টিকা নিলেই হার মানবে করোনা? সামাজিক মাধ্যমে আশার বার্তা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের

গতকাল থেকেই ভারতে শুরু হয়ে গিয়েছে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি। তবু বিতর্ক যেন পিছু ছাড়েনি। সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে অপরিক্ষিতি প্রতিষেধক নিতে গিয়ে ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনার কথা। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিছক গুজব। আর ঠিক এই সময়েই সাধারণ মানুষের প্রতি সদর্থক বার্তা দিতে এক ব্যতিক্রমী প্রচার শুরু করলেন দেশের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রত্যেকে টিকা নেওয়ার পর হাতের দুটি আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন বিজয়ের বার্তা।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথমেই টিকা দেওয়া হবে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের। গতকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কর্মসূচি। প্রায় প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে দৈনিক ১০০ জনের টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেইসমস্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে বেরিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এক আশার বার্তা। হাতের দুটি আঙুল তুলে ধরে জানিয়ে দিচ্ছেন করোনা ভাইরাসকে তাঁরা হার মানিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে একটি বিতর্ক। ‘ভারত বায়োটেক’-এর তৈরি যে প্রতিষেধকটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার অন্তিম পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়নি। করোনার বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা গড়ে তুলতে এই ভ্যাকসিন কার্যকর বলে প্রমাণিত হলেও তার থেকে কোনো ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে কিনা, সেটা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার অবকাশ নেই। এই পর্যায়ে এত তড়িঘড়ি টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করা কতটা যুক্তিযুক্ত, এমন প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদেরই একাংশ। তবে অন্য পক্ষের দাবি, দেশের বিজ্ঞানীদের উপর ভরসা রাখতেই হবে। এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাঁদের অবিশ্বাসের কোনো কারণ নেই। কিন্তু সেই বিশ্বাস কি আদৌ যুক্তি দিয়ে সিদ্ধ?

অন্যদিকে অবশ্য আরও একটি ব্যবহারিক সমস্যার কথা তুলছেন অনেকে। ১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোও ৫ স্তরে বিভক্ত। এই জটিল ডেমোগ্রাফিতে সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে সফল টিকাকরণ কর্মসূচি কি সম্ভব হবে? এখন শুধু চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানূষের টিকাকরণ করতে গেলে সমস্যা হবেই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষই কর্মসূত্রে শহরে চলে এসেছেন। অথচ সরকারি কাগজপত্র তার কোনো উল্লেখ নেই। সেখানে যে পরিমাণ প্রতিষেধক পাঠানো হবে, তার অনেকটাই হয়তো কাজে লাগবে না। আবার সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে সেই প্রতিষেধক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ফলে আর্থিক ক্ষতিও হবে যথেষ্ট। তবে সমস্ত জটিলতার মধ্যেও সফলভাবে প্রত্যেকের কাছে উপযুক্ত প্রতিষেধক পৌঁছে যাক, এটাই চাইছেন সকলে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আর কোনো অস্ত্রই তো শেষ পর্যন্ত কাজে লাগে না।

Powered by Froala Editor

More From Author See More