প্রেমিককে বিবাহের জন্য রাজপরিবার ছাড়লেন জাপানের রাজকন্যা

বছর খানেক আগের কথা। গোটা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল এক রাজ-দম্পতির কাহিনি। হ্যাঁ, প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের কথাই হচ্ছে। প্রথমত, রাজকন্যা না হওয়া সত্ত্বেও মেগানের সঙ্গে বিবাহ, পাশাপাশি ব্রিটেন ছেড়ে নিউইয়র্কে পাড়ি দেওয়ার কারণে হ্যারি ও মেগানকে ছাড়তে হয়েছিল রাজপরিবারের সদস্যপদ। এবার যেন সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল এশিয়ায়। রাজপরিবারের প্রথা ভেঙে কলেজের প্রেমিক কোমুরোকে বিবাহের জন্য রাজকীয় ‘স্ট্যাটাস’ ছাড়তে হল জাপানের রাজকুমারী (Japanese Princess) মাকোকে (Mako)। 

এই বিতর্ক আজকের নয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল ক্রম-সমালোচনার পর্ব। ২০১৮ সালে তাঁদের বিবাহের কথা থাকলেও, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের চর্চায় ব্যাহত হয়েছিল সেই পরিকল্পনা। সপ্তাহ খানেক আগে রাজকুমারী মাকো বিবাহের কথা ঘোষণা করার পর ফের যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল সেই বিতর্ক। তবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গতকাল সাত পাকে বাঁধা পড়লেন মাকো এবং কোমুরো। টোকিও-র একটি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেই তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন তাঁদের বিবাহের কথা। তবে তার বাইরে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরউ উত্তর দেননি নব-দম্পতি।


কিন্তু তিন বছর ধরে চলতে থাকা এই বিতর্কের কারণ কী? আজ থেকে প্রায় এক দশক আগের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েই মাকোর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কোমুরোর। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সম্পর্ক। কোমুরো কোনো রাজপুত্র না হওয়ার কারণে, মাকোর প্রেমকাহিনি প্রকাশ্যে আসার পরেই শুরু হয়েছিল চর্চা। এরই মধ্যে কোমুরোর মা জড়িয়ে পড়েছিলেন একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন প্রেমিকের থেকে প্রায় ২৫ হাজার ইউরোর অর্থ প্রতারণার। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানিয়েছিলেন, উপহার হিসাবে এই অর্থ পেয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনাই যেন ঘৃতাহুতি দিয়েছিল মাকো-কোমুরো চর্চায়। সঙ্গে জাপানি সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছিল কোমুরোর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও। সবমিলিয়ে জাপানে বিতর্কের হট-টপিক হয়ে উঠেছিল রাজকন্যার প্রেম।

আরও পড়ুন
রানির পদতলে রাজপরিবারের মেগান, শার্লে এবদো-র কার্টুনে ফ্লয়েডের ছায়া

পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছেছিল, মাকো দীর্ঘদিন ভুগেছিলেন পোস্ট-ট্রমাটিক ডিসঅর্ডারে। অবনতি হয়েছিল শারীরিক অবস্থারও। মিডিয়া এবং পরিবারের চাপ তো ছিলই, সেইসঙ্গে নিউ ইয়র্কে কর্মরত প্রেমিককেও প্রায় তিন বছর পাশে পাননি মাকো। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর নির্ভীকতা এবং সততার কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন সমালোচকরা। সমীক্ষা বলছে, জাপানের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি মানুষ সমর্থন করছেন মাকোর এই সিদ্ধান্তকে। অন্যদিকে তাঁর বিরোধিতা করছেন ৩৩ শতাংশ নাগরিক। অবশ্য সমস্ত চর্চার বাইরে গিয়ে শান্তিতে জীবন কাটানোই তাঁর কাছে এখন একমাত্র প্রাধান্য বিষয় বলেই জানিয়েছেন রাজকুমারী। রাজকীয় মর্যাদা ত্যাগ করার পর, মাকো ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজপরিবারের দেওয়া ১২.৩ লক্ষ মার্কিন ডলারের আর্থিক লভ্যাংশও।  

আরও পড়ুন
আত্মহত্যার পরিস্থিতে পৌঁছেছিলেন মেগান, সরিয়ে রাখা হয়েছিল হ্যারির থেকেও!

মাকোর প্রেমিক তথা স্বামী কোমুরো বর্তমানে কর্মরত নিউ ইয়র্ক শহরের একটি ল’ ফার্মে। বিবাহের পর সেখানেই ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন কোমুরো। অন্যদিকে প্রথমবারের জন্য বিদেশযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেছেন মাকো। পাসপোর্ট তৈরি না হওয়ার পর্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে টোকিও-র কোনো হোটেলেই বসবাস করবেন তিনি। তারপর তিনিও হয়ে উঠবেন মার্কিন-নিবাসী। তবে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছাত্রী মাকো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আদৌ কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন কিনা, তা অস্পষ্ট এখনও। অন্যদিকে জাপানের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার উঠবে কার হাতে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন…

Powered by Froala Editor