সাইকেলে চেপে সুন্দরবন, বাদাবনে বাঘের চাল দেখাবেন নাট্যকর্মীরাই

“আমফান বা ইয়াসের পর তো নানাভাবে উঠে আসছে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের কথা, বাদাবনের কথা। কিন্তু এই সমস্যা তো আজকের তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা নয়। সুন্দরবনের প্রকৃত সমস্যাটার দিক থেকে নজর ঘুরে যাচ্ছে ত্রাণ-পর্যটনের দিকে। আমরা এই জায়গাটা নিয়েই মানুষকে ভাবাতে চাইছি। সেইসঙ্গে চাইছি সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আমাদের মতো বাইরে থেকে যাওয়া মানুষদের একটা যোগাযোগের সেতু তৈরি হোক।” বলছিলেন ‘বিসর্গ’ নাট্যদলের অভিনেত্রী নিবেদিতা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আগামী ১ জুলাই সাইকেল চালিয়ে দলটি উপস্থিত হবে সুন্দরবনের বুকে। তারপর নানা অঞ্চল ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠিত হবে তাঁদের নাটক, ‘বাঘ চাল’। গোটা কর্মসূচির নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘বাদাবনে বাঘ চাল’।

নিবেদিতা বলছিলেন, “করোনা অতিমারীর মধ্যেও আমরা নাটকের চর্চাকে বজায় রেখেছি আমাদের ‘দ্বিচক্রযান অভিযান’-এর মাধ্যমে। আর এক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়টির সঙ্গেও সাইকেল অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তো বহু মানুষের রোজগারের সংস্থান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অপরিকল্পিত লকডাউনের বিরুদ্ধেও একটা প্রতিবাদ আমাদের এই দ্বিচক্রযান অভিযান।” সুন্দরবন অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের আহ্বানেই উপস্থিত হতে চলেছেন ‘বিসর্গ’ নাট্যদলের সদস্যরা। নিবেদিতা জানালেন, “আমাদেরই এক পরিচিত বন্ধু, নাম বাপ্পা, তারই উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে এই কর্মসূচি। ১ জুলাই ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন থেকে শুরু করে ৪ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের তিরোধান দিবস পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। সরবেড়িয়া, মণিপুর, আতাপুর, মিঠাখালি, চিমটা, পুইজালি, কুমিরমারি, ভ্রুলিয়াপাড়া এবং সুরনজনা অঞ্চলজুড়ে আমরা নাটক করব। এই সময় সক্রিয় কয়েকটি কমিউনিটি কিচেন থেকেও আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

আসলে ত্রাণ যে কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না, সেটাই মনে করিয়ে দিতে চান নাট্যদলের সদস্যরা। “সুন্দরবন অঞ্চলের অবস্থান সমুদ্রতলের থেকে নিচে। তাই সেখানে কংক্রিটের বাঁধের কার্যকারিতাও যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন উপযুক্ত ঘনত্বের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এদিকে জঙ্গল ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে ক্রমাগত। এই সমস্ত সমস্যাই তো আমরা জানি। যে সমস্যার মূল এতদূর গভীরে, তাকে শুধু ত্রাণ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না।” বলছিলেন নিবেদিতা। তাহলে কীভাবে সম্ভব সমাধান? এর উত্তর হয়তো দেবেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ব্যক্তিরাই। তবে তারও আগে প্রয়োজন সুন্দরবনের স্থানীয় মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ‘বাদাবনে বাঘ চাল’ হয়তো সেই পরিসরটাই অনেকটা খুলে দিতে পারবে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বদলেছিলাম পুরনো নাটকের সংলাপও’ : শাঁওলি মিত্র