বায়ার্নকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে পিএসজি; কার হাতে উঠবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি?

করোনা ভাইরাস ঘেঁটে দিয়েছে ক্রীড়াসূচি। লিগ শুরুর ঠিক ৪২৫ দিন পর ফাইনাল হচ্ছে এবার। রবিবার রাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশের মাঠে আয়োজিত হতে চলেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ খেলা। ইতিহাসে এই প্রথমবার। ইউরোপের সবথেকে বড় ক্লাব-ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল হতে চলেছে দর্শকশূন্য মাঠে। একদিকে জার্মান দল বায়ার্ন মিউনিখ, অন্যদিকে ফ্রান্সের প্যারিস-সেন্ট-জারমেন। দর্শক শূন্য গ্যালারিতে খেলা হলেও এই দুই দলের মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকেই এখন অধীর অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।

এই বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অঘটন শুরু হয়েছিল নক-আউট পর্ব থেকেই। রাউন্ড অফ সিক্সটিনেই ছিটকে গিয়েছিল টটেনহাম, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাস, চেলসি এবং গতবারের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের মতো হেভি-ওয়েট দল। কোয়ার্টার ফাইনালেও ম্যাজিক দেখিয়েছিল লিপজিক, অলিম্পিক লিয়ঁ-র মতো ছোটো দলগুলি। সেমি-ফাইনালে দুই ছোট দল-ই ৩-০ এর ব্যবধানে পিএসজি এবং বায়ার্নের কাছে হারলেও নজর কেড়েছিল তাদের খেলা। দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল লড়াকু মানসিকতা। 

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুই ফাইনালিস্টই জিতেছে ঘরোয়া ট্রফি। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম এই ঘটনার সাক্ষী থাকল ইউরোপ। পাশাপাশি দুই দলের সামনেই এখনও ত্রিমুকুট জয়ের সুযোগ। এবং কাকতালীয়ভাবে দুই দলের কোচই জার্মান। শেষ হাসি হাসবে কে তা নিয়েই চলছে তুমুল চর্চা। পিএসজি’র জয় ইতিহাস তৈরি করতে পারে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার। ক্লাবের ৫০-তম জন্মদিনে এর থেকে বড় উপহার আর কীই বা হতে পারে? অন্যদিক বায়ার্ন মিউনিখ জিতলে ছ’বারের চ্যাম্পিয়ন হবে তারা।

পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখতে গেলে দুই দল ৮বার মুখোমুখি হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। আর তাতে খানিকটা এগিয়ে রয়েছে পিএসজি-ই। জিতেছে পাঁচ বার। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বড় ম্যাচের ক্ষেত্রে চিরকাল অঘটনের শিকার হয়ে এসেছে প্যারিসের এই ক্লাব। গত সাতটির মধ্যে ৬টি লিগা-১ এর মুকুট ছিনিয়েছে পিএসজি। ২০১৭-তে দলে ২২২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কেনা নেইমার-সংযোজনের পর বেড়েছে পিএসজির আক্রমণের ঝাঁঝও। নেইমার, ডি-মারিয়া, এমব্যাপের দুরন্ত গতিই বায়ার্নের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে ফাইনালে। বোয়েতাং কিংবা আলাবার সামান্য ভুলও ডেকে আনতে পারে বড়ো বিপদ।

আরও পড়ুন
রাতারাতি বদলে গেল বার্সেলোনার কোচ, দায়িত্ব নিলেন ‘পয়মন্ত’ রোনাল্ড কোয়েম্যান

অন্যদিকে বায়ার্নের মারণাস্ত্র রবার্ট লিয়ন্ডস্কি। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম। ফাইনালে দুটি গোল করলেই লিয়ন্ডস্কি ছুঁয়ে ফেলতে পারেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে রোনাল্ডোর ১৭টি সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। সুযোগ-সন্ধানী লিয়ন্ডস্কি বায়ার্নের আদর্শ স্ট্রাইকার। টমাস মুলার, গ্যাঁব্রি, কুটিনহো-র গোলক্ষুধাও ইউসিএলে প্রখর— তার হদিশ মিলেছে আগের ম্যাচগুলোতেই। সিলভাদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বায়ার্নের ফ্রন্টলাইন। সব থেকে বড় কথা, বায়ার্ন মিউনিখের কনভার্সান রেট অনেক বেশি। প্রতি তিনটি ইনবক্স আক্রমণ থেকে গড়ে একটি গোল তুলে আনতে পারে বায়ার্ন। এখনও অবধি লিগে ৪২ বার বল জালে জড়িয়েছে জার্মান ক্লাবটি। তাও মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলে। ফাইনালে আর ৩টি গোল এলে বায়ার্ন ভেঙে ফেলবে বার্সেলোনার ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রেকর্ডও (একটি মরশুমে ৪৫টি গোল)। তবে মাত্র পাঁচটি গোল খাওয়া শক্ত পিএসজি’র ডিফেন্স রুখতে পারবে কি জার্মান আক্রমণ? সেটাই এখন দেখার।

কোনো দলই ছোটো করে দেখছে না প্রতিপক্ষকে। স্বপ্নের এক তুল্যমূল্য লড়াই হতে চলেছে ২০২০ উয়েফায়। হাই-প্রেস নাকি দ্রুতগতির ফুটবল, শেষ হাসি হাসবে কে - তা আগে থেকে অনুমান করাও এ বছর কঠিন কাজ। তবে ফিফটি-ফিফটির এই ফাইনাল যে আলাদা রোমাঞ্চকর ও রোমহর্ষক হতে চলেছে, সন্দেহ নেই তাতে...

আরও পড়ুন
বায়ার্নের কাছে হারের পর বার্সা ছাড়তে চলেছেন মেসি? দলে পেতে মরিয়া পেপ গুয়ার্দিওলা

Powered by Froala Editor

More From Author See More