আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রে মিশছে বিদেশি প্রজাতি, বাসা বাঁধছে কাঁকড়া এবং ঝিনুকও

প্রতিটা এলাকার নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র থাকে। আর সেই বাস্তুতন্ত্রে যখন বাইরে থেকে কোনো প্রজাতি ঢুকে পড়ে, তখন তা এক ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। হয় সেই বাইরের প্রজাতির জীবটি নতুন পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না, নয়তো গোটা বাস্তুতন্ত্রটাই বদলে দেয় সে। পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশেই নানা সময়ে এই সমস্যা ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। আর সম্প্রতি আন্টার্কটিকার বুকেও প্রবেশ করতে শুরু করেছে বাইরের পৃথিবীর প্রজাতিরা (Foreign Species)। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আন্টার্কটিকার (Antarctica) সমুদ্রে দেখা মিলেছে ৫টি পৃথক প্রজাতির ঝিনুক এবং কাঁকড়ার। আর এগুলি প্রতিটাই আটল্যান্টিক মহাসাগর থেকে বিভিন্ন জাহাজের সঙ্গে প্রবেশ করেছে বলে অনুমান গবেষকদের।

‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষক আরলি ম্যাককার্থি এবং তাঁর সহযযোগীদের গবেষণাপত্র। গবেষকদের মতে, কেবল এই পাঁচটি প্রজাতি নয়। আন্টার্কটিকাগামী জাহাজের সঙ্গে আরও নানা প্রজাতির প্রাণীই পৌঁছেছে আন্টর্কটিকায়। কিন্তু সেখানকার প্রতিকূল জলবায়ুতে টিকে থাকতে পারেনি। তবে সম্প্রতি যে পরিমাণে জাহাজ আন্টার্কটিকার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছে, তাতে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ থেকেই যায়। ৫০ বছর আগেও যেখানে বছরে ১০-২০টি জাহাজ ভিড়ত, এখন সংখ্যাটা বছরে প্রায় ২০০ ছুঁয়েছে। আর এর মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ পর্যটক। ফলে আরও বেশি আশঙ্কা থেকে যায়। গবেষণার কারণে যে বিজ্ঞানীরা যান, তাঁরা আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে সচেতন। কিন্তু পর্যটক এবং অভিযাত্রীদের এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি আজও।

অবশ্য আজও আন্টার্কটিকায় মাত্র দুটি অংশেই মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। আন্টার্কটিক পেনিনসুলা এবং সাউথ সেটল্যান্ড দ্বীপ। এই দুই জায়গাতেই তাই বিদেশি প্রজাতির আগমনের সম্ভাবনা বেশি। তবে একবার বাসা বাঁধতে পারলে সেখান থেকে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা। ঝিনুক এবং কাঁকড়ার পাশাপাশি স্টারফিস, জেলিফিস জাতীয় প্রাণীও ভিড় জমাতে পারে আন্টার্কটিকায়। সামুদ্রিক পরিবেশে ঝিনুক বাসা বাঁধলে অন্যান্য প্রাণীদের আসার রাস্তাও খুলে যায়। আর কাঁকড়ার মতো শিকারী প্রাণীর সঙ্গে আন্টার্কটিকার প্রাণীরা পরিচিত নয়। তাই বাস্তুতন্ত্রের প্রভূত ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়। আন্টার্কটিকার মতো প্রতিকূল পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য একবার নষ্ট হলে তাকে উদ্ধার করা রীতিমতো কঠিন। এর মধ্যে বাড়তি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। তবে একটু সচেতন হলেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। শুধু আন্টার্কটিকার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে সমস্ত জাহাজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলেই আর ভয় থাকে না। পৃথিবীর সমস্ত দেশের কাছে এই সংক্রান্ত আইন তৈরির আবেদনও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

Powered by Froala Editor

Latest News See More