শুধু সংস্কৃত নয়, তামিলও ‘দেবভাষা’; নিদান মাদ্রাজ হাইকোর্টের

কথায় আছে সংস্কৃত ছাড়া পূজাপাঠ অসম্পূর্ণ। সংস্কৃত হরফের নাম, ‘দেবনাগরী’-তেও যেন মিশে রয়েছে সেই প্রবাদ। কিন্তু কেবলমাত্র সংস্কৃতই দেবভাষা নয়। পৌরাণিক গ্রন্থে বার বার প্রসঙ্গ এসেছে তামিলের। প্রাচীনতার নিরিখেও সংস্কৃতের (Sanskrit) থেকে কোনো অংশে কম নয় তামিল। সম্প্রতি এমনটাই জানাল মাদ্রাজ হাইকোর্ট (Madras High Court)। তামিলকেও (Tamil) অভিহিত করা হল ‘দেবভাষা’ (God’s Language) হিসাবে। দক্ষিণ ভারতে সংস্কৃতের পাশাপাশি অরুণগিরিনাথ, নয়নমার, আজওয়ার্সের মতো পণ্ডিতদের লেখা তামিল স্তোত্রগুলিও যাতে মন্দিরে প্রার্থনার সময় ব্যবহৃত হয়, সেই আহ্বানই জানাল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। 

বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা, তামিলনাড়ুর কারুর জেলার একটি মন্দির কর্তৃপক্ষ পিটিশন জমা দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টে। দাবি ছিল, সংস্কৃতের পরিবর্তে মন্দিরে তামিল ভাষায় স্তোত্রপাঠের অনুমতি দিতে হবে সরকারকে। একইসঙ্গে ‘দেবভাষা’ হিসাবে তামিলকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্যও আবেদন করেছিল ওই মন্দির কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি পর্যালোচনার জন্যই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এন কিরুবাকরণ এবং বি পুগালেন্ধিকে নিয়ে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে তামিলনাড়ু সরকার। পৌরাণিক নথি অনুযায়ী ‘তামিল’ ভাষার জন্ম নৃত্যরত মহেশ্বরের হাত থেকে পড়ে যাওয়া ডমরু থেকে। তাছাড়াও তামিল ইতিহাস অনুযায়ী মহাদেব শিবই ছিলেন প্রথম তামিলসঙ্গম বা তামিল অ্যাকাডেমির প্রথম সভাপতি। পাশাপাশি সংস্কৃতের স্তোত্রের থেকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে তামিল ভাষায় প্রাচীনকালেই রচিত হয়েছিল মহাদেব, তিরুমল, মুরুগার স্তোত্র। এমনকি বৈষ্ণব শ্লোকও। প্রাচীন তামিল নথি এবং সাহিত্যের বিশ্লেষণ করেই সম্প্রতি ঐতিহাসিক রায় জানায় দুই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ।

ধরে নেওয়া হয় সংস্কৃত ভাষার জন্ম হয়েছিল ৩ হাজার বছর আগে। তবে শুরুর এক হাজার বছর কোনো লিখিত নথি নেই এই ভাষার। সংস্কৃতের প্রাচীনতম পুঁথি লেখা হয়েছিল প্রথম শতাব্দীতে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, লিখিত ভাষা হিসাবে তামিলও সমবয়সী। তবে দুঃখের বিষয়, অধিকাংশ তামিল শিলালিপিই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। অধিকাংশ নথিই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল কিংবা নদীতে ফেলা দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনকালে। তা সত্ত্বেও যথেষ্ট প্রমাণ অবশিষ্ট রয়েছে এখনও। আর তার নেপথ্যে তামিল পণ্ডিত ইউ ভে স্বামীনাথন আইয়ার। সরকারিভাবে যাতে এই পুঁথি ও শিলালিপিগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, সেই আদেশও দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট।

আরও পড়ুন
চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থেই প্রয়োজন ভাষার সংরক্ষণ, মত বিজ্ঞানীদের

তবে শুধু ইতিহাস নয়, মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারে উঠে এসেছে আরও একটি উল্লেখযোগ্য আঙ্গিক। বিশ্বাসের পাশাপাশি, ধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে সংস্কৃতিও। ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে বদলে যায় একই ধর্মের বিভিন্ন প্রথা, আচারগুলিও। তাহলে দেবতার অর্চনা কোনো নির্দিষ্ট ভাষাতেই বা হতে হবে কেন? এই আঙ্গিকেই তামিলকেও ‘দেবভাষা’-র আখ্যা দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই রায় যেন আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘যত মত তত পথ’-এর প্রাসঙ্গিকতা…

আরও পড়ুন
কবিতা থেকে সিনেমা - সর্বত্রই নতুন ভাষা খুঁজেছেন বুদ্ধদেব

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ইতালিয়ান থেকে ভাষান্তর, প্রকাশিত ঝুম্পা লাহিড়ীর তৃতীয় ইংরাজি উপন্যাস