চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থেই প্রয়োজন ভাষার সংরক্ষণ, মত বিজ্ঞানীদের

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৪ মাসে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪টি করে ভাষা বিপন্ন হয়ে উঠছে। একটি ভাষার মৃত্যু মানে শুধুই শব্দভাণ্ডারের ক্ষতি নয়। সেইসঙ্গে একটি জনজাতির যাবতীয় শিক্ষাভাণ্ডারেরও মৃত্যু হয়। আর এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অরণ্যবাসী মানুষদের দীর্ঘদিনের জীবনযাপনের মধ্যে থেকে সঞ্চিত জ্ঞান। তাঁদের সেই জ্ঞান সংরক্ষণের ভাষা হারিয়ে গেলে বহু ঔষধি গাছের গুণাগুণই আর জানা যাবে না।

সম্প্রতি আমেরিকার ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিপন্ন ভাষাগুলির বিষয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এখনও অবধি শুধু উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাতেই ১২৪৯৫টি ঔষধি গাছের অস্তিত্ব জানা গিয়েছে। তবে তার ব্যবহার জানেন শুধুমাত্র উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরাই। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ গাছের ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র একটি কোনো উপজাতি গাছগুলির ব্যবহার জানে। ফলে তাঁদের ভাষা হারিয়ে গেলেই সেই গাছটির ব্যবহারও হারিয়ে যেতে বাধ্য। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেহেতু উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের লিখিত শিক্ষাবস্তু নেই, তাই ভবিষ্যতে তা পুনরুদ্ধার করাও সম্ভব নয়।

ভেষজ ঔষধের সংকটের পিছনে অনেক সময়েই জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ঔষধি গাছদের মাত্র ৫ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংকটে পড়েছে। তবে ভাষা সংকট এক্ষেত্রে খুবই আশঙ্কাজনক। সারা পৃথিবীতে ৩ হাজারের বেশি ভাষা সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। আর এদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো লিখিত রূপ নেই। এমনকি বর্তমানে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত নয় এমন ভাষার ক্ষেত্রেও শব্দভাণ্ডার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তার মধ্যে ঢুকে পড়ছে বহু বিদেশি শব্দ।

বিজ্ঞানীদের মতে ক্রান্তীয় অঞ্চলের বহু প্রচলিত রোগের চিকিৎসাই এখনও আধুনিক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসা ভেষজ চিকিৎসায় সেইসব রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় এই প্রচলিত ওষুধগুলি থেকেই রোগের প্রকৃত কারণের সন্ধান পাওয়া যায়। তাই অবিলম্বে সেইসমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে নথিভুক্ত করা না গেলে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের জগতে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন
ইতালিয়ান থেকে ভাষান্তর, প্রকাশিত ঝুম্পা লাহিড়ীর তৃতীয় ইংরাজি উপন্যাস

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জার্মান ভাষায় রবীন্দ্র-কবিতা, পাঠোদ্ধারে সহায় শঙ্খ ঘোষ