নিঃসঙ্গ মানুষের পাশে থাকতে নিজেকে ‘ভাড়া’ দেন এই তরুণ

বাসস্থান, গাড়ি এমনকি বাড়ির আসবাবপত্রও ভাড়া নেওয়ার চল রয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। কিন্তু মানুষ? অদ্ভুত শোনালেও এমনটাই সত্যি। শোজি মরিমোতো (Shoji Morimoto)। এই জাপানি (Japanese) ব্যক্তির পেশাই হল নিজেকে ভাড়া দেওয়া। না, কোনো শ্রমসাধ্য কাজ নয়। মরিমোতোর কথায় ‘কিচ্ছু না করার’ জন্যই তাঁকে ভাড়া করেন গ্রাহকরা। 

ব্যাপারটা পরিষ্কার হচ্ছে না কিছুতেই? খুলে বলা যাক তবে। মূলত, অর্থের বিনিময়ে মানুষের একাকিত্বের সঙ্গী হয়ে ওঠেন মরিমোতো। যত ব্যস্ততা বাড়ছে, ততই যেন নিঃসঙ্গতা কণ্ঠ চেপে ধরছে আমাদের। সেইসঙ্গে অবসাদ তো রয়েছেই। ক’জন মানুষই বা নিজের মনের চেপে রাখা কথা বলে ফেলতে পারেন কাউকে? এইসব মানুষরাই মরিমোতোর গ্রাহক। তাঁদের সঙ্গেই বেশ খানিকটা সময় কাটান ৩৭ বছর বয়সি জাপানি তরুণ। ভাগ করে নেন ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের কাহিনি। 

আজ থেকে বছর তিনেক আগের কথা। ২০১৮ সালে, উপার্জনের এমনই এক ভিন্ন পথ বেছে নেন মরিমোতো। তবে এই কাজ তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তারও আগে থেকে। তখন বিনামূল্যেই মানুষকে সঙ্গ দিতেন তিনি। মরিমোতো ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক। সেই মতো মোটা অঙ্কের চাকরি পেতেও অসুবিধা হয়নি কোনো। তার পরেই শুরু হয়েছিল তাঁর এই কর্মযজ্ঞ। একদিকে অফিসের কাজ, অন্যদিকে নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধে ‘লড়াই’— দুটো ভিন্ন ভিন্ন দিক একসঙ্গে তিনি সামাল দিয়ে উঠতে পারছিলেন না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত তাই চাকরি ছেড়ে ‘পেশাদার সঙ্গী’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মরিমোতো।

বর্তমানে মরিমোতোর সঙ্গ পেতে গেলে ৯৬ ডলার খরচ করতে হয় গ্রাহকদের। জাপানের মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার ইয়েন। সেইসঙ্গে তাঁর যাতায়াত এবং খাবারের খরচও দিতে হয় গ্রাহকদের। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আজও বিনামূল্যেই পরিষেবা দিয়ে থাকেন তিনি। এমন অদ্ভুত কাজের সৌজন্যে মরিমোতোর অভিজ্ঞতাও বেশ বিচিত্র। অধিকাংশ গ্রাহকরাই ভোগেন একাকিত্বে এবং অবসাদে। তবে ব্যতিক্রমী ঘটনাও কম নয়। কেউ ‘কিউট স্টোর’-এ একলা যেতে লজ্জা পাওয়ায় ভাড়া করেন তাঁকে। কেউ আবার তাঁকে এসে শোনান রাগ সামলাতে না পেরে গার্হস্থ্য হিংসায় জড়িয়ে পড়ার কথা। খুন করার পর খোদ হত্যাকারী এসে অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন মরিমোতোর কাছে, রয়েছে এমন ঘটনাও।

আরও পড়ুন
মহাকাশে ফুড ডেলিভারি! কীর্তি জাপানের বিলিয়নেয়ারের

জাপান তো বটেই, গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর গ্রাহক। এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৩ হাজারেরও বেশি গ্রাহক অর্থ দিয়ে পরিষেবা গ্রহণ করেছেন মরিমোতোর। তবে গ্রাহকদের পরিচয় কিংবা ঠিকানা কোনোভাবেই প্রকাশ্যে আনেন না তিনি। সবটাই কনফিডেন্সিয়াল। বিশ্বাসটাই যে এই ‘ব্যবসা’-তে তাঁর মূল পুঁজি।

আরও পড়ুন
ভাইয়ের মৃতদেহ কাঁধে অপেক্ষা কিশোরের, জাপানে আজও দৃঢ়তার প্রতীক এই ছবি

নিজেকে ভাড়া দেওয়া ছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে টুইটারের মাধ্যমেও অনুপ্রেরণামূলক বার্তা দেন মরিমোতো। অনলাইনেও মানসিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। টুইটারে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে তিন লাখের গণ্ডি। সম্প্রতি, তাঁর এই বিচিত্র জীবনের ওপর ভিত্তি করে একটি টিভি ড্রামাও নির্মিত হয়েছে জাপানে। প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থও। পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই কাজ করলেও, মরিমোতোর এই কর্মকাণ্ডের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্য। তা অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো…

আরও পড়ুন
জাপানের ‘গুপ্ত খ্রিস্টান’ ও নিষিদ্ধতার ২০০ বছর

Powered by Froala Editor

Latest News See More