বারাণসীতে সবুজাভ গঙ্গা, বিষক্রিয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

গতবছর করোনা অতিমারীর সময় দেশজোড়া লকডাউনের কারণে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল পরিবেশ। কলকারখানা বন্ধ থাকায় সমস্ত নদীর দূষণের মাত্রা কমেছিল অনেকটাই। গঙ্গা নদীও ব্যতিক্রম নয়। তবে এবছর গঙ্গার চেহারা সম্পূর্ণ বিপরীত। অন্তত বারাণসীর বিভিন্ন ঘাট থেকে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গঙ্গার স্বচ্ছ জল হঠাৎ সবুজ হতে শুরু করেছে। আর জলের এই সবুজ রং বজায় রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন শহরের মানুষজন।

বর্ষার আগে গঙ্গার জলে নানা ধরণের শৈবাল ও লিচের বসতি বৃদ্ধি পায়। ফলে জলে হালকা সবুজ রং অস্বাভাবিক নয়। প্রথম প্রথম তেমনটাই ভেবেছিলেন বারাণসীর অধিবাসীরা। তবে ক্রমশ সবুজ রং আরও গাঢ় হয়ে উঠছে। আর এতদিন ধরে এই গঙ্গার জল আগে কখনও সবুজ হয়ে থাকেনি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। একটি দুটি নয়, অন্তত ৮৪টি ঘাট থেকে জলের সবুজ রং দেখা গিয়েছে। এমনকি যেখানে বাঁধানো ঘাট নেই, সেখানেও একই রকম সবুজ রং দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এই নিয়ে চিন্তিত গবেষকরাও।

বেনারস হিন্দু ইউনভার্সিটির গবেষক বি ডি ত্রিপাঠীর মতে জলে মাইক্রোসিস্টিক শৈবালের প্রাদুর্ভাবের ফলেই জলের রং সবুজ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, বর্ষার আগে কৃষিজমি থেকে এই ধরণের শৈবাল প্রায়ই গঙ্গায় এসে মেশে। কিন্তু জলের স্রোতে তা বেশিদিন বাঁচতে পারে না। এবারের ঘটনা তাই সত্যিই ব্যতিক্রম। এমনিতে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক না হলেও মাইক্রোসিস্টিক শৈবালের প্রভাবে জল বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

বিগত কয়েকদিন ধরে উত্তরভারতে বেশ ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর তার ফলেই আশেপাশের কৃষিজমি থেকে জল এসে মিশেছে গঙ্গায়। মূলত কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সালফার, নাইট্রেট এবং পটাশিয়ামের ফলেই এই ধরণের মাইক্রোসিস্টিক শৈবালের জন্ম হয়। দীর্ঘদিন জলের মধ্যে মিশে থাকলে তাদের শরীর থেকে একধরণের বিষাক্ত নিউরোটক্সিন নির্গত হয়। ফলে বারাণসী ঘাটের গঙ্গার জল এতদিনে যথেষ্ট বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। জলজ বাস্তুতন্ত্রের কাছে এ এক বিপদ সংকেত। তবে মানুষের এখনই ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি বলেই মনে করছেন ডঃ ত্রিপাঠী। শুধু জলে স্নান করা বা জল পান করলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। এই বিষয়ে বারাণসীর মানুষকে সচেতন থাকার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
লকডাউনে গঙ্গায় দূষকের ঘনত্বে ৫০ শতাংশ হ্রাস : কানপুর আইআইটি