আত্মহত্যার পরিস্থিতে পৌঁছেছিলেন মেগান, সরিয়ে রাখা হয়েছিল হ্যারির থেকেও!

শুধুমাত্র একটি টক-শো। আর তার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সারা বিশ্বের নজর ছিল সেদিকেই। অপরা উইনফ্রে-র করা হ্যারি-মেগানের সাক্ষাৎকার নিয়ে কেন এই উত্তেজনা ছিল, পরিষ্কার হয়ে গেল তা। হ্যারি-মেগান কিংবা ব্রিটেনের রাজ-পরিবার নয়, গোটা টক-শো জুড়ে রাজত্ব করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডিয়া-ক্যুইন’ অপরা। ডিউক এবং ডাচেসের মুখ থেকে যে কথা বের করতে সক্ষম হননি পৃথিবীর তাবড় সাংবাদিকরা, সেগুলোকেই অনায়াসে তুলে আনলেন তিনি।  

না, আমন্ত্রিত রাজসদস্যদের উপর বিন্দুমাত্র চাপ সৃষ্টি করেননি তিনি। বরং প্রশ্ন এবং উপস্থাপনার গাঁথুনিই বার করে আনল অজানা তথ্যদের। বলিয়ে নিল অন্দরমহলের কথা। মেগান যখন উল্লেখ করলেন ‘আমার পক্ষে একটা সময় আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না রাজপ্রাসাদে’, সাবলীল কায়দায় উইনফ্রে প্রসঙ্গ তোলেন আত্মহত্যার। সম্মতি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না মেগানের। হ্যাঁ, আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করেছিলেন ব্রিটেনের রাজবধূ। 

প্রিন্স হ্যারির মুখ থেকেও ঝরে পড়ে অভিমানের সুর। দীর্ঘদিন ধরেই ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা প্রিন্স চার্লসও। আর এই পুরো আন্তর্দ্বন্দ্বের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে বর্ণবাদ। প্রথমত, মেগান কোনো রাজপরিবারের সদস্যা ছিলেন না বিবাহের আগে। তার ওপর কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের সন্তান। আর সেই কারণেই নববধূকে বিবাহের পর থেকেই খানিকটা দূরত্বে ঠেলে দিয়েছিল বাকিংহাম প্যালেস।

এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছায়, যে রাজপরিবার ঠিক করে দিয়েছিল মেগান কী কী করতে পারবে, আর কী কী পারবে না। তাঁকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল হ্যারির থেকেও। একাকিত্বের যন্ত্রণা নিয়েই দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন তিনি। আত্মহত্যার কথা ভেবেও আবার মনের জোরে ফিরেছেন সেখান থেকে। তখন গর্ভবতী মেগান। সেসময় অ্যালবার্ট হলের অনুষ্ঠানই তাঁর কাছে ফেরার রাস্তা হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিনের দূরত্বের পর হ্যারির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। তবে পিছিয়ে যাননি রাজপুত্র। বরং শক্ত করে ধরেছিলেন তাঁর হাত।

আরও পড়ুন
রাজপরিবার ছাড়ার পর প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, হ্যারি-মেগানের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব

তবে রাজ-দম্পতিকে আরও বড়ো আঘাত করেছিল তাঁদের সন্তানের সম্পর্কে কিছু মন্তব্য। তখন ভূমিষ্ঠ হয়নি আর্চি। তার আগে থেকেই রাজমহলে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল, আর্চির গায়ের রং ঠিক কেমন হবে। এমনকি অ্যালবার্ট হলের সেই অনুষ্ঠানের শেষে একটি বৈঠকে হ্যারিকে সামনে রেখেই আলোচনা চলেছিল সেই বিষয়ে। সে কথাও প্রকাশ্যে এনেছিলেন রাজপুত্র। তবে শেষ পর্যন্ত তা কেটে বাদ দেওয়া হয় ইন্টারভিউ থেকে। কোনো লুকোছাপা না রেখেই তা জানিয়ে দিয়েছেন ‘মিডিয়া-ক্যুইন’।

আরও পড়ুন
প্রয়াত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের প্রপৌত্র, রাজপরিবারের শেষ বংশধরকে হারাল কলকাতা

তবে এখানেই শেষ নয়। মেগান-হ্যারির সন্তান আর্চিকেও রাজপরিবারের সদস্য হিসাবে প্রথম থেকেই ঘোষণা করেনি বাকিংহাম প্যালেস। সেই বিষয়েও আলোকপাত করেন অপরা। কথায় উঠে আসে, ১৯১৭ সালে তৈরি রাজপরিবারের নীতি অনুযায়ী একমাত্র রানিই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সদ্যোজাত কোনো শিশু রাজপরিবারের সদস্যপদ পাবে কিনা। অর্থাৎ, ক্যুইন এলিজাবেথ যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, উঠে আসে সেই ইঙ্গিতই।

আরও পড়ুন
ভাদোদরার রাজবাড়ির বাগানে বহুতল তৈরির সিদ্ধান্ত রেলের, প্রতিবাদে সরব রাজপরিবার

পাশাপাশি মেগান এবং আর্চির নিরাপত্তার ব্যাপারেও ন্যূনতম চিন্তিত ছিল না রাজপরিবার। যখন ব্রিটেনের প্রায় সকল ট্যাবলয়েডগুলিই বর্ণবাদের আঙুল তুলেছিল মেগানের দিকে, তখন সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ছিল বাকিংহাম প্যালেস। কেমব্রিজের ডাচেস ক্যাথরিন তাঁর কথায় আহত হয়ে ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়— সেই গল্পও আসলে উপস্থাপন করা হয়েছিল মুখরোচকভাবে। শুধুমাত্র ফ্লাওয়ার গার্লসদের কেমনভাবে সাজানো হবে, সেই সম্পর্কেই ছোটোখাটো মতামত দিয়েছিলেন মেগান। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় এমন কাণ্ডকারখানার পর ক্যাথরিন নিজে যোগাযোগ করেছিলেন মেগানের সঙ্গে। চিঠি ও ফুল পাঠিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে রাজপরিবারের বাকিদের মধ্যে বিন্দুমাত্র হেলদোল পড়েনি।

মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ১.৭ কোটি ও ব্রিটেনে ১.৪ কোটি মানুষ দেখেছেন অপরা উইনফ্রে’র নেওয়া এই সাক্ষাৎকার। বাদ যায়নি বাকিংহাম প্যালেসও। ক্যুইনের পক্ষে বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘হ্যারি এবং মেগানের বিগত কয়েক বছরে যন্ত্রণার জন্য দুঃখিত রাজ-পরিবার। উল্লেখিত বিষয়গুলিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। হ্যারি, মেগান এবং আর্চি এখনও সমান স্নেহধন্য আমাদের কাছে।’ এই সাক্ষাৎকারের আরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে রাজমহলে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। স্বয়ং রানির প্রতিক্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।

এর আগে ল্যান্স আর্মস্ট্রংকে ড্রাগ এবং ডোপিংয়ের সম্পর্কে মুখ খুলিয়েছিলেন উইনফ্রে। মাইকেল জ্যাকসনকেও কথার জালে স্বীকার করিয়েছিলেন, সার্জারি করিয়ে গায়ের রং ‘সাদা’ করানোর কথা। এবার তাঁর প্রশ্নের জালে সামনে এল ব্রিটিশ রাজপরিবারে চলতে থাকা ১২০০ বছরের মোনার্কির অন্ধকার দিকগুলি। আর এই রহস্যোন্মোচনের কাণ্ডারি হয়ে থাকলেন অপরা উইনফ্রে… 

Powered by Froala Editor