প্রায় ১০০ শতাংশ স্বচ্ছ দেহ! শিকারি প্রাণীদের থেকে বাঁচার অদ্ভুত উপায় চিংড়ির

গবেষকদের মতে, বিশ্বে প্রায় ৮৭ লক্ষ প্রজাতির জীবের বসবাস। যার মধ্যে কেবলমাত্র ১২ লক্ষ প্রজাতিকে শনাক্ত করতে পেরেছে বিজ্ঞান। বিশেষত, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের প্রায় ৯১ শতাংশ প্রাণীই এখনও পর্যন্ত মানুষের অজানা। সেই বাস্তুতন্ত্রও স্থলচর প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্রের থেকে ঢের রহস্যময়। সম্প্রতি গভীর সমুদ্রে তেমনই এক অদ্ভুত-দর্শন প্রাণীর সন্ধান পেলেন গবেষকরা।

অবশ্য অদ্ভুত-দর্শন বলা হলেও, মানুষের সাধারণ চোখ তার উপস্থিতি দেখতে সক্ষম নয়। সিস্টিসোমা (Cistysoma)। এই বিশেষ চিংড়ি (Shrimp) প্রজাতির দেহ প্রায় ১০০ শতাংশই স্বচ্ছ। অর্থাৎ, সেখানে আলো প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ নেই কোনো। ফলে কার্যত সমুদ্রের জলে অদৃশ্য হয়েই মিশে থাকে এই প্রাণীটি। 

মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের ২০০ থেকে ৯০০ মিটার গভীরে বসবাস করে এই সিস্টিসোমা। অন্যান্য চিংড়ি কিংবা শামুক প্রজাতির মতো সমুদ্রতলেই কেবলমাত্র বসবাস নয় এদের। বরং, সমুদ্রের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সাঁতার কেটে বেড়ায় এই প্রাণী। কাজেই বড়ো শিকারি প্রাণীদের থেকে বাঁচতে কোনো পাথুরে খাঁজে আড়াল নেওয়ার সুযোগ নেই তাদের। আর সেই কারণেই জলের মধ্যে কেমোফ্লাজ বা আত্মগোপন করার জন্যই এই অভিযোজন। 

তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও সমুদ্রের তলায় বহু স্বচ্ছ প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য সম্পূর্ণ দেহ স্বচ্ছ ছিল না কোনোক্ষেত্রেই। বিশেষত, কোনো প্রাণীর চোখ স্বচ্ছ হতে পারে, তা গবেষকদের ধারণার বাইরে ছিল এতদিন। কারণ, যেকোনো প্রাণীর রেটিনাই আলোকতরঙ্গকে শোষণ করার জন্য সাধারণত কালো হয়ে থাকে। দেহ স্বচ্ছ হলেও চোখের এই অংশটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান হয়ে থাকে। তবে সিস্টিসোমার ক্ষেত্রে চোখের রেটিনা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং, বিন্দুর আকৃতির অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিগমেন্ট দিয়ে তা তৈরি। বলতে গেলে, মস্তিষ্কের উপরিতলের প্রায় সমস্ত অঞ্চল জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে তার চোখ। সেখান থেকে সামান্য পরিমাণ আলো প্রতিফলিত হলেও, শিকারিদের চোখে তা ধরা পড়ে না। এমনটাই জানাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্যারেন ওসবর্ন।

আরও পড়ুন
এশিয়াটিক চিতার পর ভারতীয় ধূসর নেকড়ে, অবলুপ্তির প্রমাদ গুনছে প্রাচীনতম প্রজাতি

প্রশ্ন থেকে যায়, তবে নিজেরাও নিজেদের দেখতে পায় না সিস্টিসোমারা? তবে কীভাবে তারা যোগাযোগ করে নিজেদের মধ্যে? গবেষকদের অনুমান, এক্ষেত্রে অ্যান্টেনাই পথ দেখায় তাদের। মেটিং বা প্রজননের আগে এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ করে এই প্রাণী। সেই রাসায়নিকের গন্ধ পেয়েই বিপরীয় লিঙ্গের সঙ্গীরা এসে হাজির হয় তাদের কাছে। আক্ষরিক অর্থেই এক রহস্যময় জীবনযাপন করে এই প্রাণী, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

আরও পড়ুন
দিঘা এবং কেরলে আবিষ্কৃত হল নতুন প্রজাতির ঈল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মানুষ ছাড়াও হাসতে অভ্যস্ত ৬৫টি প্রজাতির প্রাণী! জানাচ্ছে গবেষণা

More From Author See More

Latest News See More