দূষণমুক্ত বায়ুই বাড়িয়ে তুলেছে পৃথিবীর উষ্ণতা, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনে প্রথম ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। তারপর সারা বিশ্ব জুড়েই প্রকোপ দেখা গেছে তার। উপায়ন্তর না দেখে প্রায় সব দেশই বেছে নিয়েছে লকডাউনের পথ। দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়েছে কল-কারখানা, কমেছে যানবাহনের পরিমাণও। এককথায়, পৃথিবী থেকে একধাক্কায় কমে এসেছে দূষণ। যা পরিশুদ্ধ করে তুলেছিল বায়ুর গুণমান, বাড়িয়েছিল দৃশ্যমানতাকেও। তবে এবার একেবারে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো তথ্যই সামনে আনল রিপোর্ট। দূষণ হ্রাসই নাকি মূলত দায়ী পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য!

শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই? না হওয়ারই কথা। তবে নতুন সমীক্ষায় এমনটাই প্রমাণিত করলেন বিজ্ঞানীরা। শুধুমাত্র পরিষ্কার বাতাসের কারণেই পৃথিবীর উষ্ণতা স্বাভাবিকের থেকে বেড়েছে প্রায় ০.৩ থেকে ০.৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চিন, পূর্ব আমেরিকা এবং রাশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে স্বল্প সময়ের জন্য সম্প্রতি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবেই বাড়তে দেখা গেল উষ্ণতা। 

কিন্তু দূষণমুক্ত বায়ু কীভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা? গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দূষিত বায়ুতে পাওয়া যায় সট এবং সালফেট কণার উপস্থিতি। যা পারতপক্ষে সূর্যের তাপকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দিতে সাহায্য করে। যার কারণে ঠান্ডা থাকে পরিবেশ। দূষণ হ্রাস পাওয়ার ফলে কমেছে এ এয়ারোসলগুলি। এবং তাদের অনুপস্থিতিই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উষ্ণতা বৃদ্ধির। ফলে পরিবেশে পর্যাপ্ত শীতলীকরণ হচ্ছে না।

গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিরিক রিসার্চের মেসা ল্যাবরেটরির একদল বিজ্ঞানী। প্রধান গবেষক অ্যান্ড্রু গেটেলম্যান জানান, ২০২০ সালের আনুমানিক জলবায়ুর জন্য কম্পিউটারে তৈরি বিশেষ মডেলের সঙ্গে লকডাউন চলাকালীন সময়ের তথ্য মিলিয়ে অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন তাঁরা। তারপর বায়ুর গুণমান ও অন্যান্য চলগুলির বিশ্লেষণ করতেই প্রকাশ্যে আসে এই তথ্য।

তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন এই প্রভাব অস্থায়ী। এয়ারোসলের জন্য উষ্ণতা বাড়লেও তা স্থায়ী হয় মাত্র কয়েক সপ্তাহ। তবে কার্বন নির্গমন স্থায়ী প্রভাব ফেলে পৃথিবীর উষ্ণতায়। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড অনেক বেশি ক্ষতিকর এই প্রভাবের থেকে। পাশাপাশি এই ধরণের এয়ারোসলগুলির উপস্থিতি প্রাণঘাতী পর্যন্ত হয়ে ওঠে অনেকক্ষেত্রেই। সেদিক থেকে বিচার করলে এই প্রভাব যে বিরাট আশঙ্কার, তেমনটা নয়। তবে কতদিন স্থায়ী হয় এই প্রভাব, তা-ই এখন দেখার। দেখার ২০২০-র রেকর্ডকে চলতি বছর ছাপিয়ে যাবে নাকি খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে তাপমাত্রাবৃদ্ধির হার…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মানুষের তৈরি সূর্য! ২০ সেকেন্ড ধরে ১০০ মিলিয়ন কেলভিন উষ্ণতায় জ্বলল কৃত্রিম নক্ষত্র