গণ্ডারদের উল্টো ঝুলিয়েই ‘নোবেল’জয়ী নামিবিয়ার বিজ্ঞানীরা!

চারটি পা উপর দিকে, আর মাথাটা নিচের দিকে। এভাবেই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ১২টি গণ্ডারকে (Rhinoceros)। কয়েক ঘণ্টা তাদের এভাবে রেখে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে শরীরে ঠিক কেমন প্রভাব পড়ে। এমন একটা গবেষণার কথা শুনলে প্রথমে হাসি পেতেই পারে। আর সেই কারণেই এবছর বিজ্ঞান বিভাগে আইজি নোবেল পুরস্কার (Ig Nobel Prize) জয় করে নিলেন নামিবিয়ার বিজ্ঞানীরা। আজ্ঞে হ্যাঁ, নোবেল পুরস্কার নয়। আইজি নোবেল পুরস্কার। এমনিতে তেমন বিখ্যাত নয়, তবে অভিনব বটেই। কারণ পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে হাস্যকর উদ্যোগগুলোকে বেছে নিয়েই পুরস্কৃত করেন বিচারকরা।

অ্যানালস অফ ইম্প্রবেবল রিসার্চ পত্রিকার মতে আইজি নোবেল পুরস্কার আপনাকে প্রথমে হাসাবে, তারপর ভাবাবে। হ্যাঁ, আসলে আপাত হাস্যকর ঘটনার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিক যেমন এই পরীক্ষাটির কথাই ধরা যাক। আফ্রিকা মহাদেশে গণ্ডার সংরক্ষণের বিষয়ে বিগত এক দশকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখানে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল, প্রাকৃতিকভাবে গণ্ডাররা বহু দূরে দূরে ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে থাকে। তাদের উপর এভাবে নজরদারি চালানো প্রায় অসম্ভব। আর তাই গণ্ডারদের ন্যাশনাল পার্কে নিয়ে আসার উদ্যোগও চলছে। এক্ষেত্রে পরিবহনের জন্য প্রাণীগুলিকে হেলিকপ্টারের সঙ্গে উলটো করে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ একজন মানুষকে যদি এভাবে উলটো করে ঝুলিয়ে হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তার বেঁচে থাকার আশা থাকে না। গণ্ডারদের প্রাণহানি ঘটে না, সেটা দেখা গিয়েছে। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে তো? এই প্রশ্নটাই কোনোদিন করেনি কেউ। কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক রবিন র্যা ডক্লিফ এবং তাঁর সহকর্মীরা সেই উত্তর খুঁজলেন অবশেষে। হাস্যকর মনে হলেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

তবে পরীক্ষার শেষে গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে আশঙ্কার কিছু নেই। বরং গণ্ডারদের শুইয়ে রাখার পরিবর্তে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখলে তাদের স্বাস্থ্য বেশি সুরক্ষিত থাকে। সেইসঙ্গে দেখা গিয়েছে, কিছুক্ষণ ঝুলে থাকার পর গণ্ডারদের ফুসফুস আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে। এইসব ঘটনার সম্ভাব্য কারণও জানিয়েছেন রবিন এবং তাঁর সহকর্মীরা। গবেষণার পর যখন রবিন আইজি নোবেল পুরস্কারের কথা শুনলেন, তখন ভাবলেন এটাই তাঁর আদর্শ মঞ্চ হতে পারে। তাই একটা মনোনয়নপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। রবিনের মতে, প্রাণী সংরক্ষণের কাজে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর কতধরনের ভাবনাচিন্তা করে যেতে হয় সেটা অনেকেই জানেন না। তাঁদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর হাসতে হাসতে মানুষ যদি বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে পারেন, তাহলে তার থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আবারও জুড়ে যাবে সমস্ত মহাদেশ? ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের