ময়মনসিংহে নদীর গতিপথ আটকে অবৈধ নির্মাণ, আশঙ্কায় স্থানীয়রা

এই মানবসভ্যতাই যে অভিশাপ প্রকৃতির কাছে, তাতে সন্দেহের জায়গা নেই বিন্দুমাত্র। সম্প্রতি তা প্রমাণিত হল আরও একবার। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ডিভিশনের নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় আস্ত নদীর গতিপথকেই আটকে দিল নির্মাণকার্য। নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে ইটভাঁটার মালিকরা তৈরি করে ফেললেন লরি চলাচলের রাস্তা।

বাহাদুরকান্দা অঞ্চলে অবস্থিত এসআরএস ব্রিকস নামে ইটভাঁটার দিকেই উঠছে অভিযোগের আঙুল। উপদাখালি নদীর দুই প্রান্তে অবস্থিত বসুরা এবং শালজান অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এই রাস্তার মাধ্যমে। উদ্দেশ্য, ইট পরিবহনের দীর্ঘ পথ সংক্ষিপ্ত করে আনা। কিন্তু শুধু প্রকৃতিই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমনটা নয়। তার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব ছায়া ফেলছে স্থানীয় মানুষের জীবনেও।

গরমের সময় উবদাখালী নদীটি প্রায় শুকিয়ে যায় বললেই চলে। তবে বছরের বাকি সময়ে চাষাবাদের জন্য আঞ্চলিক মানুষকে সেচের জল সরবরাহ করে বৃষ্টির জলে পুষ্ট এই নদীটিই। স্থানীয়দের অন্যান্য ব্যবহারিক কাজের জন্য প্রাথমিক জলের উৎসও এটি। নদীর ওপরে অবস্থিত এই রাস্তার কারণেই থেমে গেছে সেই প্রবাহ। বর্তমানে অনেকটা ড্যামের মতো কাজ করছে বিভাজিত নদীটি। কাজেই অসুবিধা হচ্ছে না কারোরই। তবে গরমের মরশুম পরলেই শোচনীয় হয়ে উঠবে পরিস্থিতি।

শুধু তাই নয়, নেত্রকোণার দুর্গাপুর, সুনামগঞ্জ ধর্মপাশা উপজেলার সঙ্গে এই নদী নৌপথে জুড়ে রাখত অঞ্চলটিকে। সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সড়কপথ। তবে আগামী বর্ষার মরশুমে পরিস্থিতি হয়ে উঠতে চলেছে আরও ভয়ঙ্কর। দু’পাড়ের অঞ্চলেই প্লাবিত হওয়া এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন
বিলবোর্ড আড়ালের ‘অপরাধে’ কাটা পড়ল বটগাছ, সরব পরিবেশকর্মীরা

তবে ইটভাঁটার দুই কর্ণধারের মুখে দু’রকমের কথা। একজনের মতে, এই ব্রিজের তলা দিয়েই রয়েছে জল প্রবাহের জায়গা। অন্যজন বলছেন এই সড়কপথ স্থায়ী নয়। বর্ষার আগেই সরিয়ে ফেলা হবে এই পথটিকে। অন্যদিকে এই দ্বন্দ্বের মধ্যে আশঙ্কার জাল বুনছেন স্থানীয় মানুষেরা।

আরও পড়ুন
সংকটে রাজ্যের অধিকাংশ জলাভূমি, হারাচ্ছে বাস্তুতন্ত্রও; আশঙ্কিত পরিবেশকর্মীরা

তবে শুধু এই রাস্তা নির্মাণ নয়, একাধিক অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। সরকারি একটি স্কুলের কাছে অবস্থিত হওয়ায়, ইটভাঁটাটি সরিয়ে ফেলতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। তাতে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে তাঁরা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন কারখানা। সম্প্রতি একাধিকবার অভিযোগ দায়ের করায় নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। মোবাইল আদালতও বসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কত দ্রুত সমাধান মিলবে এই সমস্যা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি বিন্দুমাত্র…

আরও পড়ুন
প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি পরিবেশবান্ধব বাড়ি, তাক লাগাচ্ছেন মারাঠি দম্পতি

তথ্যসূত্র - River split up for brick kiln!, Md Aminul Islam, The Daily Star

আরও পড়ুন
মাশরুম দিয়ে তৈরি কংক্রিটের চেয়েও মজবুত ইট, হতে পারে প্লাস্টিকের বিকল্পও

Powered by Froala Editor