রঙ আর রাঙতার সাজ খসে বেরিয়ে এল এক ছাঁচ-ভাঙা মূর্তি

শঙ্কর সরণি - ৩৮
আগের পর্বে

প্যারিসে গিয়েই শুরু হয়েছিল রবিশঙ্করের বাদ্যযন্ত্রশিক্ষা। তিমিরবরণ, বিষ্ণুদাস শিরালীর হাত ধরে। দেশে ফিরে আরও নানা গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য পাওয়ার কথা যখন চলছে, তখনই এল দুঃসংবাদ। উদয়শঙ্কর তখন দলের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে। হঠাৎ লন্ডন থেকে এল একটি টেলিগ্রাম। মারা গিয়েছেন শ্যামশঙ্কর। সম্ভবত কেউ হত্যা করেছে তাঁকে। গোটা পরিবারের উপর নেমে এল শোকের ছায়া। বাবাকে কোনোদিনই পছন্দ করতেন না রবিশঙ্কর। কিন্তু মায়ের যন্ত্রণা স্পর্শ করে গেল তাঁকে। তবে উদয়শঙ্কর বড়ো ছেলে। তাঁকে সম্পূর্ণটা সচেতনভাবে দেখতে হবে। প্রাথমিক শোক কাটিয়ে উদয় গেলেন বাবা আলাউদ্দিনের কাছে। অল্প সময়ের জন্যই তাঁকে পেয়েছিল উদয়শঙ্করের দল। তবে রবিশঙ্করকে নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করলেন আলাউদ্দিন।

১৯৩৬-এ আবার নতুন দল নিয়ে ইউরোপ রওনা হলেন উদয়শঙ্কর। বম্বে থেকে জাহাজ এল মিশরে। কয়েকদিন কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়াতে কাটিয়ে তাঁরা এলেন প্যালেস্টাইন (ইজরায়েল)। মিশর থেকে গেলেন গ্রিস। হাজার হাজার দর্শকের ভিড় জমত গ্রিসে। ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে ইতিহাস গড়া উন্মাদনা ছিল তাঁদের। আলাউদ্দিন জানিয়েছিলেন, হাততালির ঘোরে এক-এক সময় মনে হত, থিয়েটার বুঝি এই ভেঙে পড়ার জোগাড়। সেখান থেকে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, সুইটজারল্যান্ড, বেলজিয়ম, সুইডেন, ফ্রান্স। দর্শকদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে থাকত উদয়শঙ্করের দল।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন অনুষ্ঠানে সোলো বাজাতেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত দর্শক, অমন সুরের কাছে। কখনও বা হয়ে উঠত শান্ত, অশ্রুসিক্ত। এই সুর, এর প্রকাশ, এর বিস্তার সমস্ত অজানা তাঁদের কাছে। অজানা শ্রোতার সহবত। তবুও। ওঁকে পেশ করা হত তিমিরবরণের গুরুর পরিচয়ে। উদার ছিল তাঁর স্বভাব। যেখানে যেতেন তিমিরবরণের প্রশংসা মুগ্ধ করে তুলত তাঁকে। ‘আমার কথা’-য় সগর্ব চিত্তে জানিয়েও ছিলেন সেকথা। ওসব দেশের জীবনযাপন, আচার-বিচারের যোজন দূরত্বে আলাউদ্দিনের জীবনচর্যা, তবুও শতেক ভিন্নত্বের মধ্যেও সংগীত, কলা, সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ-কৌতূহলকে দেখেছেন সসম্মানে। হাজার ভিন্নত্বের মাঝেও তাদের সদর্থকতা দেখেছেন  আন্তরিক গুরুত্বে।

তবে শুধু সোলো বাজিয়ে অস্থির হতেন তিনি। উদয়শঙ্করকে বলতেন, আমারে কিসু কাজ দাও। বিনা কাজে বসে থাকাটাই ক্লান্ত করে তুলত তাঁকে। শিশুর সারল্য ছিল তাঁর আচরণে। একদিন চন্দ্রসারং নামে তাঁর নিজেরই তৈরি এক ছড়ের যন্ত্র নিয়ে বসলেন নাচের সঙ্গতে। সেই থেকে নিজের ইচ্ছাতেই বাজাতে শুরু করলেন নানান ছোটোখাটো বাজনা। তাতেই তৃপ্ত হলেন তিনি। রবিশঙ্কর বলেছিলেন, ‘এত বিরাট এক ক্ল্যাসিকাল ম্যুজিসিয়ান হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাদের মতো উজবুক কাঁচা যন্ত্রীদের সঙ্গে বসে বাজাতে দ্বিধা করতেন না! এরকমই বড় মন ছিল ওঁর’।

উদয়শঙ্করের অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আলাউদ্দিন

একদিন হোটেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন কয়েকজন আমেরিকান আর ইউরোপীয় যুবতী। আচার্য আলাউদ্দিনের মনে হল, আমেরিকান মেয়েরা হুজুগে। ওরিয়েন্টাল মিউজিক এখানে ফ্যাশন। বোধহয় খানিক গল্পগাছার মতোই শুনতে চায় কিছু। বেশ বিরক্ত তিনি। কোনো শর্তেই সুর তাঁর কাছে নিছক আয়েসের বিষয় নয়। তখন দুপুর তিনটে, ধরলেন ভীমপলশ্রী। কিন্তু যেই ধরলেন সুর, আলাউদ্দিন উপলব্ধি করলেন,  যেমন-তেমন নয় এ শ্রোতা। শুধু যে নিবিড় হয়ে শুনছে তাই-ই নয়, যেন আপ্রাণ নিবিষ্ট হতে চাইছে সুরের ভেতরপানে। প্রীত হলেন আলাউদ্দিন, সেদিন বাজালেন টানা তিনঘণ্টা। নিজের মেজাজে। চোখ খুলে দেখলেন মূর্তিবৎ শ্রোতারা। রুদ্ধ স্বর, ভেসে যায় নয়নজলে। সুর থামতে তাঁদের দেশের রীতি মেনে আলাউদ্দিনের কপালে তাঁরা এঁকে দিলে গাঢ় চুম্বন।

আরও পড়ুন
শঙ্করদের জীবনে এসে দাঁড়াল প্রবল শোক

হেমাঙ্গিনীর কথায় না অন্য কোনো কারণে কে জানে, আলাউদ্দিন ভালোবাসলেন রবিশঙ্করকে। তাঁর ক্রোধের প্রাবল্য, কাঠিন্যের কথা তো জগৎবিখ্যাত। সেসব লেজেন্ডারি রাগের বর্ণনা এক অমলিন ধ্রুপদি সময়ের দেশ হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে। আর সেই ক্রোধেরই অন্যপিঠে বুনে থাকে তাঁর শিশুসুলভ সারল্য, নিষ্কলঙ্ক মাধুর্য এবং রসবোধ। মনজুড়ানিয়া সেসব কাহিনি। অতুলনীয় সেইসব গল্পের সাতকাহন রয়েছে তাঁর আত্মীয় আর শিষ্যদের স্মৃতিচারণে। সুরসাধক আলাউদ্দিনের ক্রোধের দু-একটা নমুনা দেখলেন রবিশঙ্করও, তবুও আগাগোড়া আলাউদ্দিনের মধ্যে তিনি লাভ করলেন স্নেহশীল এক ‘বাবা’-কেই। ওঁর দেখাশোনার যদযাবতীয় ভার পড়ল রবিশঙ্করেরই ওপর। ওস্তাদ রোজ গান বাঁধেন। দিনে তিন-চারটে করে। জাহাজেই রবিশঙ্কর এলেন তাঁর আয়ত্তে। বলতেন, যন্তরটা আনো। বাজাতে বসলে শুধরে দিতেন। এভাবে নয়, ওইভাবে ধরো। ওভাবে নয়, এইভাবে বাজাও। তাঁর স্থির, স্থিতধী, নিঃশব্দ দৃষ্টি দিয়ে তিনি দেখলেন রবিশঙ্করকে। তাঁর কৈশোরের উদভ্রান্ত উন্মাদনাকে।

আরও পড়ুন
গাড়িতে উঠে চমকে গেলেন, ভেতরে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ

বিদেশে হলিউড অভিনেত্রী মেরি কার্লাইলের সঙ্গে উদয়শঙ্করের দল

তাঁর সমস্ত জীবনকথায় বলেছেন রবিশঙ্কর, বাল্যকাল তাঁর জীবনে আসেনি কখনও। অদ্ভুত, এক অন্যতর একাকিত্বই তাঁর নিত্যদিনের অপৃথক সহচর। কাশীর জীবনে ছেলেবেলাতেই দেখেছিলেন নির্মম অনটনকে ঘিরে মায়ের লুকিয়ে রাখা সংকট, তাঁর শোক। দেখেছিলেন সবচেয়ে প্রিয় মানুষের আকস্মিক মৃত্যুশোক। কতবার বলেছেন, তাঁর সবচেয়ে মনের কাছের ভাই ছিলেন ভূপেন্দ্রশঙ্করই। আর ছিল শ্যামশঙ্কর আর হেমাঙ্গিনীর রীতিছিন্ন নিরুত্তাপ দাম্পত্য। বেনারসে থাকতে ছোট্টো রবিশঙ্কর প্রায়ই যেতেন গঙ্গার ঘাটে। একলা বসে থাকতেন। খেই থাকত না সময়ের। কোন সনাতনী মানবজীবনের ধারাকে সঙ্গে নিয়ে বইত স্রোতোস্বিনী। নিত্যনৈমিত্তিকতায় ডুবে থাকা মানুষের অপর প্রান্তে সূর্য অস্ত যেত ধীরে ধীরে। ঐহিক যা কিছু খসে গিয়ে দেখা দিত প্রশান্ত এক দিব্য। অবিস্মরণীয় তাঁর প্রসার। ওই পাথুরে ঘাট বেয়ে অগণন সিঁড়ি চলেছে রাজ-রাজরার প্রাসাদে। সাবেকিয়ানার ধ্বজা-ওড়ানো জীবন তাঁদের। সব প্রাসাদেই থাকত নিজস্ব সানাই বাদকের সমাবেশ। খুব ভোরে নিশুত রাতের গায়ে এসে লাগত সূর্যের প্রথম আলো আর সেইসঙ্গে তাঁরা ধরতেন সুর। স্বর্গীয় হয়ে বেজে উঠত সে সানাই। ধীরে ধীরে সানাইয়ের গায়ে মিশত মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি, ঘাটে জড়ো হওয়া মানুষের কত অযুত ঢঙের সাধন-সংগীত আর কথক ঠাকুরের পৌরাণিক পালা অভিনয়। ইহজাগতিককে পেতে চেয়ে কত বিচিত্র সাজেই না মানুষ সাজিয়েছে তার অস্তিত্বকে। সন্ধেবেলায় ওই ঘাটেই রক্তজবার মতো লাল হয়ে দাউ-দাউ জ্বলত মানুষের চিতা। সেই সূর্যাস্ত আর গনগনে দাহকার্যের ওপরে তখনও অনৈসর্গিক নির্বিকার হয়ে ভেসে বেড়াত সানাই। জীবন-মৃত্যুর এই নিরুপদ্রব সহাবস্থান ভাবিয়ে তুলত তাঁকে। তিনি বসে থাকতেন ঠায়। বাড়ি থেকে কেউ এসে জোর করে তুলে নিয়ে যেত তাঁকে।

আরও পড়ুন
আলাউদ্দিন: যে-পথ দিয়ে যাবেন রাজা, সে-পথেই বাজবে সুর

তারপর প্যারিস। তাঁর জীবন দাঁড়াল আদ্যন্ত বিপ্রতীপ। অপরিমিত ভোগবিলাস, অযাচিত খ্যাতি, অপরিমেয় সৌভাগ্য আর নিরন্তর ভ্রাম্যমাণতায়। সদাচঞ্চল বহমান উৎকেন্দ্রিকতা। অসম্পন্ন কৈশোরের ওপর যেন বাধ্যত আরোপিত হল এক অবশ্যম্ভাবী, অনিবার যৌবন। প্রখর, প্রবল প্রবৃত্তি। বাল্যকাল আমার জীবনে আসেনি কখনও—এই কথার একটা বাইরের দিক আছে। অনটন, মৃত্যু আর অসহায়তার। কিন্তু ওই কথারই আছে একটা ভেতর। ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যনিশান তার খিড়কি-পথের ইতিবৃত্তকে সাধ্যমতো নিশ্চিহ্ন করে গুমঘরে। তেমনটি করেননি রবিশঙ্কর। জীবনের কাছে বরাবর তিনি দাঁড়িয়েছেন অকপট। তিনি তখন মাত্র ছয় বছরের শিশু। অপাপবিদ্ধ, নির্মল। সহজ ছেলেবেলার দিনগুলোতে। দূর সম্পর্কের এক পাড়াগেঁয়ে আত্মীয়া, একদিন ছন্দহারা এক নিস্তব্ধতায় হরণ করে নিল তাঁর শৈশব। শৈশব হত্যার রক্তশূন্য করা এ আখ্যানকে, কী আশ্চর্য মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যানে দেখেছিলেন রবিশঙ্কর। বলেছিলেন, তারপর থেকে বাইরের শরীরটাই শুধু ধরে রইল বালক বয়সটাকে।           

আরও পড়ুন
আলাউদ্দিন বললেন, সুরের বোমা মারতে পারি

বিদেশে বাবা আলাউদ্দিন খান

 তীব্র বৈপরীত্যে বিস্রস্ত এ পরিসরে রবিশঙ্করের জীবনে এলেন বাবা আলাউদ্দিন খান। অত্যন্ত কাছ থেকে তাঁকে দেখলেন রবিশঙ্কর। অনাবিল, শান্ত, সংযমনিষ্ঠ অন্যধারার এক মানুষ। অবিরত সুরের তল্লাশে ধীর-গহিন হয়ে থাকা যেন সংসারে সন্ত। কী ঐশ্বর্য কী বিরাট অথচ কী উন্মুক্ত, উদার। যেন সন্ন্যাসের বেশ-ধরা রাজা। সেই অমল সান্নিধ্য ঘটিয়ে তুলল অসাধ্য সাধন। যুগপৎ তিনি আর তাঁর সুর আগুনের পরশমণি হয়ে স্পর্শ করল রবিশঙ্করের অন্তর্লোক। আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ এঁকে তিনি ফুটিয়ে তুললেন আলোকবর্তিকা। শৃঙ্খলাহীন যৌবনের দাবদাহ থেকে রবিশঙ্কর ফিরতে চাইলেন অমৃতলোকের সন্ধানে। বিলাস-বৈভব মত্ত, বিভ্রান্ত এক কিশোর শান্ত দাঁড়াল তাঁর নির্জনতার কাছে। স্থৈর্যও যে আরেক রকম জীবনেরই উদযাপন যেন টের পেল সে।

মাঝে-মাঝে গান্ডাবন্ধনে রবিশঙ্কর শিষ্যত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানালে, এড়িয়ে যেতেন বাবা। বলতেন, শিক্ষা-দীক্ষা তো চলছে। ওই বাঁধাবাঁধির তাড়া কী?  ‘My Music, My Life’ এ বলেছিলেন রবিশঙ্কর, ‘he [Baba Allaudin] felt that dance was uppermost in my thoughts. It angered and hurt him that I should be ‘‘wasting my musical talent’’ and living in glitter and luxury….Tauntingly, he called me a ‘‘butterfly’’ and made some very cruel remarks about my constant girl chasing, my dandy’s tasters in clothing and all my other interests outside music—painting, writing and reading. He often said, ‘‘ Ek sadhe sab sadhe, sab sadhe sab jaye’’…।’ ‘glitter’ আর ‘luxury’-র চাকচিক্যময় বাতাবরণে ফুলে-ফুলে উড়ে বেড়ানো ‘প্রজাপতি’র মতো রবিশঙ্করের অনির্দেশ সাধনা, আয়েস-বিলাস, তাঁর ‘constant girl chasing’-কে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন আলাউদ্দিন। আষ্ঠেপৃষ্ঠে এ-দুনিয়ায় মত্ত হয়ে থাকা রবিশঙ্করের পক্ষে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাও যে অসম্ভব, ভর্ৎসনা করতেন সে ব্যাপারেও। তখন নাচে রীতিমতো পারঙ্গম রবিশঙ্কর। যন্ত্রও বাজান টুকটাক, আঁকেন ছবি। আর বই তো সমস্ত ক্ষণের সঙ্গী তাঁর। আলাউদ্দিন গুরুর মতো মার্গ দর্শালেন, সমস্ত কিছুর সন্ধান হারায় সবকিছুকে। আর একের মধ্যে নিবিষ্ট সন্ধান জুড়ে নেয় সমস্ত কিছুই। রবিশঙ্কর থামলেন। রঙ আর রাঙতার সাজ খসে বেরিয়ে এল এক ছাঁচ-ভাঙা মূর্তি।  

গুরু-শিষ্য - বাবা আলাউদ্দিন এবং রবিশঙ্কর

১৯৩৬-এ দলের আগেই দেশে ফিরে এলেন আচার্য আলাউদ্দিন। ১৯৩৮-এ ট্রুপের সঙ্গে দেশে ফিরলেন রবিশঙ্কর। মৃত্যুর আগে হেমাঙ্গিনীর যত্নে আর তত্ত্বাবধানে নসরৎপুরে তৈরি হচ্ছিল যে ছোট্ট বাড়ি, দেশে ফিরে সর্বপ্রথম তিনি ফিরলেন সেইখানে। এসেই উদযোগ করলেন বহুদিনের স্থগিত থাকা একটি কাজের। রবিশঙ্কর তখন আঠারো। সম্পন্ন হল উপনয়ন। উপবীত ধারণ করলেন তিনি। উপনয়নের ধর্মীয় আচারের উদ্দেশ্যটি আশ্চর্যভাবে অবিকল সত্য হয়ে এল রবিশঙ্করের জীবনে। উপবীত ধারণ করে ব্রহ্মচারী প্রস্তুত হয় গুরুর কাছে বিদ্যালাভের জন্য। সমস্ত সম্বন্ধ, ভোগ, আয়োজন থেকে নির্দিষ্ট সময় তাকে থাকতে হয় দূরে, থাকতে হয় গণ্ডিবদ্ধ হয়ে। অন্ধকারের মধ্যে অসূর্যম্পশ্য হয়ে, নিজের কাছে। এও যেন এক গর্ভ, এও যেন নূতনতর এক জন্ম প্রস্তুতি। তারপর নবজন্ম। মনে করা হয় তখন সে হয়ে ওঠে দ্বিজ। একটি জন্ম মাতৃগর্ভ থেকে। দ্বিতীয় জন্ম তার সংস্কারের মধ্যে।

দীর্ঘ প্রায় দুমাস রবিশঙ্কর রইলেন নির্জনে, একা। তারপর একদিন মুণ্ডিত মস্তক, দীন বেশভূষা, বিলাসের চিহ্নশূন্য রবিশঙ্কর এলেন রুক্ষ মাইহারে, তাঁর গুরুর চৌকাঠে। কঠোর অনুশাসনে তিনি লাভ করতে চান সুর। আলাউদ্দিন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইলেন।

Powered by Froala Editor