আফগানিস্তানের বুকে নিজস্ব ট্যাটু পার্লার, ‘স্বাধীনতা’র লড়াই সোরায়া শাহিদির

ট্যাটু আঁকার আগে যত্ন করে হাতের উপর স্টেনসিল বসাচ্ছেন শিল্পী। তারপর একটু একটু করে যন্ত্র থেকে রং ঢেলে দিচ্ছেন। পুরো কাজটাই করছেন নিখুঁত নৈপুণ্যের সঙ্গে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আশ্চর্য এটাই যে, শিল্পী একজন মহিলা। তাও আবার লিঙ্গবৈষম্যের জন্য কুখ্যাত আফগানিস্তানের মহিলা তিনি। অথচ সামাজিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাবুলের বুকেই গড়ে তুলেছেন নিজস্ব পার্লার।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সোরায়া শাহিদি জানিয়েছেন তাঁর বেড়ে ওঠার কথা। ছোট থেকেই শিল্পের প্রতি ছিল তাঁর আগ্রহ। কিন্তু তার সঙ্গে চাইতেন এমন কিছু একটা করতে, যাতে সমাজের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকে একটা ধাক্কা দেওয়া যায়। ট্যাটু শেখার সুযোগ আফগানিস্তানে ছিল না। তাই ইরান থেকে সেই কাজ শিখে এসেছেন। তারপর কাবুলের মাটিতে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব পার্লার।

সোরায়ার কথায়, আমেরিকা ইউরোপ বা পৃথিবীর যে কোনো জায়গাতেই পার্লার তৈরি করতে পারতেন তিনি। কিন্তু আফগানিস্তানে কোনো মহিলা ট্যাটু শিল্পী নেই। এই সামাজিক ট্যাবুটাই ভাঙতে চেয়েছেন তিনি। আর মহিলা শিল্পীর কাছে ট্যাটু করাতে এগিয়ে এসেছেন অনেক মহিলাও। সোরায়া অবাক হয়ে দেখেন, সেইসব মহিলাদের পছন্দ কত কোমল। কেউ ফুলের ছবি আঁকেন, আবার কেউ প্রিয় মানুষের নাম। আবার অনেকের মনের মধ্যে মৃত্যুচিন্তার ছায়াও পড়ে। ট্যাটু আঁকতে আঁকতেই তাঁদের মনস্তত্ত্বও পড়ে ফেলেন সোরায়া। অবশ্য প্রথম দিকে যাত্রাটা খুব একটা সহজ ছিল না। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বহুবার চড়াও হয়েছে তাঁর উপর। কিন্তু কোনো মৌলভি বলেন ইসলামে ট্যাটু করা বারণ, কেউ আবার উলটো কথা বলেন। এসব কথাকে পাত্তা দিতে নারাজ তিনি। ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, শিল্প এবং লিঙ্গসাম্যের পক্ষেই লড়াই সোরায়া শাহিদির।

Powered by Froala Editor