বিয়ের আগে নেড়া হতে হয় পাত্রী-কে, বাবা ছিটিয়ে দেন থুতু!

বিবাহের জন্য সাজানো হচ্ছে পাত্রীকে। ফুলের পোশাকে সাজিয়ে দেওয়া শরীর। ত্বকের যত্ন নিতে মাখানো হচ্ছে নানা প্রাকৃতিক প্রসাধন সামগ্রী। আর পাত্রীর চুল? চুল তো নেই। বিয়ের জন্য যে মাথা নেড়া করতে হয়েছে আগেই। হ্যাঁ, আফ্রিকার মাসাই উপজাতির মধ্যে রয়েছে এমনই অদ্ভুত রীতি। মাসাই উপজাতির মধ্যে মহিলাদের মাথায় চুল রাখার নিয়ম নেই। বরং পুরুষদের মাথায় চুলের বাহার দেখার মতো। কেউ কেউ তো পিঠ পর্যন্ত লম্বা চুল রাখেন।

এই মাসাই উপজাতির কথা আমরা সবাই জানি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়ের সূত্রে। আফ্রিকা তাই আমাদের একদম অজানা মহাদেশ নয়। কিন্তু তার মধ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে এমন নানা বিস্ময়। মাসাই উপজাতির বাড়িঘর, বেশভূষা সবই আশ্চর্যের। বাড়ি বলতে শুধুই ঘাস-লতার উপর গোবরের প্রলেপ দিয়ে বানানো কুটির। অথচ নারী-পুরুষ সকলের শরীরেই হিরে ও অন্যান্য মূল্যবান রত্নের অলঙ্কার জ্বলজ্বল করে। অন্তত রঙিন পাথরের পুঁতির মালা তো থাকবেই সকলের গলায়। মালায় রঙের বৈচিত্রই তাঁদের আভিজাত্যের প্রমাণ।

আফ্রিকার অন্যান্য উপজাতির মতোই মাসাইদের মধ্যেও প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই বেশি। এমনকি শুধু বয়স বাড়লেই প্রাপ্তবয়স্কের সম্মান পাওয়া যায় না। নানা রীতিনীতি মেনে নিজের শারীরিক দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। আর প্রায় ৩ মাস ধরে চলা এই অনুষ্ঠানের সময়েই সাধারণত নারী-পুরুষরা নিজেদের সঙ্গীদের বেছে নেন। মাসাইদের মধ্যে পারিবারিক আপত্তির প্রশ্ন ওঠে না। প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারে নিজের সঙ্গীকে। তবে বিবাহের আগে একবার পিতৃগৃহে যেতেই হবে পাত্রীকে। আর সেখানেই হবে আশীর্বাদের অনুষ্ঠান।

আশীর্বাদ অনুষ্ঠানের প্রথম রীতি পাত্রীর মাথার চুল কামিয়ে ফেলা। এরপর তাঁকে সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে হাজির করা হয় বাবার সামনে। বাবা তখন মেয়ের মুণ্ডিত মাথায় এবং বুকে নিজের থুতু ছিটিয়ে দেয়। মুখের থুতু শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়ো আশীর্বাদ। অবশ্য এরপর মেয়ে আর কোনোদিন পিতার গৃহে ফিরতে পারেন না। বরং বিবাহিত মহিলা তাঁর নিজের গ্রামে ফিরলে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়। আর তার থেকেও আশ্চর্য করে এই উপজাতির আশীর্বাদের বিষয়বস্তু। গ্রামবাংলার সঙ্গে তার এক অদ্ভুত সাদৃশ্য। বিবাহের আগে বাবা তার মেয়েকে আশীর্বাদ করে বলেন বহু সন্তানের জননী হও।

আরও পড়ুন
সমকামীদের বিবাহ-সার্টিফিকেট নিয়ে তীর্যক মন্তব্য কেন্দ্রের, কোনদিকে এগচ্ছে ভারত?

অন্যান্য উপজাতির মতোই মাসাই জীবনেও যে নানা পশ্চাদপদতা মিশে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। নারীরা তাঁদের কাছে শুধুই সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। তবে সেটুকুই এই সংস্কৃতির একমাত্র পরিচয় নয়। আর নিজেদের সংস্কৃতি ছেড়ে ইউরোপীয় আধুনিকতাকে মেনে নিতেও রাজি নন মাসাই উপজাতির মানুষরা। এর মধ্যেই অবশ্য উপজাতির মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে উন্নয়নের জন্য লড়ছেন অনেকেই। এই উন্নয়নের পথ অবশ্য খুব সহজ নয়। আর বিদেশিদের অন্যতম লক্ষ থাকে সবসময়ই, ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ করে অরণ্যের দখল নেওয়া। তবে ক্রমশ সরকারি উদ্যোগ পৌঁছতে শুরু করেছে অনেকটা। নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রেখেই হয়তো সংস্কৃতিকেও তাঁরা বদলে ফেলবেন আগামীদিনে।

আরও পড়ুন
ফিলিপ-এলিজাবেথের বিবাহ, সদ্য-স্বাধীন ভারত থেকে ‘জয় হিন্দ’ বার্তা মহাত্মার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিবাহেই কি বিচার পাবেন ধর্ষিতা? সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

More From Author See More

Latest News See More