পৃথিবীর ইতিহাসে ১০টি মজার পুলিশ ফাইলের গল্প

/১০

খুন, জখম, রাহাজানি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অন্তর্দ্বন্দ্ব কিংবা মাদকচক্র— এসবই ভুরি ভুরি জগতের কাজের লিখিত দলিল সেই খাতা। কথা হচ্ছে পুলিশ ফাইল নিয়ে। কিন্তু পুলিশ ফাইল বলতে যে শুধুই এমন গুরুগম্ভীর বিষয়ের জায়গা, তেমনটা একেবারেই নয়। বরং মাঝেমধ্যেই সেখানে জমা পড়ে আশ্চর্যকর কিছু নালিশ। যা হাসিয়ে ‘খুন’ করতে পারে যে কাউকেই। স্বয়ং পুলিশকর্তারাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের সামনে এনেছেন সেইসব ঘটনার বিবরণ। দেখে নেওয়া যাক এমনই দশটি মজাদার পুলিশ ফাইলের গল্প…

/১০

মিশিগানের গ্র্যান্ড র‍্যাপিড সিটি। সেখানেরই এক বাসিন্দা বছর পাঁচেক আগে থানায় গিয়ে নালিশ জমা করে আসেন। অভিযোগ ছিল তাঁর বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে কেউ রেফ্রিজারেটার থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে ৫ পাউন্ড মাংস। পরবর্তীকালে পুলিশ অনুসন্ধানে উঠে আসে, মধ্যরাতে খিদে পাওয়ায় ওই ব্যক্তির স্ত্রী একাই শেষ করেছিলেন ৫ পাউন্ড খাবার। তবে লজ্জায় তা স্বীকার করেননি প্রাথমিকভাবে।

/১০

এই গল্প যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ অ্যাভিনিউয়ের। অভিযোগকারী এক মহিলা। সরাসরি থানায় গিয়েই পুলিশের খাতায় অভিযোগ লিখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শুনলে অবাক হয়ে যেতেই হয় সেই অভিযোগ। বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁর প্রেমিকাকে তিনি অনুরোধ করছিলেন একটি ক্যাসেরোল পাত্র কিনে এনে দিতে। তবে প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। শেষে ধৈর্য হারিয়ে পুলিশের হাতেই ‘বয়ফ্রেন্ড’কে ধরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মার্কিন মহিলা।

/১০

৭ বছর আগের ঘটনা। ছুটির দিন কাটাতে মাকে নিয়ে কাছেই ঘুরতে গিয়েছিলেন ওহিও-র সাউথ ফিফথ স্ট্রিটের এক যুবক। নিজের ছোট্ট একটি ট্রাক চালিয়েই দিব্যি ঘুরে এসেছিলেন দু’জনে। তবে বাড়ি ফিরেই বাঁধল সমস্যা। ট্রাকের পিছনের ডালা খুলে লাগেজ নামাতে গিয়ে বেরিয়ে এল একটি জ্যান্ত মুরগি। যুবকটি শান্ত থাকলেও, মুরগির উপস্থিতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল ওই ভেগান মহিলাকে। পুলিশের কাছে গিয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন কেউ জেনে-বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে এই মুরগি পুরে দিয়েছে ট্রাকের পিছনের ক্যাবিনেটে।

/১০

পরের গল্প অ্যাশল্যান্ডের লিথিয়া পার্কের। তবে এই ঘটনায় শুধু অভিযোগকারীর কাণ্ড দেখেই হাসি পাবে না, বরং পুলিশের রসিকতাও দেখার মতোই। এক ব্যক্তি থানায় এসে ফাইল করে যান একটি কেস। তাঁর প্রতিবেশীর দুই কুকুর নাকি ছাড়া পাওয়ার পর তাড়া করে বেড়াচ্ছে বুনো হাঁসেদের। ‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ বলে জানানোর পরেও বার বার থানায় ফোন করতে থাকেন ওই ব্যক্তি। তারপর স্বয়ং ইন-চার্জ পাল্টা রিপোর্ট লিখে তার স্ক্যান কপি পাঠান ওই ব্যক্তিকে। “আমরা উদ্ধার করেছি দুটি হাঁসকে। তবে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিতে চাইলে প্রত্যাখ্যান করে পুকুরে নেমে গেছে তারা।” এমনই ছিল সেই রিপোর্টের বয়ান।

/১০

এবার ফিনল্যান্ডের এক ঘটনায় আসা যাক। হেলসিঙ্কি শহরের মার্কেট স্কোয়ার। সেখানেই কেনাকাটা করতে গিয়ে রাস্তায় এক অদ্ভুত কয়েন দেখতে পান এক তরুণ। এমন দেখতে কয়েন এর আগে কখনোই দেখেননি তিনি। অথচ তাতে ছাপা রয়েছে ফিনল্যান্ডের সরকারি ছাপ। তবে কি কোনো সন্ত্রাসবাদীদের চক্রান্ত? আঙুল দিয়ে স্পর্শ না করে, অতি সন্তর্পণে তা রুমালে মুড়ে তিনি হাজির হন খোদ পুলিশের কাছে। ডায়েরি লেখাতে চান রহস্যময় সেই কয়েন নিয়ে। কিন্তু কয়েনটি দেখেই হেসে ফেলেন পুলিশের আধিকারিকরা। সেই কয়েন মূলত ফিনিস মার্ক্কার এক চতুর্থাংশ। আমাদের ভাষায় পঁচিশ পয়সা বলতে যা বুঝি তাই। তিন দশক আগে ফিনল্যান্ডে এই কয়েন বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই তা চিনতে পারেননি ওই তরুণ।

/১০

ধরুন ক্রমাগত যদি আপনাকে কেউ ফলো করে যায়, তবে একটা সময় পরে তো ভয় লাগারই কথা। এই ঘটনা অনেকটা তেমনই। বারান্দায় বেরোলে বা জানলা খুললেই দেখা যেত রাস্তার উল্টোদিকের ফ্ল্যাট থেকে কেউ যেন চালাচ্ছে নজরদারি। জানলার সামনে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। হাতে কি বন্দুকও রয়েছে তাঁর একটা? সুযোগ খুঁজছেন শুধু চালানোর? দু-তিন দিন এভাবে কাটার পরেই পুলিশের কাছে দ্বারস্থ হন লন্ডনের হ্যানসন স্ট্রিটের এক বাসিন্দা। ফ্ল্যাটে চড়াও হয় পুলিশও। তবে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় জানলার সামনে রাখা অভিনেতা আর্নল্ড সোয়ার্জেনেগারের একটি কার্ডবোর্ড কাট-আউট। তবে হাতের বন্দুকটির ব্যাপারে একারে সঠিক অনুমানই করেছিলেন তিনি!

/১০

হত্যাকাণ্ড একপ্রকার দৈনন্দিনের ঘটনা মেক্সিকোয়। রোজই মেক্সিকোর কোনো না কোনো প্রান্তে লিখিত হয় খুনের পুলিশি মামলা। অভিযুক্তরা ধরা পড়লে শাস্তিও হয় বেশ কড়া। কিন্তু কোনোভাবেই কি পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না খুন করে? ‘আইনি পদ্ধতি’তে খুন করার প্রক্রিয়া জানতেই তাই থানায় হাজির হয়েছিলেন সোনোরা শহরের এক ব্যক্তি। প্রতিবেশীর থেকে ক্রমাগত অপমানিত হয়ে ধৈর্য হারিয়ে তাঁকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শাস্তির ভয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছেই ‘খুন’ করার পরামর্শ নিতে যাওয়া? যাই হোক সে যাত্রায় সেই দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি করেছিলেন তদন্তকারীরাই।

/১০

খোদ লন্ডনের ব্যাঙ্ক স্ট্রিট। বহুতল এক বাড়ির পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। ঘড়িতে তখন সন্ধে সোয়া সাতটা। হঠাৎ করেই বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসে এক যুবতীর কণ্ঠ। ‘হেল্প… হেল্প…’। খানিক দুরেই ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক সার্জেন। তৎক্ষণাৎ সেই সার্জেনকে ডেকে আনেন তিনি। দরজায় দু-তিন বার ধাক্কা মারার পরেই বেরিয়ে আসেন সেই তরুণী। কিন্তু পুলিশ দেখে অবাক তিনি নিজেই। শেষ অবধি জানা গেল, সত্যি কোনো সাহায্য চাইছিলেন না তিনি। আসলে তাঁর পোষ্য মার্জারের নাম ‘হেল্প’!

১০/১০

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা প্রদেশ। দিনটা ছিল ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর। পুলিশের খাতায় ডায়েরি করে আসেন যুবতী। দাবি, তাঁর ডাকবাক্স থেকে কেউ হাপিস করে দিচ্ছে সমস্ত চিঠিপত্র। অভিযোগ শুনে বেশ খানিকটা ঘাবড়েও যায় পুলিশ। এতকিছু থাকতে শেষে চিঠি চুরি? শেষে জানা যায়, সেদিন সেই যুবতীর জন্মদিন। তবে একটিও কার্ড পাননি তিনি। তিনি যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন প্রতি বছরের মতোই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাবেন তাঁর বন্ধুস্থানীয় এবং আত্মীয়রা। তবে পারতপক্ষে সে-বছর কার্ড পাঠাতে ভুলে গেছিলেন সকলেই…

Powered by Froala Editor