নিঃসঙ্গতা দূর করতে ১০০০ ক্রিসমাস কার্ড, ৯২ বছরের বৃদ্ধার পাশে গোটা বিশ্ব

পর্তুগালের বাসিন্দা ন্যান্সি লেটহ্যাম। ৯২ বছর বয়সে ১৭ জন নাতি-নাতনি ও তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে জমাটি সংসার হয়তো আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমান সমাজের ইঁদুর-দৌড়ে এইসব মানবিক চাওয়া-পাওয়া আজ নিতান্তই অর্থহীন। পুরনো বাড়িতে একাই থাকেন ন্যান্সি। এমনকি ছুটির দিনেও আত্মীয়রা কেউ দেখা করার সময় পান না। তবে এই একাকিত্বের মধ্যেও এবছরের বড়োদিন তাঁর কাছে একেবারেই অন্যরকম। এই মহামারী পরিস্থিতিতেও তিনি এক নতুন আনন্দের সন্ধান পেলেন। আর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সেই আনন্দের খবর বয়ে এনেছে ১ হাজারের বেশি ক্রিসমাস কার্ড।
এই করোনা পরিস্থিতিতে আরও একা হয়ে পড়েছেন ন্যান্সি লেটহ্যাম। ইতিমধ্যে বহু প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তিনি। করোনা কেড়ে নিয়েছে বহু বন্ধুর জীবন। বাকিদের সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। শুধু ছুটির দিনগুলিতে গোটা চারেক চিঠি পান মাঝে মাঝে। সেইসব চিঠি পড়ে আর চিঠির উত্তর দিতে দিতেই সময় কাটিয়ে দেন। তবু একাকিত্বের গ্রাস থেকে মুক্তি পান না। আর এই একাকিত্বের কথা অক্টোবর মাসে সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্ত করেন। তার পর থেকেই সাড়া পেতে থাকেন নানা দেশ থেকে। ছুটির দিনগুলিতেও ৪০-৫০টি চিঠি আসতে থাকে। তবে সমস্ত প্রত্যাশা ভেঙে দিয়ে বড়োদিনের আগে যেন ক্রিসমাস কার্ডের বন্যা ঢুকে পড়ল তাঁর ঘরের মধ্যে।
সারা পৃথিবীর মানুষ যে ন্যান্সির একাকিত্বের দোসর হয়ে উঠেছেন, তাতে খুশি তাঁর নাতি-নাতনিরাও। আর ন্যান্সিও যেন ক্রমশ সমস্ত অবসাদ ভুলে যেতে শুরু করেছেন। ভারত, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা সহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা সমস্ত বার্তার উত্তর দিতে হবে যে তাঁকে। সবাই শুধু বড়োদিনের শুভেচ্ছাই জানাননি। কেউ কেউ লিখেছেন তাঁদের নিজেদের কথা। নিজেদের জীবনের লড়াইয়ের কথা। আবার কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন ন্যান্সির জীবন সম্পর্কে। প্রতিটা চিঠি পড়তে পড়তে ন্যান্সির মনে হতে থাকে, সত্যিই তো এই পৃথিবীতে একা নন কেউই। মানুষের উপর যেন আবার নতুন করে আস্থা রাখতে শিখছেন ৯২ বছরের ন্যান্সি লেটহ্যাম।

Powered by Froala Editor