দ্বিতীয় পর্ব : ‘বামপন্থী হওয়ার অর্থ নিজের মূল্যবোধের প্রতি সৎ থাকা’

ড: সোমা এ চ্যাটার্জি, ভারতবর্ষের ফিল্ম সাংবাদিকতা জগতের এক বিশিষ্ট নাম। প্রায় পঞ্চাশ বছরের কর্মজীবনে সোমা দুবার জাতীয় পুরস্কারে অলংকৃত হয়েছেন। প্রথমটি ১৯৯১ সালে, পেয়েছিলেন ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ক্রিটিক’ পুরস্কার। পরবর্তী সময়ে তাঁর ‘Parama and Other Outsiders: The Cinema of Aparna Sen’ বইটির জন্য ২০০২ সালে পেয়েছেন ‘বেস্ট রাইটিং অন সিনেমা’ পুরস্কার। এখানে এই কথাও বলে রাখা প্রয়োজন যে, সোমাই একমাত্র নারী, যিনি সিনেমা সাংবাদিকতা এবং লেখনীর জন্য দুই ধরনের জাতীয় পুরস্কারেই ভূষিত হয়েছেন। 'ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস'-এর বিষয়ে সোমার পিএইচডি এবং পরবর্তীকালে পোস্টডক্টরেট রয়েছে। এছাড়া প্রমথেশ বড়ুয়া, সুচিত্রা সেন, সত্যজিতের সিনেমায় নারী চরিত্র ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একাধিক জনপ্রিয় বইয়ের লেখিকা সোমা নিজেকে 'ফেমিনিস্ট ইন থিওরি' বলতেও ভালোবাসেন।

তাঁর বড় হয়ে ওঠায় ভারতীয় সংস্কৃতি জগতের মহীরুহদের সান্নিধ্য, ৪৭ বছরের সিনেমা সাংবাদিকতার কেরিয়ার, দেশের পরিস্থিতি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি, এবং ব্যক্তিগত সৃজনশীল যাপন নিয়ে প্রহরের প্রতিনিধি রূপক বর্ধন রায়ের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন সোমা। তাঁর নিজের কথায় এ এক 'ম্যারাথন ইন্টারভিউ'। আজ দ্বিতীয় পর্ব...

(প্রথম পর্বের পর)

রূপক : আপনি তো ৪০ বছরের বেশি ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। পরিবর্তনগুলো নিজের চোখে দেখেছেন। এই যেমন এখনকার সমস্যাটা বললেন, আবার ৫০ থেকে ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি অবধি অন্য সমস্যার কথা বললেন; মাঝের সময়টায় কী দেখেছেন?

সোমা : আমার বিয়ে হয় ’৬৫তে। তো ৭৪ সাল অবধি আই ওয়াজ নাথিং। হাউস ওয়াইফ ছিলাম। আই ওয়াজ মেকিং আ ফুল অফ মাইসেলফ! আমি এরপর বম্বে চলে যাই। আই লস্ট আ চাইল্ড ইন বার্থ। ওটা খুব বড়ো শক ছিল। তাছাড়া আমার এই মেয়ের তখন তিন বছর বয়স ছিল। বাড়িতে খুব খারাপ পরিবেশ ছিল। আমি নিজে শাশুড়ির কাছে মেন্টালি টর্চার্ড হয়েছি খুব। বম্বেতে গিয়ে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু হয়।


রূপক : এই পয়েন্টাতে আমি আসতাম একটু পরে, তবে আপনি যখন প্রসঙ্গটা তললেনই তখন আপনার রাজনৈতিক দিকটা নিয়ে খানিকটা কথা বলা যাক, এবং মূলত আপনার সদ্য প্রকাশিত ‘ফিমেল গেজ’ বইটা নিয়ে। নারীবাদের প্রতি আপনার যে ইনক্লিনেশন বা ঝোঁক, তার সঙ্গে কি আপনার শ্বশুরবাড়ির এবং মূলত আপনার শ্বাশুড়ির ব্যবহার ও অত্যাচারের কোনো সংযোগ রয়েছে?

সোমা : একদম, ভেরি মাচ কানেক্টেড! আমার হাসবেন্ড খোলাখুলিভাবে আমায় তখন সাপোর্ট করতে পারেননি কারণ আমি এখন জানি যে উনি বুঝতেই পারেননি যে আই ওয়াজ বিয়িং টর্চার্ড।


রূপক : বুঝলাম। আপনি কথায় কথায় বলছিলেন যে বিয়ের আগের বম্বের সময়টায় রুইয়া কলেজে পড়াকালীন আপনি কালচারাল ডিবেট ইত্যাদিতে পার্টিসিপেট করতেন। পলিটিকালি এ্যাক্টিভ ছিলেন কি?

সোমা : নেভার! কারণ আমাদের কলেজ পলিটিকালি অ্যাক্টিভ ছিল না। কারণ সে সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন বম্বের কলেজগুলোয় ছিল না বললেই চলে। কাজেই সমাজের নানান কাজ করলেও কোনো পলিটিকাল ফ্ল্যাগ থাকত না, নট অ্যাট অল! কিন্তু আমি সেসবেও বিশেষ একটা থাকতাম না । কারণ, ইন দা ব্যাক অফ মাই হেড আমার মনে হত আই অ্যাম নট গুড ফর সোশাল ওয়ার্ক অর এ্যাকচুয়াল অ্যাক্টিভিজম! কাজেই আই অ্যাম আ ফেমিনিস্ট অনলি ইন থেওরি অ্যান্ড নট ইন অ্যাক্টিভিজম, আই প্রেফার টু ডু মাই অ্যাক্টিভিজম থ্রু মাই পেন। কারণ পৃথিবীর সর্বত্র সমস্থ নারীবাদী গ্রুপগুলোরই রাজনীতিকরণ হয়েছে কোনো-না-কোনো সময়ে। প্রত্যেকটা দলই কোনো-না-কোনো অ্যাজেন্ডার ফরে বা এগেইন্সটে গেছে। আমি সেটা চাইনি। আমি আমার অবজেক্টিভিটি ধরে রাখতে চেয়েছি।


রূপক : ‘আ ফেমিনিস্ট ওনলি ইন থিওরি’ বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?

সোমা : আমি বলতে চাইছি যে নারীবাদের নামে হাতে ফ্ল্যাগ নিয়ে মিছিলে গিয়ে চেঁচামেচি করায় আমার বিশ্বাস নেই কারণ মেন হ্যাভ বিন ভেরি গুড ইন মাই লাইফ! গোটা সমাজটাই তো পুরুষতান্ত্রিক! আমার শ্বাশুড়ি তো পুরুষ ছিলেন না— মহিলাই ছিলেন, তাই না? তাহলে উনি কেন আমায় টর্চার করছিলেন? তার কারণ উনি নিজেই পুরুষতন্ত্রের শিকার হয়ে থেকেছেন আজীবন। দেখো আমি বিশ্বাস করি যে “পাওয়ার কোরাপ্টস অ্যান্ড আবসোলিউট পাওয়ার কোরাপ্টস আবসোলিউটলি!” আমার বিশ্বাস ক্ষমতাটাই মূল ব্যাপার, সমস্যটা পুরুষ বা নারী নয়। যার হাতে ক্ষমতা সেই পুরুষতান্ত্রিক! ছেলেদের বেশি প্যাট্রিয়ার্কাল মনে হয় কারণ তারা মনে করে তাদের যৌনতা বা ‘ফ্রিডম টু হ্যাভ সেক্সের’ উপর দখলদারির অধিকার আছে। সারা পৃথিবী জুড়েই মেয়েদের সেটা নেই। কিন্তু লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলেই পুরুষতান্ত্রিক। নাহলে একজন শাশুড়ি তার বৌমাকে কেন খুন করতে যাবে বলো তো? তুমি জানো আমার বাড়িতে ফোন করা মানা ছিল? আমার মনে আছে শ্বশুরমশাই আমার শাশুড়িকে আস্তে আস্তে শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতেন, যাতে উনি এত বেশি অত্যাচার বন্ধ করেন। আমি যাতে কথাগুলো বাড়িতে জানাতে না পারি তাই এই ব্যবস্থা, কাজেই আমার শাশুড়ি জানতেন উনি কী করছেন! এবং তাও তিনি বছরের পর বছর কাজগুলো করে গেছেন।


রূপক : তখন আপনার বয়স কত?

সোমা : বাইশ-তেইশ হবে, বিয়ের পর তো। আমি তখন কলকাতায়।


রূপক : এখানে একটা প্রশ্ন আমার মনে আসছে। ’৬৫ সালের পর যে কলকাতাকে আপনি দেখলেন, তার সঙ্গে সে-সময়ের বম্বের তফাত কতখানি?

সোমা : আরে আমি তো আমার মাকে জানিয়েছিলাম যে বিয়ে করলে আমি কলকাতায় করব, কারণ আমার ধারণা ছিল কলকাতা তখন সাংস্কৃতিক ক্যাপিটাল। বম্বেতে এসব বিশেষ একটা ছিল না। আমি এখানে আসার পর বুঝেছি যে ওটা একটা স্ট্র্যাটার মানুষের জন্য সত্যি। আমার নিজের শ্বশুরবাড়ির লোকজনই নাটক, সিনেমা কোনকিছুতেই যেত না। আমার শাশুড়ি খানিকটা উত্তম কুমারের ফ্যান ছিলেন, তাছাড়া দে হ্যাড নো কালচারাল লিংক। আমি ওদের নিয়ে বইমেলায় যেতে আরম্ভ করলাম, সিনেমা-নাটক দেখাতে নিয়ে যেতাম। ব্যাপারটা এখনও তাই! এই যে আমার গোটা তিরিশেক বই, আমার বাড়ির কেউ এগুলো খুলেও দেখে না! (হাসি) তুমি খোঁজ নিয়ে দেখ, বাড়িতে-বাড়িতে একই গল্প পাবে।


রূপক : তাহলে বাঙালি বা বাংলা সংস্কৃতির উপর আপনার বিশ্বাসটা টিকে আছে কীভাবে?

সোমা : তার কারণ, পয়সা থাকলেই পৃথিবীতে সব হয়, এই কথাটায় আমি আজও বিশ্বাস করি না। আই বিলিভ ইন— ওয়াটেভার ইউ ডু ইউ শুড ডু অনেস্টলি। সত্যি কথা বলতে শুধুমাত্র আমার এই বিশ্বাস আর সততার জন্যই আজও গোটা ইন্ডাস্ট্রি আমায় লয়াল মনে করে। হ্যাঁ, আমার লেখা অনেকেরই পছন্দ হয় না, যেটা হতেই পারে। কিন্তু প্রত্যেকটা ফেস্টিভালে গিয়ে আমি দেখেছি গোটা ফ্র্যাটারনিটি আমায় যথেষ্ট ভালোবাসে। মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি দেখলে একটু লজ্জা লাগে ঠিকই, তবে ভালোও লাগে।


রূপক : আচ্ছা আপনার রাজনৈতিক ভাবধারায় আবার ফেরা যাক। আপনি…

সোমা : আমি খোলাখুলি তোমায় জানাচ্ছি, আই এ্যাম আ লেফটিস্ট!


রূপক : কেন?

সোমা : ইকোনমিক্স পড়ার সময় আমি খুব ভালো করে মার্ক্স পড়েছিলাম। এরপর আমি বুঝতে পারে যে বামপন্থী হওয়ার অর্থ নিজের মূল্যবোধের প্রতি সৎ থাকা, অ্যান্ড অলসো বিইং ভেরি অবজেক্টিভ। ধরো আমার একটা ছবি খুব খারাপ লাগল, আর ধরা যাক সেটা ডিরেক্টরের প্রথম ফিল্ম, সেক্ষেত্রে আমি পরিচালককে জানাই যে আমি তোমার ছবিটা রিভিউ করব না তবে Q&A করব। তাতে পরিচালক নিজের ছবিটা ডিফেন্ড করার একটা সুযোগ পান। আর তাছাড়া আজও একটা ছবি পুরোপুরি না দেখে রিভিউ বা Q&A কোনোটাই আমি করি না। নেভার, এভার! অনেকেই বলে, করে দিন না, দেখেননি তো কী আছে?


রূপক : বেশ, পরিষ্কার হল। কিন্তু বাংলায় না লিখে ইংরেজিকে কাজের ভাষা হিসাবে নিলেন কেন?

সোমা : তোমার এই প্রশ্নটা খুব রেলেভেন্ট। এর উত্তর দিতে গেলে আমায় খানিকটা পিছিয়ে যেতে হবে। আমার লেখালেখির জার্নিটা বম্বেতে থাকতেই খবরের কাগজের সম্পাদকদের চিঠি লেখা দিয়ে শুরু হয়েছিল, মানে বিয়ের আগে। তখন আমি মাস্টার্স করছি।


রূপক : মানে আপনি কি ‘লেটার্স টু দা এডিটর’ ধরনের কিছুর কথা বলছেন?

সোমা : ধরন নয়, লেটার্স টু দি এডিটরের কথাই বলছি। তখন আমার প্রত্যেকতা চিঠিই প্রাইজ পেত। যদিও ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে যে চিঠি লিখেছিলাম সেগুলো প্রাইজ পায়নি। তবে সেখান থেকেই আমার বিয়ের সম্বন্ধটা পাকা হয় (হাসি)।

কাজেই তখন আমি লেখালেখি করছি। আরেকটা ইন্টেরেস্টিং গল্প বলি। সেসময়ে ‘ফোরাম’ বলে একটা পলিটিকাল ম্যাগাজিন বেরোত বম্বে থেকে। মাসিক কাগজ। জোয়াকিম এ্যালভা সম্পাদনা করতেন। জোয়াকিম তখন লোকসভার মেম্বার, ওনার স্ত্রী ভায়লেট এ্যালভা রাজসভার স্পিকার ছিলেন। জোয়াকিম সম্পর্কে মার্গারেট অ্যালভার দাদু। ভেরি ফেমাস!


রূপক : আই সি!

সোমা : হ্যাঁ, যাই হোক তখন আমি হাতে লিখতাম। আমার হাতের লেখা দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন, ওদের জন্য লিখতে। আমি বললাম আপনাদের ওসব ভারতীয় আর দক্ষিণ আফ্রিকীয় পলিটিক্সের আমি কিছু জানি না, জানতেও চাই না, আমি শুমাত্র ফিল্ম নিয়ে লিখতে পারি আর সেটাই করতে চাই। সেসব শুনে উনি আমায় চিঠি লিখে ডেকে পাঠালেন, কারণ তখন আমাদের বাড়িতে ফোন ছিল না। আমি গেলাম। দেখা করে উনি আমার হাতের লেখার খুব সুখ্যাতি করে বললেন যে, “তুমি এসো, আমি তোমার জন্য একটা ফিল্ম-পাতা আরম্ভ করব।”


রূপক : বাহ!

সোমা : ইয়েস, ইন দোজ ডেজ এডিটর্স ওয়্যার ওয়ান্ডারফুল! এখনকার এডিটরদের সঙ্গে তুমি তুলনাই করতে পারবে না। এখন তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাও হ্যান নাও ত্যান নাও এইরকম অনেক কিছু ব্যাপার আছে। তাছাড়া ব্যবহার খুবই খারাপ!

যাইহোক। আমার ইউনিভার্সিটির ঠিক উলটোদিকেই ‘ফোরাম’-এর অফিসটা ছিল। আমি মাঝে মাঝে যেতাম, আর একটা রিভিউ লেখার জন্য উনি আমায় চোদ্দো টাকা দিতেন, সিনেমা দেখার টিকিটের টাকাটা আলাদা করে দিতেন। জোয়াকিম অ্যালভা আমায় খুব গাইড করেছেন। যেমন ধরো আমায় প্রথম টাইপ করা ধরিয়েছিলেন উনিই। বলতেন ডবল স্পেস হবে, সিঙ্গল পেজ হবে, ওপরে একটা স্লাগলাইন রাখবে কারণ ওই জায়গাটা থেকে দে উড রিমুভ দা স্টেপ্লারস অ্যান্ড অল। আমার বাবার কাছে একটা খুব ভালো রেমিংটন বেবি টাইপরাইটার ছিল, আমি তখন ওটায় লিখতাম। উনি আমায় বলেছিলেন যে, “ইফ ইউ কন্টিনিউ দিস সোমা ইউ উইল গো আপ ইন লাইফ!” এভাবেই বছরখানেক কাজ করে আমি ফোরাম ছেড়ে দিলাম। তারপর ফোরাম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিনা আমি জানি না। ওটাই বলতে পারো আমার প্রথম চাকরি। ইট ওয়াজ এ ভেরি গুড পেপার। ওরা ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স কভার করত, কার্টুন থাকত।


রূপক : ফোরামের পর?

সোমা : এরপর আমার বিয়ে হয়ে গেল, কলকাতা চলে এলাম; লেখা বন্ধ, নাচ বন্ধ, পড়াশোনাও বন্ধ, ভাবো কেমন দমবন্ধ অবস্থা! যদিও শ্বশুরবাড়িতে অনেক লড়াই করে আমি মাস্টার্স ডিগ্রিটা শেষ করেছিলাম। তুমি ভাবতে পারবে না আমি যেদিন হায়ার সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে পাশ করলাম সেদিন বাড়িতে কী অশান্তি, আমাদের একটা সিনেমা অবধি দেখতে যেতে দেবে না! আমি মিথ্যে বলে বোন না কার সঙ্গে একটা চলে গিয়েছিলাম! (হাসি)


রূপক : (হাসি) সে কারণেই আপনি বলতে চাইছিলেন যে ফেমিনিজমের প্রতি ইনক্লিনেশনটা আপনার এই সমস্যাগুলো থেকেই এসেছিল?

সোমা : হ্যাঁ একেবারেই তাই। উই ওয়ের নট এবল টু ওপেন আওয়ার মাউথস, জাস্ট বিকজ উই আর উওমেন!


রূপক : আপনি নিজের বাড়িতে তো দেখেননি এগুলো, সেক্ষেত্রে এটা তো আপনার জন্য একটা কালচারাল শকও বটে?

সোমা : মাঝে মাঝে মনে হত পাগল হয়ে যাব! মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে ভাবতাম লাফিয়ে সুইসাইড করব! আই ডিডন্ট হ্যাভ দ্যাট গাটস। ইট ওয়াজ এ কালচারাল অ্যান্ড ইমোশানাল অ্যান্ড সাইকোলজিকাল শক!


রূপক : জেন্ডার ইস্যু নিয়ে যখন কথা হচ্ছেই, আপনার কাছে একটা কথা জানতে চাই। আপনার ‘দা ফিমেল গেজ’ বইটার ‘অন জেন্ডার, মিডিয়া অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ প্রবন্ধটা আমার খুব ইন্টেরেস্টিং লেগেছে। সেই জায়গা থেকেই জানতে চাইছি, বাংলা তথা ভারতীয় প্রিন্ট এবং ডিজিটাল মিডিয়া কি আদৌ লিঙ্গ সচেতন হতে পেরেছে? আপনি তো এতগুলো বছর ধরে দেখছে্ন, কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েছে কি?

সোমা : প্রিন্ট মিডিয়া হ্যাজ ইভোলভড। টেলিভিশান মিডিয়া, নো! ফিল্ম মিডিয়া, অলসো নো।


রূপক : কী দেখে এটা মনে হল?

সোমা : কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার লেখাগুলোর ভাবনা। মুলত এডিটোরিয়ালের ভাবনাগুলো আমার খানিকটা প্রোগ্রেসিভ মনে হচ্ছে। আমি নিজেও আমার কম বয়সে অতটা তলিয়ে ভাবিনি। মহিলাদের সিঙ্গল প্যারেন্টহুড নিয়ে কথা হচ্ছে, গার্ডিয়ানশিপ নিয়ে। এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিমে যে আমাদের ঠকানো হয় সেসব নিয়েও কথা হচ্ছে এবং ছেলেরাও লিখছে যেটা খুব ভালো ব্যাপার। তবে সিনেমার ক্ষেত্রে, ডকুমেন্টারিজ আর অ্যান এক্সেপশান। আমি হালেই একটা দেখলাম যেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাশ্মীরে বিয়ের জন্য বউ পাচার নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ছবি হিসাবে খুব ভালো নয়, কিন্তু সাবজেক্টটা ইউনিক। এইধরনের অফবিট জেন্ডার ইস্যুজ নিয়ে ডকুমেন্টারি পরিচালক আরো রয়েছেন, আনন্দ পটবর্ধন রয়েছে, যদিও উনি আন্টি এস্টাব্লিশমেন্ট। দক্ষিণের দীপা ধনরাজ আছেন। ডকুমেন্টারি ফিল্মজ অ্যান্ড শর্টফিল্মজ আর গোইং এহেড, কোনো সন্দেহ নেই।


রূপক : সেক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গ, মানে এল-জি-বি-টি-কিউ-আই-এ+ কোথায়? আমি ২০১৯ সালে ওনাদের ফিল্ম ফেস্টটায় গিয়েছি।

সোমা : খুব জরুরি প্রশ্ন। ওরা সব সময় এক্সক্লুশানের প্রশ্ন তোলে, কিন্তু আমি যখন ওদের একটা বড়ো অনুষ্ঠানে গিয়ে ওদের সমস্ত ছবির প্যাম্ফলেট, পোস্টার চাইলাম রিভিউ করব বলে একজনও পাঠায়নি। কলকাতায় অন্তত আমার মনে হচ্ছে ওরা খুব এলিটিস্ট আর এক্সক্লুসিভ। এই ব্যাপারটা আমি অন্যদের সঙ্গে ডিসকাস করেও দেখেছি, প্রায় সকলেই এই সমস্যাটা ফেস করছেন ওঁদের নিয়ে। আমি নিজে বহুদিন ধরে এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, বার বার বলা সত্ত্বেও কোনো মেটিরিয়াল পাইনি। ওদের ফাংশান বা প্রোসেশানে তো আমাদের ডাকে না।

কাজেই আমার জন্য ইট ইজ আ ক্লোজড চ্যাপ্টার!

Powered by Froala Editor

More From Author See More