

করোনা অতিমারী প্রথম থেকেই দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভিতরে ভিতরে কতটা দুর্বল। আর মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে এসে সেই অব্যবস্থার ছবিটাই আরও প্রকোট হয়ে উঠেছে। গোটা দেশ অক্সিজেনের অভাবে ভুগছে। মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধও। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত আর এক পড়ুয়া দেবনীল পাল বলছেন, “এটা এমন একটা সময়, যখন দেখতে পাচ্ছি প্রতিটা রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা একদিনে আসেনি। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে সরকারের সমালোচনা করার চেয়েও আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমাদের দায়িত্ব মানুষকে ওষুধ, অক্সিজেনের সন্ধান দেওয়া।”

গত বৃহস্পতিবার ঐশিকা এবং জীববিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন পড়ুয়া একসঙ্গে এমন একটি চ্যানেল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। রাজ্য তথা দেশের নানা স্থান থেকে পড়ুয়ারা পড়তে আসেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অবশ্য লকডাউনের কারণে প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়িতে আছেন। কিন্তু সবার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি পরিবর্তনশীল ডেটাবেস তৈরি করা কঠিন হবে না, বুঝেছিলেন তাঁরা। আর একদিনের মধ্যেই অন্যান্য বিভাগের পড়ুয়ারাও এগিয়ে এসেছেন এই উদ্যোগের পাশে। ফেসবুকে তৈরি হয়েছে একটি গ্রুপ, ‘কোভিড হেল্পডেস্ক বাই প্রেসিডেন্সি’। রাজ্যের যেকোনো প্রান্তের মানুষ ফেসবুকের পাশাপাশি যোগাযোগ করতে পারেন ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে। যোগাযোগ করতে পারেন ঐশিকা গঙ্গোপাধ্যায়  (৮৭৭৭৭৩৮২৪০) অথবা দেবনীল পাল (৯৮৩০৩৫৭৪৮২)-এর সঙ্গে।  ঐশিকা জানালেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করে তবেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। হয়তো এক ঘণ্টা আগে যেখানে অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছিল, এক ঘণ্টা পর সেখানে স্টক শেষ। এই পরিস্থিতিতে রোগী বা তাঁর আত্মীয়দের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন যে এখন কোথায় স্টক আছে।” সামাজিক মাধ্যম যে এই কাজে একটা বড়ো সাহায্য করছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। তবে সেখানেও নানা ধরণের প্রতিকূলতা দেখা যাচ্ছে। ঐশিকার কথায়, “অনেক সময়েই কন্ট্যাক্ট শেয়ার করতে গেলে ফেসবুক সেই পোস্ট আটকে দিচ্ছে। জানাচ্ছে এই পোস্ট তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে। আমরা তাই এখন ছবির আকারে ফোন নাম্বার পাঠাচ্ছি। এভাবে পোস্ট করলে তা আটকাচ্ছে না।”

“আসলে ছাত্রছাত্রীরা তো সমাজ বিচ্ছিন্ন নয় কখনোই। যেকোনো সামাজিক প্রতিকূলতার সময়ে ছাত্রছাত্রীরাই এগিয়ে এসেছে সবার আগে। প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া হিসাবে আমরা সেই দায়িত্ব পালনেরই চেষ্টা করছি।” জানালেন দেবনীল। ইতিমধ্যে নানা স্তর থেকে সাহায্যও পেয়েছেন পড়ুয়ারা। আর এই উদ্যোগের মতো করে সারা দেশের ছাত্রছাত্রী সমাজ ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে মহামারীর এই কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে না। এমনটাই মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

আরও পড়ুন
টিকা নিলেই নিশ্চিন্ত নয়, আবারও ঘটতে পারে করোনা সংক্রমণ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনা আটকাতে পারে না ভিটামিন ডি, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা