আত্মাকে আহ্বান জানানোর প্রাচীন প্রথা; অভিনব ‘ডে অফ ডেথ’ পালন মেক্সিকোয়

প্রতি বছরের মতো এবারেও সেজে উঠেছিল মেক্সিকো। ঘরে ঘরে গাঁদাফুলের মালায় আর সুগন্ধী আতরের গন্ধে ভরে উঠেছে গেরস্থালি। উপলক্ষ? সারা বছর যেসব প্রিয়জন এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন, তাঁদের একটি রাতের জন্য ফিরিয়ে আনার আহ্বান। শীতের হাওয়ার শিরশিরানি আর ফুলের সুবাসে আকৃষ্ট হয়েই নাকি ফিরে আসে প্রিয়জনের আত্মারা। অনেকটা ইউরোপের হ্যালোউইনের মতোই। মেক্সিকোর এই অনুষ্ঠানের নাম ‘ডে অফ ডেথ’। প্রতি বছরের মতো এবছরও সেই অনুষ্ঠান পালিত হল মেক্সিকো জুড়ে। তবে এবারের উৎসব ছিল আরও তাৎপর্যপূর্ণ। মানুষের অংশগ্রহণ ছিল আরও ব্যাপক। কারণটা সহজেই অনুমান করা যায়। করোনা পরিস্থিতিতে কোনো প্রিয়জনকে হারাননি এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।

উৎসব হল। তবে প্রতিবারের মতো সামাজিক জমায়েত হয়নি এবছর। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সমস্ত পৃথিবী। প্রত্যেকেই নিজের বাড়ির মধ্যে অনুষ্ঠান পালন করলেন। আর এই একাকিত্ব যেন স্বজন হারানোর বেদনাকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছিল। ২ নভেম্বর রাতে আবারও নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হলেন মেক্সিকোর মানুষ। যে ভাইরাস তাঁদের প্রিয়জনদের কেড়ে নিয়েছে, তার কাছে হেরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। এমনটাই বলছেন প্রত্যেকে। গাঁদাফুল আর আতরের সঙ্গে এবারে আরও একটি জিনিস উৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। সেটা হল মাস্ক। নিজেরা তো বটেই, প্রয়াত মানুষদের ছবির সামনেও সাজিয়ে রাখা হয়েছিল মাস্ক। যদিও সেটা প্রতীকী। কিন্তু এই প্রচারের ফলে প্রতিদিনের জীবনে মাস্ক ব্যবহার আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন মেক্সিকোর মানুষ।

সারা দেশে কোভিডে প্রয়াত সমস্ত মানুষদের স্মরণে এবছর ‘ডে অফ ডেথ’ পালিত হল মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট’স হাউসেও। সেখানেও সামাজিক দূরত্ব এবং ব্যক্তিগত সতর্কতার উপরেই জোর দেওয়া হল। করোনা মহামারীর দৃশ্যকে তুলে ধরতে এইদিন অনলাইনে স্ট্রিমিং হল বেশ কিছু নাটক। এবছর মৃত্যু আর করোনা যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। মেক্সিকোর ‘ডে অফ ডেথ’ অনুষ্ঠানকে তাই করোনার বিরুদ্ধে সংকল্প দিবস হিসাবে ভেবে নিলে খুব ভুল হবে না।

Powered by Froala Editor