মাশরুম দিয়ে তৈরি কংক্রিটের চেয়েও মজবুত ইট, হতে পারে প্লাস্টিকের বিকল্পও

কখনো খাদ্য হিসাবে আবার কখনো চেতনানাশক ও অন্যান্য ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় ছত্রাক। আবার ছত্রাকের কিছু প্রজাতিকে কেবলমাত্র আগাছা হিসাবেই পরিগণিত হয়। তবে ছত্রাকের সাহায্যে নির্মাণকাজ করা সম্ভব, এমন ধারণা ইতিপূর্বে ছিল না মানব-সভ্যতায়। এবার তেমনটাই সম্ভব করে দেখালেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষক এবং ডিজাইনার ফিলিপ রস।

বায়োমেটেরিয়ালের মাধ্যমে গৃহসজ্জায় এর আগেও কাজ করেছেন ফিলিপ। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারও। সম্প্রতি তাঁর সেই উদ্ভাবনী তালিকাতে যুক্ত হল ‘মাশরুমের ইট’। সম্প্রতি এই আবিষ্কারের পেটেন্টও পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।

গনোডার্মা লুসিডাম বা সাধারণ কথায় রেইসি মাশরুমের সাহায্যেই এই জৈব-ইট তৈরি করেছেন ফিলিপ। মাইকোটেকচারের আয়তন ৬ বাই ৬ ইঞ্চি। বাণিজ্যিক মুক্তির আগে ইতিমধ্যেই একটি প্রমাণ আয়তনের অর্ধবৃত্তাকার খিলান তৈরি করেছেন তিনি এই ইটের ব্যবহারে। 

উল্লেখ্য রেইসি মাশরুমের দেহাংশ ব্যবহৃত হয়নি এই ইট প্রস্তুতিতে। কেবল্মাত্র মাইসেলিয়াম দিয়েই নির্মিত হয়েছে ইটগুলি। ফিলিপ জানাচ্ছেন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া তন্তুজ এই শিকড়গুলিই অবিশ্বাস্যধরণের টেকসই এবং দৃঢ়। সেইসঙ্গে জলরোধী এবং আগুন-প্রতিরোধী ক্ষমতাও রয়েছে এই ইটের। পাশাপাশি জৈববিয়োজ্য হওয়ায় এর মাধ্যমে দূষণের সম্ভাবনাও নেই কোনো।

রস জানান, প্রথমে রেইসি মাশরুমের মাইসেলিয়ামগুলি সংগ্রহ করে তার মণ্ড বানিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তারপর বাণিজ্যিক ইস্পাতের ব্লেড সেই মণ্ড কেটেই বানানো হয়েছে ইটগুলি। কাঠের মধ্যে উপস্থিত সেলুলোজগুলি যেমন রয়েছে এই ইটের মধ্যে, তেমনই রয়েছে মাশরুমের এক্সোস্কেলেটনে উপস্থিত এক ধরণের ফাইবার। যা শুকিয়ে যাওয়ার পর বেঁধে রাখে সেলুলোজের অণুগুলিকে। প্রদান করে এক নিশ্ছিদ্র দৃঢ়তা। যা পারতপক্ষে কংক্রিটের থেকেও মজবুত।

ফিলিপ রস সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জানান, এই জৈব ইটের ব্যবহার মানুষের মধ্যে প্রচলিত করতে নিজ উদ্যোগেই একটি সম্পূর্ণ বাড়ি বানানোর উদ্যোগ নেবেন তিনি। সেখানে থাকছে ১২-২০ জন মানুষের থাকার বন্দোবস্ত। পাশাপাশি কফিন, সেতু তৈরিতেও ব্যবহার করা যাবে এই ইট। অন্যদিকে অত্যন্ত হালকা হওয়ায় নৌকাও তৈরি করা যাবে এই মাশরুম থেকে। তবে শুধুমাত্র নির্মাণ কাজই নয়, প্লাস্টিক পলিমারকেও পরবর্তীকালে প্রতিস্থাপন করতে পারে এই ম্যাজিক্যাল মাশরুমের মাইসেলিয়াম। সেই দূষণমুক্ত পৃথিবী তৈরির লক্ষ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিপ রস।

আরও পড়ুন
বায়ু থেকেই সংগ্রহ করা যাবে পানীয় জল, যুগান্তকারী আবিষ্কার বাঙালি গবেষকদের

Powered by Froala Editor