শহরজুড়ে ছড়িয়ে ৭২ হাজার টন হিরে! জার্মানির বুকে বিস্ময়

জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশের ছোট্ট শহর নর্ডলিনজেন। আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে সেখানে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পশ্চিম ইউরোপের শহর হিসাবে বয়স খুব বেশি নয়। কিন্তু এই শহরের বুকেই ছড়িয়ে আছে এক আশ্চর্য রহস্য। মনে করা হয় শহরের রাস্তা, বাড়িঘর এসবের মধ্যেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য হিরে। আর সেই হিরের পরিমাণ? মোটামুটি ৭২ হাজার টন হিরে ছড়িয়ে আছে শহরের বুকে। কিন্তু কোথায় কোথায় লুকিয়ে আছে সেইসব হিরে, তা হয়তো আর জানা সম্ভব নয়। হিরের সন্ধান করতে গিয়ে তো প্রতিটা অট্টালিকা ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়।
নর্ডলিনজেন শহরের মানুষও কোনোদিন ভাবতে পারেননি তাঁরা এই বিপুল সম্পত্তি সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছেন। জানা গেল ১৯৬০ সালে এসে। তার আগে মনে করা হত আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা দিয়ে তৈরি শহরের মাটি-পাথর। কিন্তু মহাকাশবিজ্ঞানীরা হঠাৎ এক বিকল্প ধারণার অবতারণা করলেন। সঙ্গে ভূতত্ত্বিকরাও ছিলেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল লাভা থেকে নয়, বরং পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া অতিকায় উল্কার প্রভাবে এই শহরের শিলা তৈরি হয়েছে। আনুমানিক ১৫ মিলিয়ন বছর আগে ৩ বিলিয়ন টনের একটি উল্কা আছড়ে পড়েছিল এই শহরের জায়গায়। আর তার গতিবেগ ছিল সেকেন্ডে প্রায় ১৫.৫ মাইল। এই সংঘর্ষের ফলে যে বিপুল তাপ ও চাপের সৃষ্টি হয়েছিল, তাতেই শিলার প্রকৃতি বদলে যায়। আর নতুন তৈরি হওয়া শিলাকে ভূতত্ত্বিকরা বলেন সাবনাইট।
সাবনাইট শিলার বৈশিষ্ট্য হল এর মধ্যে নানা ধরণের কেলাস গঠন দেখা যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় কাচ এবং হিরে। আর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৫ মিলিয়ন বছর আগে যে সংঘর্ষ ঘটেছিল তাতে ৭২ হাজার টনের বেশি হিরে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেইসব হিরের গঠন অতি সূক্ষ্ম। খালি চোখে তাদের দেখা প্রায় অসম্ভব। যদিও ইলেকট্রনিক্সের গবেষণায় এখন এইসব সূক্ষ হিরের দামও অনেক। আজ হয়তো শহরের সমস্ত বাড়িঘর ভেঙে ফেললে সেইসব হিরের সন্ধান পাওয়া যাবে।

Powered by Froala Editor