তিন ভারতীয়ের বানানো ক্ষুদ্রতম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাচ্ছে নাসা

সত্তরের দশকের কম্পিউটারের দিকে তাকালে বেশ খানিকটা অবাকই হতে হয়। কারণ সেসময় কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের আয়তন একটা আলমারির চেয়ে খুব কিছু কম ছিল না। আর তার জায়গা ছিল মাত্র কয়েক এমবি। তবে আজ ছোট্ট মেমরি কার্ডই কয়েকশো জিবির ডেটা ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। প্রযুক্তি যত উন্নত হয়েছে ততই ছোট হয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের আয়তন। তেমনই এবার নাসা থেকেও মহাকাশে উড়ান দিতে চলেছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কৃত্রিম উপগ্রহ। এইটুকু শুনে অবাক না লাগারই কথা। তবে আশ্চর্যের বিষয়, প্রযুক্তিবিদ্যার বিখ্যাত পরিচিত কোনো বিজ্ঞানী নয়। এই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন করেছে তিন ভারতীয় পড়ুয়া।

এম. আদনান, ভি. অরুণ এবং এম. কেশভান— তামিলনাড়ুর এই তিন শিক্ষার্থীর দৌলতেই এবার বিশ্বের বিজ্ঞান-মঞ্চে আরও একবার পৌঁছে গেল ভারতের নাম। তিন বন্ধুর মধ্যে প্রথম দু’জন পাঠ্যরত পদার্থবিদ্যার চূড়ান্ত বর্ষে। অন্যজন ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন বিভাগে প্রযুক্তিবিদ্যায় তৃতীয় বর্ষে ছাত্র। তখন সবে একাদশ শ্রেণী। উচ্চ-মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরনোর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের গবেষণা। তার মাত্র বছর চারেকের মধ্যেই সারা পৃথিবীকে চমকে দিল তাদের সৃষ্টি, আবিষ্কার।

গ্রাফিন পলিমার দিয়ে তৈরি এই ঘনাকার স্যাটেলাইটের এক পাশের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩ সেন্টিমিটার। তবে পৃথিবীর মধ্যে শুধু ক্ষুদ্রতম নয়, সবথেকে হালকা কৃত্রিম উপগ্রহের রেকর্ডও তৈরি করেছে এই আবিষ্কার। ছোট্ট এই স্যাটালাইটের ভর ৬৪ গ্রাম। পৃথিবী থেকে তথ্য প্রেরণ ও সংগ্রহের জন্য এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিও। এবং পুরো যন্ত্রটিই চালিত হবে সৌরশক্তিতে।

ইদুদলেডু আইএনসি’র সঙ্গে যৌথভাবে নাসা এই বছর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল তরুণ বিজ্ঞানীদের আকর্ষিত করানো মহাকাশবিদ্যার ক্ষেত্রে। সেই প্রতিযোগিতাতেই তিন ভারতীয় ছাত্রের এই আবিষ্কার পুরস্কৃত হয়েছে সম্প্রতি। সাফল্যের পর  আরাকাকুরিচের বিধায়ক এক লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন তিন বন্ধুকে। তাদের ভবিষ্যতেও এই ধরণের কাজ চালিয়ে যেতে ডিএমকে সভাপতি এমকে স্টালিন পাঠিয়েছেন দুই লক্ষ্য টাকার উপহার।

নাসার কিউবস্যাট মিশন এবং মেক্সিকো স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগেই প্রতিবছর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং অলাভজনক সংস্থার তৈরি স্যাটালাইট উড়ান দেয় আকাশে। এবার সেই পথেই মহাকাশে পৌঁছবে ভারতীয় এই খুদে উপগ্রহ। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যেই এই ‘ন্যানো-স্যাটেলাইট’-কে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে নাসা। 

গত বছর মেক্সিকোরই একদল কলেজ পড়ুয়া জিতেছিল এই পুরস্কার। জুতোর বাক্সের থেকেও খানিকটা আয়তনে ছোটো উপগ্রহ তৈরি করেছিল তারা। তবে সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েই ভারতীয় শিক্ষার্থীরা তৈরি করল নতুন ইতিহাস। দেখাল অসম্ভব বলে আসলে সত্যিই হয় না কিছু। মহাকাশবিজ্ঞান গবেষণায় এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দিগন্ত খুলে দিল তাদের আবিষ্কার, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা থাকে না...

আরও পড়ুন
ভারতের বুকেই ছিল নথি, চার দশকের সূর্য-ইতিহাস ‘আবিষ্কার’ বাঙালি বিজ্ঞানীদের

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More