পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বিমান-রুট, দৈর্ঘ্য মাত্র ২ মাইল!

ছোট্ট সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিমান। আয়তনে বড়োজোর মিনিবাসের সমান। চালক একজনই। আর তাঁর পিছনে ঠাসাঠাসি করে আটজন যাত্রীর বসার জায়গা। বিমানসেবিকার বালাই নেই কোনো। নেই কোনো ওয়াশরুমও। 

বর্ণনা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন, এই বিমান হয়তো কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তবে একেবারেই তেমনটা নয়। এই ছোট্ট বিমানই গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, এই বিমানে উঠলে মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় গন্তব্যে।

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। স্কটল্যান্ডের (Scotland) উত্তরে অর্কনি দ্বীপপুঞ্জ থেকে পাপা ওয়েস্ট্রেয়র নামে আরেকটি দ্বীপের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই বিমানপথ। দুই দ্বীপের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ১.৭ মাইলের একটু বেশি। অর্থাৎ, প্রায় পৌনে তিন কিলোমিটার। ফলে, আকাশে উড়ান দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার মাটিতে নেমে আসে এই বিমান। আকাশ মেঘমুক্ত হলে মাত্র ৫৮ সেকেন্ডের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যায় এই ফ্লাইট। তবে আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে কখনও কখনও লেগে যায় দেড় মিনিট। স্কটল্যান্ডের এই বিমান পরিষেবাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও। তাদের মতে, এটাই বিশ্বের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত নির্ধারিত যাত্রী পরিবাহী বিমানের রুট (Flight Route)। 

অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায় অন্য জায়গায়। দূরত্ব যেখানে মাত্র ৩ কিলোমিটার, সেখানে বিমানপথে যাতায়াতের আদৌ কি প্রয়োজন রয়েছে কোনো? হ্যাঁ, আছে। আদতে সমুদ্রপথে এই রাস্তা অতিক্রম করতে যে খুব বেশি সময় লাগে এমনটা নয়। তবে স্কটল্যান্ডের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা অধিকাংশ দ্বীপই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বহু উঁচুতে অবস্থিত। ফলে, দ্বীপের কাছে পৌঁছে গেলেও নৌপথ থেকে সরাসরি দ্বীপে ওঠার সুযোগ নেই। পাপা ওয়েস্ট্রেয়রের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই। অথচ, ৪ বর্গকিমি আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপেই বসবাস বহু মানুষের। তাঁদের দৈনন্দিন যাতায়াতের ভরসা এই বিমানই। যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রতিদিন দু’বার করে আর্কনি থেকে পাপা ওয়েস্ট্রেয়রের দিকে রওয়ানা দেয় এই বিমান।

আরও পড়ুন
ক্ষুদ্রতম পরিসরে আইনস্টাইনের সময় সম্প্রসারণ রেকর্ড করলেন মার্কিন গবেষকরা

অবশ্য এই যাত্রা কোনো যাত্রীর পক্ষেই খুব একটা সুখকর নয়। প্রথমত, বিমানের আয়তন ছোটো হওয়ায় ক্রমাগত কম্পন অনুভূত হয়। নাকে আসে পেট্রোলের পোড়া গন্ধও। বিমানের মধ্যে জায়গা কিঞ্চিৎ কম হওয়ায়, নড়াচড়ারও বিশেষ সুযোগ থাকে না যাত্রীদের। তবে স্থানীয়রা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন এতেই। আগ্রহে কমতি নেই পর্যটকদেরও। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বিমান রুটের অভিজ্ঞতা নিতে প্রতিবছর গ্রীষ্মে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন বহু পর্যটক। এমনকি তাঁদের জন্য এই সময়টায় উৎসবের ঢঙে সেজেও ওঠে পাপা ওয়েস্ট্রেয়র দ্বীপ…

আরও পড়ুন
ডিএনএ দিয়ে তৈরি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্থায়িত্ব মাত্র ৪৫ মিনিট, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম যুদ্ধেরও পরিণতি ভয়াবহ