১৩ মাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ির পথে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম শিশু

ওজন মাত্র ২১২ গ্রাম। না, কোনো মোবাইল ফোন নয়। সদ্যজাত একটি শিশুর ওজন মাত্র ২১২ গ্রাম। ঠিক একটা মোবাইল ফোনের ওজনের সমান। আর দৈর্ঘ্যে মাত্র ২৪ সেন্টিমিটার। এখনও অবধি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম শিশু হিসাবে জন্ম নিয়েছিল সিঙ্গাপুরের কুয়েক য়ু জুয়ান। চিকিৎসকরাও অনেকে আশা করেননি, জুয়ানকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত সুস্থ জীবন ফিরে পেল শিশুটি। ১৩ মাস হাসপাতালে কাটিয়ে এখন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে জুয়ান।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন জুয়ানের মা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই শরীর খারাপ হতে শুরু করে। তখন তাঁকে ভর্তি করা হয় সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনভার্সিটি হাসপাতালে। আর সেখানেই ধরা পড়ে, রক্তচাপজনিত দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনি। তাঁর পক্ষে পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত গর্ভধারণ সম্ভব হবে না। এতে মা ও শিশু দুজনেরই প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিজার পদ্ধতিতে শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। মাত্র ২৫ সপ্তাহের মাথায় জন্ম হয় জুয়ানের। এও এক বিশ্বরেকর্ড।

জুয়ানের এরকম জন্মে যথেষ্ট ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা। কারণ তাঁদের প্রথম সন্তান স্বাভাবিকভাবেই ভূমিষ্ট হয়েছে। এখন তার বয়স ৪ বছর। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে চিকিৎসকরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, সুস্থ শরীরে সন্তানকে ফিরিয়ে দেবেন তাঁরা। কথা রেখেছেন তাঁরা। ১৩ মাসের পরিশ্রমে একটু একটু করে বড়ো করে তুলেছেন তাকে। এই ১৩ মাস ধরে তাকে রাখা হয়েছিল সম্পূর্ণ যান্ত্রিক ঘেরাটোপে। প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই জুয়ান এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এখন তার ওজন ৬ কেজির উপরে। শারীরিকভাবে যদিও তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলতে নারাজ চিকিৎসকরা। কারণ ফুসফুসের একটু সমস্যা থেকেই গিয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটাও ঠিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

জুয়ানের এই ১৩ মাসের চিকিৎসার খরচ জোগানোর মতো সামর্থ্য তার বাবা-মায়ের ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছেই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। আর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিয়েছেন। এখনও অবধি ২ লক্ষ ৭০ হাজার ডলার তুলতে পেরেছেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও হাসপাতালের সমস্ত খরচা উসুল হয় না। অবশ্য সেই খরচ নিয়ে চিন্তির নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। জুয়ান যে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে যেতে পারছে এটাই বড়ো কথা। এর আগে আমেরিকায় ২০১৮ সালে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল, যার ওজন ছিল ২৪৫ গ্রাম। সেই রেকর্ড ভেঙে জুয়ান এখন ইতিহাসের ক্ষুদ্রতম শিশু হিসাবে বিবেচিত। আর এই ইতিহাস গড়ার কারিগর তো সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাই।

আরও পড়ুন
মাত্র ৫ জন প্রতিযোগী নিয়েই তিনটি পদক, অলিম্পিকজয়ী ক্ষুদ্রতম দেশের গল্প

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সরকারের উদ্যোগেই ৩ লক্ষ শিশু চুরি স্পেনে, যুক্ত ছিলেন চিকিৎসকরাও!