১০৭টি ভাষা নিয়ে ভারতের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ জেলা বেঙ্গালুরু

সিলিকন ভ্যালি হোক বা বাগিচা শহর, বেঙ্গালুরু বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ছিমছাম গোছানো শহর। আর তার সঙ্গে অবশ্যই নানা জায়গার মানুষের মিলিত বসবাস। বিগত কয়েক দশকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা। আর এভাবেই শহরটি হয়ে উঠেছে এক বহুজতিক বাসস্থান। শুধু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, তাই তো নয়। প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা। আর এভাবেই বেঙ্গালুরু হয়ে উঠেছে দেশের ভাষাবৈচিত্র্যেরও এক কেন্দ্র। এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা। গোটা বেঙ্গালুরু জেলাতে অন্তত ১০৭টি বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বাস। দেশের আর কোনো জেলায় এমন ভাষাগত বৈচিত্র্য নেই।

ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের গবেষক শমিকা রবি এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউশনের অধ্যাপক মুদিত কাপুর মিলিতভাবে দেশের প্রতিটা জেলার ভাষামানচিত্র তৈরি করেছেন। আর তাতেই ধরা পড়েছে বেঙ্গালুরু জেলার এই পরিসংখ্যান। প্রসঙ্গত, ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় মাত্র ২২টি আঞ্চলিক ভাষা সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। এছাড়াও সরকারি কাজের বাইরে ৮৪টি ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে সমীক্ষকদ্বয়ের মতে, সারা দেশে ভাষার বৈচিত্র আরও অনেক বেশি। সমস্ত ভাষা এবং উপভাষা মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৫০০-র বেশি। আর সেই হিসাবে ভাষাগত বৈচিত্র্যের হিসাবে সারা পৃথিবীতে ভারত সবচেয়ে এগিয়ে। তবে এই ভাষার বণ্টন দেশের সর্বত্র সমান নয়।

বেঙ্গালুরু জেলায় যেমন ১০০টিরও বেশি ভাষায় কথা বলেন মানুষ, তেমনই নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর এবং অসমের সোন্তিপুরেও সংখ্যাটা ১০০-র বেশি। তবে পন্ডিচেরির ইয়ানাম, বিহারের কাইমুর এবং তামিলনাড়ুর আরিয়ালুর জেলায় মানুষ ১০টিরও কম ভাষায় কথা বলেন। শমিকা রবি এবং মুদিত কাপুরের মতে, যে অঞ্চলে মানুষের ভাষাগত বৈচিত্র্য যত বেশি, সেখানে মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও বেশি। আর বহু সংস্কৃতির মানুষের সহাবস্থানের ফলে সেখানে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির মানসিকতাও অনেক বেশি। বর্তমানে যেভাবে চারিদিকে হিংসার পরিবেশ ছড়াচ্ছে, সেখানে এই সমস্ত বিষয়কে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।

ভারতের বুকে নানা ভাষাভাষীর মানুষের জনসংখ্যা নানারকম। তবে জনসংখ্যায় কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকলেও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দিক থেকে প্রতিটা ভাষাভাষীর মানুষই সমান সমৃদ্ধ। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকাংশ ভাষাই এখনও স্বীকৃতি পায়নি। ফলে তাদের সংরক্ষণের বিষয়েও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সাম্প্রতিক এই সমীক্ষা সেই দিকটাতেও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন
সিন্ধু সভ্যতায় দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা-ব্যবহার, হদিশ দিলেন বাঙালি গবেষক

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাংলা-সহ ৩০টি ভাষায় ইমোজি প্রকাশ অলিম্পিক কমিটির

More From Author See More