Cannes-এর দরজা ঠেলে: ভারতের একমাত্র অফিশিয়াল মনোনয়নপ্রাপ্ত পরিচালকের সাক্ষাৎকার

ক্লাসিক বিভাগে সত্যজিৎ রায়ের 'প্রতিদ্বন্দ্বী' এবং অরবিন্দনের 'থাম্প' ছাড়া, ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূলধারায় একটাই মাত্র সমসাময়িক ভারতীয় ফিল্ম অফিশিয়াল মনোনয়ন পেয়েছে। দিল্লি নিবাসী পরিচালক শৌনক সেনের 'অল দ্যাট ব্রিদস' ডকুমেন্টারি সিনেমা স্পেশাল স্ক্রিনিং বিভাগে ২৩ মে তারিখ সালে বুনুয়েল প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দেখানো হয়। ২০১৬ সালে শৌনকের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ডকুমেন্টারি 'সিটিজ অফ স্লিপ' মুক্তি পেয়েছিল। সিনেমাটি বহু আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এবং বহুল আলোচিতও বটে। শৌনক IDFA Bertha Fund (2019), Sundance Documentary Grant (2020), Catapult Film Fund (2020) ইত্যাদির মতো একাধিক গ্রান্ট এবং ২০১৩ সালের ফিল্ম ডিভিশান অফ ইন্ডিয়ার ফেলোশিপও পেয়েছেন। কান-এর ময়দানে, শৌনকের মুখোমুখি হলেন প্রহরের প্রতিনিধি রূপক বর্ধন রায়

রূপক : সিনেমার প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আপনার সম্পর্কে দু-একটা প্রশ্ন করি। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কি কোনো রকম যোগাযোগ রয়েছে, নাকি বেড়ে ওঠা, কাজ সবটাই দিল্লিতে?

শৌনক : আমি কলকাতায় অবশ্যই গিয়েছি, কিন্তু কখনই ওখানে থাকা হয়নি।

রূপক : বাংলা সিনেমার সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন?  সমকালীন বাংলা সিনেমা ছেড়ে দিলেও, ক্লাসিক - যেমন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন এবং তাঁদের সমসাময়িক পরিচালকদের কাজ কখনও কি আপনার নিজের পরিচালনায় ছাপ ফেলেছে?

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা, আর্তি সিনেমা দেখার

শৌনক : আমি ইন্সপায়ার্ড কিনা জানতে চাইছেন? ওঁদের অবশ্যই অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। আই অ্যাম আ বিগ ফ্যান অফ রে অফকোর্স। তবে আমার বর্তমান কাজে ওদের সিনেমার কতটা প্রভাব আছে বা আদপেই আছে কিনা, তা আমার জানা নেই। আমার কাজের পূর্ববর্তী কাজ হিসাবে বোধহয় দেখা ঠিক হবে না।

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: ফরাসি সিনেমা, শিল্পীর আত্মানুসন্ধান ও অস্তিত্ব-সংকট

কানের মঞ্চে শৌনক সেন

 

আরও পড়ুন
Cannes-এর দরজা ঠেলে: বিধ্বস্ত ইউক্রেন, প্রতিবাদী ক্যামেরা ও এক আতঙ্কিত মায়ের গল্প

রূপক : আপনার আগের ডকুমেন্টারি ফিল্মটা যদিও আমার দেখা নেই, তবু জানতে ইচ্ছা করে, আপনার কাজের উপর কোন কোন পরিচালকের প্রভাব সব থেকে প্রকট?

শৌনক : আমি তো মূলত ননফিকশান সিনেমাই করেছি, রাশিয়ান পরিচালক ভিক্টর কসকভস্কি আমায় দারুণ অনুপ্রাণিত করেন। ওঁর কাজের মতো অন্য কারো কাজে আমি প্রাকৃতিক জগতের এমন সুন্দর চলচ্চিত্রায়ণ দেখিনি। সে-কারণেই আমি ওঁর সিনেমাটোগ্রাফার বেঞ্জামিন বার্নহার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বেঞ্জামিন ভারতে এসে আমার বর্তমান (All that breathes) ফিল্মটার জন্য কাজ করেছেন। সিনেমার স্ট্রাকচারের দিক থেকে জেট ফ্র‍্যাঙ্কো রসির কাজ আমায় বেশ প্রভাবিত করে। এছাড়াও রয় অ্যান্ডার্সনের সিনেমা নিয়েও আমার আগ্রহ আছে। কাজেই কসকভস্কি আর রসির প্রভাবই মূলত আমার কাজের ওপর এসে পড়ে।

রূপক ; এবারে 'অল দ্যাট ব্রিদস' সিনেমাটার কথায় আসি। দিল্লির আকাশ থেক চিলের খসে পড়া, তাদের বাঁচানোর কাজে ২/৩ জন মানুষের নিরন্তর প্রয়াস, সিনেমার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শহরের অদ্ভুত জায়গায় নানান পশু-প্রাণীদের শ্যুট করা, আবার এসবের ব্যাকগ্রাউন্ডে সিএএ/এনারসির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আন্দোলনকেও তুলে ধরছেন। সব মিলিয়ে আপনি কি আপনার শহর দিল্লি এবং সেখানকার বদলে যাওয়া দূষিত হাওয়ায় যারা নিঃশ্বাস নেয় তাদের কথাই বলতে চাননি? শেষমেশ সিনেমাটা কি কোথাও গিয়ে এক ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে আপনারই শহরের গল্প নয়? 

শৌনক : হ্যাঁ, আমি তো তাই আশা করব! ওই আলাদা-আলাদা অ্যানিম্যাল শটগুলোই তো সিনেমাটার টাইটেল। আমি দেখাতে চাইছি, 'দা ইকোলজিকাল ওয়ে অফ এনট্যাঙ্গল্ড লাইফ'। 

'অল দ্যাট ব্রিদস' চলচ্চিত্রের দৃশ্য 

 

রূপক : সেক্ষেত্রে আপনি ন্যারেটিভটাকে আবিষ্কার করলেন কীভাবে?

শৌনক : ২০১৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপের সময় থেকে পশু-পাখিদের ওপর দিল্লির বায়ুদূষণের প্রভাবের ভাবনাটা আমার মাথায় খেলতে শুরু করে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রমশ বাড়তে-থাকা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঝামেলা। আমি আসলে বাতাসের মাধ্যমে সমগ্র প্রজাতির বন্ধুত্ব আর সম্পর্কটাকে দেখাতে চাইছিলাম। সে-অনুষঙ্গেই দুই ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। ওঁদের পাখি এবং মূলত আকাশ থেকে খসে পড়া চিলদের বাঁচানোর কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে অনেকেই জানেন। 

রূপক : এই ফিল্মে ব্যবহৃত মিউজিক কোথাও গিয়ে ভারতে তৈরি সমসাময়িক ডকুমেন্টারিগুলোর থেকে একটু অন্যরকম। ব্যক্তিগতভাবে সঙ্গীত ব্যবহারের সময়গুলোয় আমার বেশ খানিকটা অস্বস্তিও হচ্ছিল। এটা কি ইচ্ছাকৃত?

শৌনক : আপনি ঠিক কেমন অস্বস্তির কথা বলছেন, একটু বুঝিয়ে বলতে পারবেন?

'অল দ্যাট ব্রিদস' চলচ্চিত্রের দৃশ্য 


রূপক : বোঝাতে পারব কিনা জানি না, তবে ধরা যাক আমার সমসাময়িক ভারতীয় ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত সঙ্গীতের তুলনায় বেশ খানিকটা অন্যরকম।

শৌনক : দেখুন, কে কীভাবে সঙ্গীত ব্যবহার করছে তার উপর ভিত্তি করে তো কাজ করা হয় না, তবে আমি মূলত দেখাতে চাইছি যে 'আ ফেয়ারিটেল হ্যাজ গন রং'। তাই এমন একটা কিছু করতে হত যাতে বিস্ময়, অতিজাগতিক ক্যারিশমা এবং আবহাওয়া তৈরি হয়। কাজেই আমি আর রজের গুলা ইলেকট্রনিক ডিসটরশান ব্যবহার করে সেই আবহাওয়াটা তৈরি করতে চেয়েছি। আমার তো ফিল্মের মিউজিক বেশ ভালোই লেগেছে। কখনও-সখনও সিনেমার সঙ্গীত, মিউজিকের জায়গায় শব্দ বা সাউন্ডের মতো শোনায়। এটা আমি বেশ উপভোগ করি। কারণ ডিসটরশান আসলে সঙ্গীত আর শব্দের মাঝামাঝি একটা ব্যাপার।

রূপক : সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি এবং ফিকশন ফিল্মের অ্যাপ্রোচ আপনার কাছে কীভাবে পাল্টায়? 'অল দ্যাট ব্রিদস' ফিকশনের আকারে বানালে কীভাবে ভাবতেন?

শৌনক : আমি এটা কখনো ফিকশন আকারে বানাতাম না।

রূপক : বেশ। কিন্তু আপনার কাছে এই দুই ধরনের কাজে ন্যারেটিভ কীভাবে ধরা দেয়?

শৌনক : আমি এখনো লম্বা ফিকশন তৈরি করিনি, কাজেই ওটা জানি না। দুটো তো পুরোপুরি অন্য জগৎ, তাই না? নন-ফিকশনের ক্ষেত্রে অ্যাক্সিডেন্ট আর কন্টিঞ্জেন্সির ধারণা খুব জরুরি। ফিকশনে গোটা নিয়ন্ত্রণটাই আপনার হাতে। এছাড়া ওই যে ধৈর্যের কথা বললাম। ডকু সিনেমা তৈরি হতে ৩-৪ বছর লাগতে পারে, সে জায়গায় ফিকশন আপনি কয়েক মাসেই বানিয়ে ফেলতে পারেন।

পরিচালক শৌনক সেন

 

রূপক : শেষ করার আগে দুটো প্রশ্ন করব। কান চলচ্চিত্র উৎসবে আমরা একেবারে ভারতের মাটিতে তৈরি হওয়া সিনেমা পাচ্ছি না কেন? আপনি আমাদের দেশেরই গল্প বলছেন, কিন্তু তার হয়ে ওঠার সঙ্গে তো আমেরিকা, ইউ-কের বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজও জড়িত!

শৌনক : আপনি কি টাকার কথা বলছেন?

রূপক : হ্যাঁ, তাও বলতে পারেন।

শৌনক ; প্রথমত তাতে কিছু যায় আসে না, আর তাছাড়া এই ভাবনাটা একটু বোরিং। পরিচালক সমভাবাপন্ন মানুষের কাছে যাবেন। আমার ডিরেক্টোরিয়াল টিমের পুরোটাই দিল্লি থেকে, এডিটর মুম্বাই-এর। যাঁদের কাজ আমার পছন্দ হয়, তাঁদের কাছে যাই। ইউ গো টু পিপল বিকজ ইউ লাভ দেয়ার আইডিয়াজ! দা ওয়ার্ক ইস ওয়াট ম্যাটার্স!

রূপক : উঠতি নন-ফিকশন পরিচালকদের কী বলতে চাইবেন?

শৌনক : নন-ফিকশনের ক্ষেত্রে আমি বলব, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাপার ধৈর্য। দ্বিতীয়ত, নতুন ব্যাকরণ খোঁজার চেষ্টা করা দরকার। গোঁড়া, ক্লান্তিকর পুরনো ভাবনা থেকে বেরিয়ে নতুন সিনেম্যাটিক ভাষা খোঁজার চেষ্টা করা দরকার। 'লুক ফর নিউ ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি ফর্মস।'

Powered by Froala Editor

More From Author See More