রণক্ষেত্রে মুখোমুখি আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান, প্রবল হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা

ঠিক একসপ্তাহ হয়ে গেল, দক্ষিণ ককেশাসের ছোট্ট একটি ভূখণ্ডকে ঘিরে সংঘর্ষ চলছে দুটি দেশের মধ্যে। বিবাদমান দুই দেশ আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। তবে একসপ্তাহ সংঘর্ষের পরেও শান্তিস্থাপনের কোনো সম্ভাবনাই এখনও দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু এই বিবাদের মধ্যে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েছে তুরস্ক এবং রাশিয়াও। সব মিলিয়ে এই সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। এমনই ছোট্ট সংঘর্ষকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল আগের দুটি বিশ্বযুদ্ধ। এবার আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই বলে মনে করছেন অনেকে।

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের মালিকানাকে ঘিরে দুই দেশের বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। ১৯৮৯ সালে সম্মিলিত সোভিয়েত ভেঙে পড়ার সময় থেকেই এই বিবাদ শুরু হয়। তারপর ৩ দশক ধরে এই সমস্যার কোনো মীমাংসা সম্ভব হয়নি। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত গড়ে ওঠার সময় অবশ্য আজারবাইজানের মালিকানাধীন ছিল নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল। তবে সোভিয়েতের গঠনপ্রণালীতে এই অঞ্চলকে কিছুটা স্বায়ত্বশাসনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। মনে করা হয়, সোভিয়েত পতনের সময় থেকেই মস্কোর প্ররোচনায় এই এলাকার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে থাকেন আর্মেনিয়রা। কিন্তু ১৯৯১ সালে দুই দেশ স্বাধীনতা পেলেও নাগোরনো-কারাবাখ এলাকা আজারবাইজানের অধিকারেই যায়। অথচ আর্মেনিয়া সামরিক কর্তৃত্ব জারি রাখে।

আর্মেনিয়ার দাবি, ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ প্রথম হামলা চালায় আজারবাইজান। আর তারপরেই তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তর দেয় আর্মেনিয়া। অন্যদিকে আজারবাইজানের দাবি, প্রথম আক্রমণ আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকেই এসেছিল। তবে এরপর যে আক্রমণের তীব্রতায় কোনো দেশই পিছিয়ে নেই, তা বিগত এক সপ্তাহ ধরে দেখা গিয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পরমাণু বোমা ব্যবহারের হুমকিও দিয়েছে আর্মেনিয়া। অন্যদিকে রবিবার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তুরস্ক জানিয়ে দেয়, এই সংঘর্ষে তারা আজারবাইজানের পক্ষে।

এই আঁতাতের পিছনে অবশ্য একটা ঐতিহাসিক কারণ থেকে যাচ্ছে। যদিও দুই দেশ কখনই এক রাষ্ট্রের অধীনে ছিল না, কিন্তু জাতিগতভাবে তারা নিজেদের অভিন্ন বলে মনে করেন। এক জাতি, দুই রাষ্ট্র; এই নীতিতেই বিশ্বাসী আজারবাইজান এবং তুরস্ক। এমনকি দুই দেশের মানুষও নিজেদের একই ইতিহাস ও সংস্কৃতির বাহক বলে মনে করেন। ফলে এই সংঘর্ষে আজারবাইজানের পক্ষে দাঁড়ানোর পিছনে তুরস্কের জনমত অন্যতম কারণ। যদিও এখনও অবধি সামরিক সংঘর্ষে তুরস্কের কোনোরকম অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি।

তুরস্ক যদি এই সংঘর্ষে অংশ নেয়, তাহলে মস্কোও চুপ করে থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আর রাশিয়া জড়িয়ে পড়লে আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের জড়িয়ে পড়াও কোনো বিচিত্র ঘটনা হবে না। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনায় আমেরিকার উৎসাহ নতুন ঘটনা নয়। এভাবেই ইতিপূর্বে শুরু হয়েছিল দুটি বিশ্বযুদ্ধ। এবারও কি তবে আরেক বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’, ভারত-চিন যুদ্ধে গানই হাতিয়ার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের