পোলিও নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাঙালি বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা

পোলিও, একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। বিগত বেশ কিছু দশক জুড়ে পৃথিবীর নানা দেশে আতঙ্ক জারি রেখেছে এই রোগ, আক্রান্ত হয়েছে কয়েক লক্ষ শিশু। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আন্তর্জাতিক স্তরে নানা কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে আজও মূর্তিমান বিভীষিকা পোলিও। তবে পৃথিবীজুড়ে এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে এবার হাল ধরছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী। সেঁজুতি সাহা, বাংলাদেশের অণুজীব বিশেষজ্ঞ। এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ পদে দেখতে পাওয়া যাবে তাঁকে।

বাবা ডা. সমীর সাহার পরিবারে সেঁজুতি ছোট থেকেই শুনে আসছেন বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন রোগের মারাত্মক প্রভাব বিস্তারের কথা। এইসব শুনতে শুনতে নিজেই নিজের ভবিষ্যত ঠিক করে নিয়েছিলেন সেঁজুতি। ২০১৬ সালে পিএইচডি শেষ করার পর তাই চিকিৎসার কাজেই আত্মনিয়োগ করলেন সেঁজুতি। ডা. সমীর সাহার সহযোগিতায় তৈরি করলেন চাইন্ড হেল্থ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। ২০১৭ সালে যখন বাংলাদেশের বহু শিশু হঠাৎ মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে থাকে, তখন রাস্তায় নেমে কাজ করে দেখিয়েছিল এই সংস্থা। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে সেঁজুতির লেখা একাধিক গবেষণাপত্র দেশবিদেশে সমাদৃত। ইতিমধ্যেই একেকটি গবেষণাপত্র ২০০টির মতো সাইটেশন পেয়েছে।

তবে এবারের উদ্যোগ আর তেমন ছোটো পরিসরে নয়। গোটা পৃথিবীকেই নেতৃত্ব দেবেন সেঁজুতি। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, পোলিও ট্রানজিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মনিটরিং বোর্ডের সদস্য হিসাবে মনোনিত হয়েছেন সেঁজুতি। আর তাই একেবারে ডিরেক্টর জেনারেল হিসাবে। বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম কোনো চিকিৎসক এমন পদে স্থান পেলেন।

কাজ শুরু করার পর সেঁজুতির লক্ষ হবে নানা দেশে পোলিও দূরীকরণ কর্মসূচির বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করা। সেইসঙ্গে বাধ্যতামূলক টিকাকরণ, আপৎকালীন পরিকাঠামো, ইত্যাদি বিষয়েও নজর রাখা হবে। ডা. সেঁজুতি সাহা এও জানিয়েছেন, পোলিও খাতে সংগৃহীত অর্থের একটা বড়ো অংশই অন্যান্য কাজে খরচ করা হয়। এই বিষয়টির উপরেও নজর রাখা হবে।

আরও পড়ুন
চিকিৎসকই ‘আচার্য’, দীর্ঘ বিরতির পর শান্তিনিকেতনে শুরু হল উপাসনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই বোর্ডে সভাপতিত্ব করবেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা স্যার লিয়াম ডোনাল্ডসন। এছাড়াও সদস্য হিসাবে থাকবেন নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শেইলা লেথার্ম্যান এবং নাইজেরিয়ার চিকিৎসক ডা. লোলা ডায়ার। আর প্রত্যেকে মিলে যে পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন, এমন আশা করাই যায়। সেইসঙ্গে ডা. সেঁজুতি সাহার এই স্বীকৃতি সারা বিশ্বের কাছে বাঙালির সম্মানও অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।

আরও পড়ুন
মাত্র ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস! লকডাউনে প্রশংসনীয় উদ্যোগ কলকাতার চিকিৎসকের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনা-মোকাবিলায় দেশজুড়ে এগিয়ে এসেছেন ৩৮,০০০ অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক