৮১ বছর পর বাড়ি ‘ফিরলেন’ পার্ল হারবারে নিহত সৈনিক

আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই ছিল দিনটা। সমুদ্রে রুটিন প্যাট্রোলিং-এ যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল মার্কিন রণতরী ওকলাহোমা। ডেকের ওপর যুদ্ধাভ্যাস করছিলেন একদল সেনা। কেউ আবার জাহাজের ভিতরে মিলিয়ে নিচ্ছিলেন খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রয়েছে কিনা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডুবে গেল প্রকাণ্ড রণতরী।

আজ থেকে প্রায় ৮১ বছর আগের কথা। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৭টা বেজে ৫৫ মিনিট। জাপানি বোমারু বিমান এবং সাবমেরিনের আকস্মিক আক্রমণে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নৌসেনা ঘাঁটি পার্ল হারবার (Pearl Harbor)। শুধুমাত্র ওকলাহোমা জাহাজটিতেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৫০ জন। সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৪০০-রও বেশি। 

এই জাহাজেই কর্মরত ছিলেন ২১ বছর বয়সি বার্ট জ্যাকবসন (Bert Jacobson)। জাহাজ-ডুবির পর নিখোঁজ হয়ে যান তিনিও। আক্রমণের ২ বছর পর সমুদ্রের তলদেশ থেকে বেশ কিছু মানুষের দেহাংশ উদ্ধার হলেও, চিহ্নিত করা যায়নি তাঁদের। যথাযথ সম্মান দিয়েই তাঁদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল নিকটবর্তী কবরস্থানে। অন্যদিনে পার্ল হারবার থেকে নিখোঁজ হওয়া সমস্ত সেনাদের মৃত বলে ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

তবে মায়ের মন কি এত সহজে মেনে নেয় সবকিছু? বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও সন্তানের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতেন তাঁর মা। একাধিকবার সেনার অধিদপ্তরেও সন্তানের খোঁজে দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বাস ছিল, একদিন ঘরে ফিরবে তাঁর সন্তান। তাঁর মৃত্যুর পর, দেহ চিহ্নিতকরনের জন্য প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছিল বার্টের পরিবার। তাতে সাড়া যে মেলেনি, তেমনটা নয়। 

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে সমাধিস্থ সৈনিকদের দেহাংশ পরীক্ষা করে একাধিকবার সনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন মার্কিন গবেষকরা। ২০০৫ সালে সংগ্রহ করা হয়েছিল তাঁদের দাঁতের নমুনাও। তবে লাভ হয়নি কোনো। এক যুগ পর এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তাঁদের দেহ চিহ্নিত করলেন গবেষকরা। 

দীর্ঘ ৮১ বছর পর বাড়ি ফিরলেন বিশ্বযুদ্ধে প্রয়াত ২১ বছর বয়সি তরুণ। অবশ্য ‘দেহ’ না বলে তাঁকে দেহাংশ বলাই ভালো। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল বার্টের শরীর। উদ্ধারের সময় অনুপস্থিত ছিল দেহের কিছু অঙ্গও। চিহ্নিত করার পর, পার্ল হারবারের সেনা-সমাধিক্ষেত্র থেকে তাঁর দেহাংশ পাঠানো হয় তাঁর ভার্জিনিয়ার বাড়িতে। গত মঙ্গলবার পরিবারের উপস্থিতিতে আর্লিংটন ন্যাশনাল সেমেটারিতে সমাধিস্থ করা হয় তাঁর কফিন। ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে বিশ্বযুদ্ধের। কিন্তু আজও হাজার হাজার মানুষ সেই ধ্বংসলীলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল এই ঘটনা… 

Powered by Froala Editor