দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে টোকিও অলিম্পিক, জরুরি অবস্থা জারি জাপানে

মাস দেড়েক আগে থেকেই চলছে অনবরত প্রতিবাদ, অবস্থান। দেশের একাধিক চিকিৎসক সংগঠনও প্রশ্ন তুলেছিল অলিম্পিকের আয়োজন সম্পর্কে। করোনা আবহে অলিম্পিকের আয়োজন যে ভয়াবহ করে তুলতে পারে পরিস্থিতিকে, সে ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল জাপান প্রশাসনকে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্রও কর্ণপাত করেনি সরকার। কিন্তু সংক্রমণের গ্রাফ আবার ঊর্ধ্বমুখী চেহারা নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত পিছু হঠল প্রশাসন। জানিয়ে দেওয়া হল সম্পূর্ণ দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই আয়োজিত হবে টোকিও অলিম্পিক।

সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের পরই এই সিদ্ধান্ত নেন। অলিম্পিক কমিটি এবং আয়োজকদের সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা করে সরকারের বিশেষ বোর্ড। এতদিন পর্যন্ত ঠিক ছিল ৫০ শতাংশ দর্শক সুযোগ পাবেন অলিম্পিক গেমস দেখার। তবে কেবলমাত্র জাপানের দর্শকরাই সেই সুবিধা পেতেন। কারণ, মাস দুয়েক আগেই বিদেশি দর্শকদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল জাপান। এবার বাধ্য হয়ে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দর্শকদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করল সরকার। 

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি কেন? উঠছে সেই প্রশ্নই। আসলে মহামারীর কারণেই এক বছর পিছিয়ে গিয়েছিল ২০২০-র অলিম্পিক। ২০২১ সালের জুন মাসেও আয়োজন সম্ভব না হলে, তা বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। আর যার ফলে প্রায় ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যেত জাপানের। সেই কারণেই প্রথম থেকে অলিম্পিক আয়োজনে বদ্ধপরিকর হয়ে রয়েছে জাপান। 

শেষ মুহূর্তে এসে দর্শকদের অনুপ্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় খানিকটা হলেও আর্থিকভাবে ধাক্কা খেল জাপানের প্রশাসন। তবে আয়ের একটা বড়ো অংশ নির্ভর করছে ব্রডকাস্টিং স্বত্ব বিক্রির ওপরে। খোলা থাকছে সেই পথ। অবশ্য তাতে সরকার লাভবান হলেও, উপকৃত হবেন না সাধারণ মানুষ। কারণ, জনসমাগম না হওয়ায় আঞ্চলিক অর্থনীতি সচল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। পাশাপাশি অলিম্পিকের কথা মাথায় রেখেই ঘোষিত হয়েছে ১ মাসের জরুরি অবস্থা। তার দরুনও আর্থিক সংকটে পড়তে চলেছে জনগণ।

আরও পড়ুন
পদকজয়ের স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকে তামিলনাড়ুর পুলিশ কনস্টেবল

কিন্তু আগে থেকে তৎপর হয়ে পদক্ষেপ নিলে আজ হয়তো এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হত না জাপানকে। চিকিৎসকদের দাবি, অলিম্পিক আয়োজনে ঢালাও অর্থ বিনিয়োগ করলেও, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ন্যূনতম গুরুত্ব দেয়নি সরকার। টিকাকরণ কর্মসূচিও চলেছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। এমনকি বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মধ্যে ভ্যাকসিনেশনে সবথেকে পিছিয়ে রয়েছে জাপান। এখনও পর্যন্ত ন্যূনতম একটি ডোজ পেয়েছেন দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ। সেইসঙ্গে অতি-সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সংক্রমণের প্রবণতা। 

আরও পড়ুন
পাননি যোগ্য স্বীকৃতিও, নিঃশব্দেই প্রয়াত দু'বারের অলিম্পিকজয়ী কেশব দত্ত

জুলাই মাসের ২৩ থেকে আগস্টের ৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে অলিম্পিক। তারপর আরও দু’সপ্তাহ জারি থাকবে জরুরি অবস্থা। তাতে যে স্থানীয় মানুষদের হয়রানি আরও বেড়ে যাবে, সেই সম্ভাবনাই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। 

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় ফেন্সার তামিলনাড়ুর ভবানী

Powered by Froala Editor