লকডাউনে গঙ্গায় দূষকের ঘনত্বে ৫০ শতাংশ হ্রাস : কানপুর আইআইটি

বছর খানেক আগের কথা। মহামারীর প্রকোপে হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছিল ভারতের স্বাভাবিক জনজীবন। লকডাউনের কারণে শিল্প হোক বা পরিবহন অকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সবকিছুই। তবে সভ্যতার ওপরে নেমে আসা এই অভিশাপ আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রকৃতির কাছে। দু’দণ্ড ফুরসৎ পেয়েছিল পরিবেশ নিজেকে সুস্থ করে তোলার। তা আরও একবার প্রমাণ পেল আইআইটি কানপুরের একটি সমীক্ষায়। এই গবেষণা জানান দিল, লকডাউনে ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গঙ্গার রাসায়নিক দূষকের ঘনত্ব।

লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক পর পরই কানপুর আইআইটির গবেষকরা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান নদীগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষায় নেমেছিলেন। তার মধ্যে ছিল গঙ্গাও। ২৫ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত টানা ৫১ দিন তাঁরা নিয়মিতভাবে সংগ্রহ করেছিলেন নদীর জলের নমুনা। শুধু সংগ্রহ নয়, প্রয়াগরাজের কাছে যন্ত্রস্থাপন করে গঙ্গাস্রোতে বিভিন্ন রাসায়নিকের দৈনিক মাত্রারও তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেন গবেষকরা।

সেই তথ্যের বিশ্লেষণ করেই প্রকাশিত হয়েছে এই রিপোর্ট। তাতে স্পষ্ট, কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রতিদিনই উত্তরোত্তর হ্রাস পেয়েছে নদীতে রাসায়নিকের ঘনত্ব। যার মধ্যে রয়েছে মূলত শিল্প স্রাব-জাত বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতব আয়নগুলি। নদীর মূল দূষক হিসাবেই চিহ্নিত করা হয় যাদের। তবে শিল্পজাত দূষক কমলেও নাইট্রেট ও ফসফেটের মতো কৃষিজ ও গার্হস্থ্য দূষকের উপস্থিতির খুব একটা ফারাক হয়নি। তবে তাতেও মোট দূষণ নেমে এসেছিল অর্ধেকে।

পাশাপাশি এই সমীক্ষা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় আরও একটি বিষয়। ভারতে খাতায় কলমে আইন রয়েছে, তরল শিল্পজাত বর্জ্যের পরিশোধন না করে নদীতে নিক্ষেপ করা অপরাধ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হয় না সেই পরিশোধনের প্রক্রিয়া, তা প্রমাণিত হল সমীক্ষায়। তা যদি সত্যিই হয়ে থাকত, তবে দূষকের মাত্রায় হঠাৎ এত বড়ো মাপের তারতম্য চোখে পড়ত না। 

আরও পড়ুন
দূষণমুক্ত বায়ুই বাড়িয়ে তুলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

কানপুরের গবেষকরা জানাচ্ছেন, গঙ্গার উপত্যকায় বর্তমানে রয়েছে ৭৬৪টি কারখানা। তার ৯০ শতাংশই উত্তরপ্রদেশের। যার মধ্যে রয়েছে ট্যানারি, বস্ত্র শিল্প, চিনি, কাগজ ও অন্যান্য কারখানা। আর শুধু এই রাজ্য থেকেই উৎপন্ন হয় ৫৪ শতাংশ গঙ্গাদূষক। যা ভারতের অন্যান্য যে কোনো রাজ্যের গড় দূষকের থেকে বহু পরিমাণ বেশি। প্রতিদিন গঙ্গাবক্ষে নিক্ষিপ্ত সেই দূষিত জলের পরিমাণ প্রায় ২৭ কোটি লিটার।

আরও পড়ুন
কলকাতা থেকে রিকশায় লাদাখ, দূষণমুক্ত পৃথিবীর লক্ষ্যে বিচিত্র অভিযান সত্যেন দাসের

লকডাউনে এই বিপুল পরিমাণ দূষণের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বদলে গিয়েছে গঙ্গার জলের রং-ও। এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কতদিন টিকে থাকবে গঙ্গার এই স্বাস্থ্য, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই কেটে গেছে সব শিথিলতা। পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে দেশের সমস্ত শিল্পাঞ্চলে। কাজেই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে পুনরায় এই পরীক্ষা করলে ফলাফল যে আশাপ্রদ আসবে না, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor