কমছে ভারতীয়দের গড় উচ্চতা, চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছিল একটি কথা। বর্তমান প্রজন্মের মানুষের সার্বিক গড় উচ্চতা নাকি ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু কতটা যুক্তিযুক্ত এই উচ্চতা হ্রাসের (Height Shortening) কথা? আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সমীক্ষার ফলাফলে বরং উল্টোটাই দেখা যাচ্ছিল। গত ২০ বছরের মধ্যে গোটা পৃথিবীর মানুষের গড় উচ্চতা বেড়েছে অন্তত ১.৫ সেন্টিমিটার। তবে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেল, সারা পৃথিবীর থেকে ঠিক উলটো দৃশ্য ভারতে। এখানে সত্যিই মানুষের উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে ক্রমশ।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেন্টার অফ স্যোসাল মেডিসিন অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথের তিনজন গবেষক মিলে প্রকাশ করেছেন বিশদ এই গবেষণাপত্র। গবেষণার জন্য সমস্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের সমীক্ষা থেকে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ০.৬ সেন্টিমিটার কমেছে ভারতীয়দের গড় উচ্চতা। তবে এই হ্রাসের বিষয়টা সব জায়গায় এক রকম নয়। যেমন ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে দেশের একটা বড়ো অংশের মহিলাদের উচ্চতা বেড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মহিলাদের উচ্চতা বেড়েছিল। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মহিলাদের উচ্চতা কমতে শুরু করেছিল একই সময়ে। আবার সার্বিকভাবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের উচ্চতা হ্রাস পাওয়ার অনুপাত প্রায় দেড়গুণ। উচ্চতা হ্রাসের ঘটনা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়েছে বর্তমানে ৩০ বছরের কম বয়স এমন প্রজন্মের মধ্যে।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, মানুষের উচ্চতার বিষয়টা এত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে কেন। আসলে উচ্চতার একটা নিয়ামক যেমন মানুষের জিন, তেমনই পারিপার্শ্বিক আর্থসামাজিক অবস্থার কারণেও নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের উচ্চতা। যেখানে মানুষের জীবনযাপন উন্নত, সেখানে উচ্চতাও বেশি। কারণ বাড়ন্ত বয়সে পুষ্টি যত বেশি হবে, ততই বাড়বে উচ্চতা। ফলে এই পরিবর্তন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক অবস্থা কতটা সংকটে রয়েছে। এমনকি মিড-ডে মিল ব্যবস্থার মাধ্যমে উপকার তো হয়নি, বরং মিড-ডে মিল প্রাপ্ত শিশুদের উচ্চতা সবচেয়ে কমেছে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। প্রশ্ন উঠছে মিড-ডে মিলের খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়েও। এতদিন যা নিছকই গুজবের বিষয় ছিল, এবার তাই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় সমস্যা।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উচ্চতা কমছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জাতির