কবর থেকে ফিরে এসে পদ্মশ্রী, গুলাবু সাপেরার কাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও

বাবা একজন সাপুড়ে। মেয়ের জন্মের ঠিক আগেই দূর গ্রামে গিয়েছিলেন সাপের খেলা দেখাতে। এদিকে সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মাও অচৈতন্য হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা সদ্যোজাত শিশুটিকে জীবন্ত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। কেন? কারণ মেয়ে হয়ে জন্মানো নাকি দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। মায়ের জ্ঞান ফিরলে তাঁকে বলা হল তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। কিন্তু অচৈতন্য অবস্থাতেও মেয়ের কান্না শুনেছিলেন মা। তিনি কীকরে এমন কথা বিশ্বাস করবেন! পুরো ঘটনার নিরব সাক্ষী ছিলেন কাকিমা। মা এবং কাকিমা মিলে রাতের অন্ধকারে কবর খুঁড়ে বের করলেন মেয়েকে। এভাবেই শুরু হয়েছিল গুলাবু সাপেরার (Gulabo Sapera) জীবন। আজ তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত নৃত্যশিল্পী। পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারও।

গুলাবু সাপেরার নাচের কোনো প্রথাগত ঘরানা নেই। অনেকের মতে, তিনি এক নতুন ঘরানার জন্ম দিয়েছেন। আর সেই নাচের প্রতিটা ছন্দে সাপের চলন লক্ষ করা যায়। হবে না কেন? সদ্যজাত মেয়ের এমন ঘটনার কথা যখন বাবা জানতে পারলেন, তখন তিনি রীতিমতো বিপন্ন বোধ করেছিলেন। ভেবেছিলেন, তাঁর অবর্তমানে আবারও মেয়েকে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে পারে প্রতিবেশীরা। তাই প্রতিদিন সাপের খেলা দেখাতে যাওয়ার সময় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। শিশুকন্যাটির জায়গা হয়ে উঠেছিল সাপের ঝাঁপি। সাপেদের সঙ্গেই তাঁর বেড়ে ওঠা। সাপেদের সঙ্গে ভাগ করে দুধ খেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছেন। প্রথম প্রথম বাবার বিনের শব্দ শুনে নিজে নিজেই সাপের মতো নাচতে শুরু করতেন। ক্রমশ সেই নাচই দর্শকদের আকর্ষণ করতে থাকল। সাপের সঙ্গে বালিকার নাচ দেখে আরও বেশি পয়সা ছুঁড়ে দিতেন তাঁরা।

ঠিক এই সময়, ১৯৮৪ সালে রাজস্থানের পুস্কর উৎসবের সময় পর্যটন বিভাগের দুই অফিসার হিম্মত সিং এবং তৃপ্তি পাণ্ডের চোখে পড়লেন গুলাবু। তাঁরাই প্রথম মঞ্চে নাচ দেখানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। জয়পুর ছাড়িয়ে প্রথমে রাজস্থানেরই নানা জায়গায় হল নাচের অনুষ্ঠান। সেখান থেকে গেলেন দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নজরে পড়লেন গুলাবু। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নানা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। লন্ডন, ওয়াশিংটনের মতো শহরে করেছেন একাধিক অনুষ্ঠান। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারও।

তবে সবচেয়ে বেশি করে গুলাবু যেটা করতে পেরেছেন, তা হল তিনি নিজের গ্রামের মানুষের চিন্তাভাবনায় বদল আনতে পেরেছেন। এখন আর কন্যাসন্তানকে দুর্ভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে দেখেন না কেউ। উঠে গিয়েছে কন্যাসন্তান হত্যার ঘৃণ্য প্রথাও। বরং গ্রামের মহিলাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের নাচের দল। কবর থেকে উঠে আসার এমন গল্প সত্যিই তুলনারহিত।

আরও পড়ুন
কলকাতার বুকে, মাত্র দশ টাকার কবরেই শুয়ে আওয়াধের এই নবাব

তথ্যসূত্রঃ
This Snake Dancer's Journey From Being Buried At Birth To Becoming Padma Shri Was No Cakewalk, Ritika Rana, The Logical Indian

আরও পড়ুন
মৃত্যুতেও একই কবরে শুয়ে তাঁরা; বিশ্বযুদ্ধ ও দুই পুরুষের রূপকথার প্রেম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৫০০০ বছর আগেকার পেঙ্গুইনদের কবর; বিস্মিত গবেষকরা