পদকজয়ের স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকে তামিলনাড়ুর পুলিশ কনস্টেবল

তাঁর হাত থেকে কোনো চোর, ছিনতাইবাজ রেহাই রেহাই পায় না। তামিলনাড়ু পুলিশের এই কনস্টেবলকে তাই সহকর্মীরা ডাকেন ‘পুলিশ এক্সপ্রেস’। আততায়ী যত দূরেই থাকুক, দৌড়ে ঠিক ধরে ফেলবেন পি নাগানাথন। তবে এবার আর রাস্তায় চোরের পিছনে ধাওয়া করা নয়, বরং তাঁকে দৌড়তে হবে অলিম্পিকের লনে। আসন্ন টোকিও অলিম্পিকের জন্য ইতিমধ্যে রওয়ানা হয়েছেন নাগানাথন।

তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামে এক অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নাগানাথনের। আর্থিক সম্বল নেই কিছুই, অথচ পরিবারে সদস্য সংখ্যা প্রচুর। বাবা এক নির্মাণকর্মী। তাঁর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হল কংক্রিটের কাজ। শৈশবের কোমলতা হারিয়ে গেল কয়েকদিনের মধ্যেই। আর সেই থেকে শুরু হল দৌড়। তাঁর পরিশ্রম করার ক্ষমতা অবাক করত সকলকেই। আর দৌড়ের লনে তাঁকে ছোঁয়ার ক্ষমতা ছিল না কারোর। জেলাস্তরে প্রতিযোগিতার জন্য একদিন নাম উঠল তাঁর। কিন্তু সেখানে দৌড়তে গেলে জুতো লাগবে। জুতো কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর। শেষ পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকরাই কিনে দিলেন জুতো।

এভাবেই ধীরে ধীরে খেলার সঙ্গে গড়ে উঠল সম্পর্ক। নিজের সারা জীবনের ক্লান্তিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। কলেজে ভর্তি হয়ে আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলেন। কিন্তু কলেজ শেষ করেই স্থায়ী রোজগারের রাস্তা খুঁজতে হল। যোগ দিলেন তামিলনাড়ুর পুলিশ বিভগে। প্রথম কয়েক বছর নিজেকে কাজের মধ্যেই গুটিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু অল ইন্ডিয়া পুলিশ মিটে দৌড়ে প্রথম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর এই প্রতিভার কথা ছড়িয়ে পড়ে কর্মক্ষেত্রে। শুরু হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। আর সেইসঙ্গে নাগানাথনের অধ্যবসায় তো রয়েছেই। কাঁধের সঙ্গে ওয়েট প্লেট বেঁধে প্রতিদিন ৮০-৯০ মিটার দৌড়ান তিনি।

এবছর অলিম্পিকের ৪০০ মিটার রিলে রেসের ৪ জন ভারতীয় প্রতিনিধির মধ্যে একজন নাগানাথন। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। অলিম্পিকে পদক জয়ের স্বপ্ন তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে আগামী কমনওয়েলথ গেমসে তিনি এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বলে জানিয়েছেন। আর অলিম্পিকে একক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাওয়া তো স্বপ্নের মতো। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রা শুরু হল নাগানাথনের। সামনে এখনও অনেকটা পথ দৌড়ে যেতে হবে তাঁকে।

আরও পড়ুন
পাননি যোগ্য স্বীকৃতিও, নিঃশব্দেই প্রয়াত দু'বারের অলিম্পিকজয়ী কেশব দত্ত

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় ফেন্সার তামিলনাড়ুর ভবানী