প্রয়াত বাবাকে বাড়িতে রেখেই ফুটবল মাঠে পিয়ারলেসের আকাশ

“আমাদের আগের প্রজন্মের কোনো এক খেলোয়াড়ও নাকি বাবাকে দাহ করার সময় শ্মশান থেকে চলে এসেছিলেন। আমরা তাঁর কথা শুনেছিলাম। কিন্তু বিশেষ মনে রাখিনি।” বলছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুটবলের (Football) মাঠে এমন কত গল্প-ঘটনাই তো জড়িয়ে আছে। ২০০৪ সালে মোহনবাগানের বাসুদেব মণ্ডল বাবার সৎকার সেরে অশৌচের কাপড়েই চলে এসেছিলেন মাঠে ফুটবল তো শুধু একটা খেলা নয়, তা মানুষের আবেগেরও জায়গা। আজ পিয়ারলেসের খেলোয়াড় আকাশ মুখোপাধ্যায় (Akash Mukherjee) তেমনই এক ঘটনার জন্ম দিলেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে।

সকালেই শ্রীরামপুর নিবাসী আকাশ মুখোপাধ্যায়ের বাবা মারা গিয়েছেন। সেই অবস্থায় বাবার মৃতদেহ ঘরে রেখেই সোজা ময়দানে হাজির তিনি। টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হতে তখন আর সামান্যই বাকি। পিয়ারলেস ক্লাবের কর্তারা ধরেই নিয়েছিলেন আকাশ আর আসতে পারবেন না। এমনকি তাঁকে ফোন করে আসতে বারণও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো নিষেধই শোনেননি আকাশ। বলেছেন, খেলতে নামলে ব্যথা কিছুটা লাঘব হবে। হ্যাঁ, ভালোবাসার কাছেই যে সব যন্ত্রণার উপশম। এই ঘটনার কথা শুনে অবাক প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রহরকে তিনি জানালেন, “পেশাদার খেলার ময়দানে এমন ঘটনা দেখা যায়। তাঁদের কাছে খেলার থেকে বড়ো কিছু থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে খেলা তো ঠিক পেশাদারি নয়। তা অনেকটাই আবেগ দিয়ে চলে। এই আবেগ কখনও কখনও লাগামছাড়া হয়ে গিয়ে অবাক করে। কিন্তু তারপর আর তাকে দাম দিতে চান না অনেকেই।”

আজকের ম্যাচে ৬-২ গোলে টালিগঞ্জ অগ্রগামীকে পরাজিত করে পিয়ারলেস। যদিও স্কোরকার্ডে আকাশের নাম নেই, তবু খেলার শেষে তিনিই দলের মুখ। কিছুদিন আগে খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পান আকাশ। মাঠের পাশেই ৬টি সেলাই পড়ে কপালে। কিন্তু ব্যান্ডেজ নিয়েই আবার নেমেছিলেন মাঠে। এভাবেই বারবার সবাইকে অবাক করে চলেছেন তিনি। প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই আবেগগুলোকে আমাদের এবার মূল্য দিতে শেখা উচিৎ। এখন আকাশকে নিয়ে আলোচনা হলেও কয়েকদিন বাদে হয়তো কেবল স্কোরকার্ডের মধ্যেই চাপা পড়ে যাবে তার সাফল্য। মানুষের স্মৃতিশক্তি বড্ড দুর্বল। কিন্তু একটা দরিদ্র পরিবারের ছেলে আজ খেলার মাঠে যে ইতিহাস তৈরি করল, তার জন্য তাকে কুর্নিশ।”

ইস্ট-বেঙ্গলের অনুর্ধ্ব-১৯ দল থেকে খেলা শুরু আকাশের। আজ সেই ইস্ট-বেঙ্গল মাঠেই ইতিহাস তৈরি করলেন তিনি। তাঁর এই কাজে প্রশংসা জানিয়েছেন ইস্ট-বেঙ্গলের কর্তারাও। আর সবচেয়ে বেশি আবেগে ভেসেছেন বোধহয় কোচ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আকাশ না এলেও তাঁর দল ঠিকই মাঠে নামত, হয়তো ম্যাচ জিততও। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের এই দায়বদ্ধতা সত্যিই অবাক করে।

আরও পড়ুন
প্রয়াত মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক ভবানী রায়, শোকস্তব্ধ ফুটবল দুনিয়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একইসঙ্গে তিনটি ইউরোপীয় ক্লাবের অফার, মোহনবাগান ছাড়ছেন সন্দেশ ঝিঙ্গান?