প্রয়াত ‘চ্যাটার্জিভাইরাস’-এর স্রষ্টা, কিংবদন্তি বিজ্ঞানী স্মৃতিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

বছর খানেক আগের কথা। বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয়েছিল ব্যাকটেরিয়াল ভাইরাসের এক নতুন জিনোম। যার বাহক ‘ডিএস-ডিএনএ’। অণুজীববিদ্যার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সঙ্গে জুড়ে ছিল এক বাঙালি অধ্যাপকের নামও। স্মৃতিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নামানুসারেই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অফ ভাইরাসের সাব-কমিটি এই নতুন বর্গের নামকরণ করেন ‘চ্যাটার্জিভাইরাস’। 

গত রবিবার চলে গেলেন কিংবদন্তি এই বাঙালি বিজ্ঞানী। বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মাঝে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালেও। সম্প্রতি ক্রমশ সুস্থতার দিকে ফিরলেও, ফের আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। ব্যর্থ হয় চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টাই। সম্প্রতি কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৩২ সালে কলকাতায় জন্ম স্মৃতিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি। বিষয় ছিল পদার্থবিদ্যা। পরবর্তীতে তিনি সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে কণাতত্ত্বের বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। তারপরেই মোড়বদল। পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা ছেড়ে তিনি বিষয় হিসাবে বেছে নেন বায়োলজি ও বায়োফিজিক্সকে। তবে হঠাৎ এই নতুন দুনিয়ায় এসেও একের পর এক সাফল্যের ফুল ফুটিয়েছেন প্রখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী।

২৯ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে। তারপর সেখানেই গবেষণা এবং অধ্যাপনা। সত্তরের দশকের শুরুতেই বায়োফিজিক্সের প্রধান অধ্যাপকের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭৩ সালে সেই কাজ ছেড়ে যোগ দেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজিতে। বছর চারেক সেখানে অধ্যাপনার পর ফিরে এসেছিলেন কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউটে। অবসরগ্রহণের আগে পর্যন্ত সেখানেই বিজ্ঞান-সাধনা করেছেন তিনি। পালন করেছেন অধিকর্তার ভূমিকাও। 

আরও পড়ুন
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের কারণ কী? বিস্তারিত গবেষণাপত্র প্রকাশ বিজ্ঞানীদের

গোটা কর্মজীবনে বিভিন্ন বিষয়ে সব মিলিয়ে প্রায় ২০০-র বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন ডঃ চট্টোপাধ্যায়। যার মধ্যে যেমন পদার্থবিদ্যার কণাতত্ত্বের একাধিক আবিষ্কার আছে, তেমনই রয়েছে জীববিজ্ঞান এবং বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু গবেষণা। জিন-টেকনোলজি নিয়েও বিস্তারিত কাজ করেছেন তিনি। 

আরও পড়ুন
সালকিয়ার মাঠ থেকে বায়ার্ন মিউনিখ, রূপকথার উড়ান বাঙালি ফুটবলারের

রকেটফেলার ফাউন্ডেশন পুরস্কার, শকুন্তলা আমিরচাঁদ পুরস্কার, বাসন্তীদেবী পুরস্কার-সহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ফেলোশিপ। শেষ বয়স পর্যন্তও গবেষণাকে ঘিরে তৈরি করা নিজের জগতের মধ্যেই দিন কাটিয়েছেন অধ্যাপক স্মৃতিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। দিশা দেখিয়েছেন বহু তরুণ গবেষককে। এমন একজন ব্যক্তিত্বের চলে যাওয়ায় যেন অভিভাবকত্বের একটা ছাতা সরে গেল তরুণ শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর থেকে…

আরও পড়ুন
সুন্দরবনের লবণাক্ত মাটিও ধান চাষের উপযোগী, ভরসা দিচ্ছেন বাঙালি গবেষকরাই

Powered by Froala Editor