মহাকাশে পাড়ি দেওয়া প্রথম বিড়াল ‘ফেলিসেট’, রয়ে গেল বিস্মৃতির অতলেই

আজকের যুগে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সীমা অতিক্রম করে মানুষ পৌঁছে গেছে মহাকাশেও। শক্তিশালী দূরবিন খুঁজে নিচ্ছে ব্ল্যাক হোলের ঠিকানা। আর অদ্ভুত ব্যাপার, এই চিত্রনাট্যের সঙ্গে একা মানুষই জড়িয়ে নেই। বরং আমাদেরও আগে মহাকাশের অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রাণীদের। সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মনে পড়বে লাইকা কুকুরের কথা। কিংবা মাথায় আসবে হ্যাম শিম্পাঞ্জিকে। আর এই তালিকার তৃতীয় প্রাণীটি? না, তার কথা খুব একটা শোনা যায় না। আসুন, পরিচয় করা যাক ‘ফেলিসেট দ্য ক্যাট’ সঙ্গে…

১৯৬৩ সাল। ফ্রান্সের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ পরিকল্পনা করা হল। কয়েক বছর আগেই লাইকা (কুকুর), হ্যাম, এনোজের (শিম্পাঞ্জি) মতো প্রাণীরা মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছে। এবার ফ্রান্সের পালা। তাঁরাও চায় মহাকাশে মানুষকে পাঠাতে। তার আগে অন্য প্রাণীকেও তো পাঠিয়ে দেখতে হবে! ঠিক করা হল, এই পরিকল্পনার মূল ভিত্তি হবে বিড়াল। তাদেরকেই পাঠানো হবে মহাকাশে; এবং দেখা হবে তাদের যাবতীয় ব্যাপার… 

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। ১৪টি বিড়ালকে বাছা হল এই পরিকল্পনায়। এদেরই অন্যতম ছিল ফেলিসেট। সবাইকেই চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে করা হয়েছিল আরও একটি কাজ। অপারেশন করে প্রত্যেকটি বিড়ালের মস্তিস্কের সঙ্গে একটা করে ইলেকট্রড বসিয়ে দেওয়া হয়। কেন এমন? যাতে মহাকাশে গেলে প্রাণীদের শরীর ও স্নায়ুর ওপর কেমন প্রভাব পড়ে সেটা পরিমাপ করা যায়, তথ্য রাখা যায়। 

এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন কিছু বিড়াল অসুস্থ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যাবতীয় পরীক্ষায় পাশ করে ফেলিসেট। বিড়ালের স্বভাব তো আমাদের সবারই জানা। বড়োই চঞ্চল প্রাণী। কিন্তু ফেলিসেট বাকিদের থেকে বেশ কিছুটা শান্তই ছিল। আর এটাই বাড়তি গুণ হয়ে দাঁড়াল। 

১৯৬৩ সাল। দিনটি ছিল ১৮ অক্টোবর। আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে প্রস্তুত হচ্ছে সি-৩৪১ মহাকাশযানটি। অন্যদিকে প্রস্তুত হয়েই ছিল ফেলিসেট বিড়ালটি। সমস্ত প্রযুক্তিগত কাজ শেষ করার পর শুরু হল প্রহর গোনার মুহূর্ত। একসময় রকেটটি রওনা দিল মহাকাশে। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার নির্বিঘ্নে ফিরেও এল। কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না, কিছুই হল না। দেখা গেল, ফেলিসেটও অক্ষত; এবং জীবিত! ইলেকট্রড থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হল। তৈরি হল একটি ইতিহাস। এই প্রথম কোনো বিড়াল মহাকাশের ভ্রমণ সেরে ফিরে এল। ফ্রান্স এরপর আরও একটি বিড়ালকে পাঠিয়েছিল; কিন্তু সেই মহাকাশযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। সেইদিক থেকে দেখলে ফেলিসেট এখনও অবধি একমাত্র বিড়াল, যে মহাকাশ ভ্রমণ করে সুস্থভাবে ফিরে এসেছিল। 

কিন্তু বাকিদের তুলনায় অনেক কম জনপ্রিয় সে। তার জন্যই মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকা ও রাশিয়ার পাশে উঠে এল ফ্রান্স। লাইকা বা হ্যামের নাম জানে গোটা দুনিয়া; সেখানে ফেলিসেটের অস্তিত্ব কোথায়? প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর এই কথাটাই মনে হয়েছিল একদল মানুষের। ম্যাথিউ সার্জ নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে নামা হয়। এবং ২০১৯ সালে এসে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয় ফেলিসেট বিড়ালের মূর্তি। মহাকাশ গবেষণায় তার অবদানও যে নেহাত কম নয়!   

আরও পড়ুন
গুনগুন করে সুর ভেঁজে চলেছে মহাকাশ, ধরা পড়ল ন্যানোগ্রেভের রাডারে

Powered by Froala Editor