মহামারীতে অভিভাবকহীন ৪৩ হাজার মার্কিন শিশু

করোনা মহামারীতে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ লক্ষের বেশি মানুষ। প্রিয়জন হারানোর শোক ছেয়ে ফেলেছে গোটা বিশ্বকেই। তবে সবথেকে বিপর্যস্ত শিশুরা। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠার আগেই মহামারীতে অভিভাবকদের হারানো ভয়ঙ্করভাবে তাদের পরিচালিত করছে হতাশার দিকে। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমীক্ষায়।

গত এপ্রিল মাসেই জামা পেডিয়াট্রিক্সের প্রকাশ করে এই সমীক্ষার ফলাফল। সেখানেই দাবি করা হয়, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে মহামারীর কারণে বাবা-মায়ের মধ্যে অন্ততপক্ষে একজন অভিভাবককে হারিয়েছে অনূর্ধ্ব ১৫ বছরের ৪৩ হাজার শিশু। কেউ কেউ আবার দু’জনকে হারিয়েই সম্পূর্ণ অনাথ। তবে অভিভাবকবিয়োগের এই ঘটনা সবথেকে বেশি প্রকট কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যেই। এমনই জানাচ্ছে মার্কিন সংস্থাটির গবেষণা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর মার্কিন প্রদেশে নানান কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে গড়ে ৩৪ হাজার শিশু। এবার শুধুমাত্র মহামারীর কারণেই সেই সংখ্যাটা পৌঁছেছে ৪৩ হাজারে। ফলে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সম্মুখীন যুক্তরাষ্ট্র। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১২ জন মার্কিন শিশুর মধ্যে ১ জন অভিভাবকহীন হয়েছে কোভিডের জন্য। উপযুক্ত সময়ে কোভিডের ভ্যাকসিনেশন শুরু না হলে, এই সংখ্যাই তিনগুণ হত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

স্টোন ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক র্যানচেল কিডম্যানের জানাচ্ছেন, এক ধাক্কায় হঠাৎ অভিভাবকহীনতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে চলেছে সমাজে। এই ঘটনা যে শুধু শিশুদের হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে তা নয়; বরং তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যা কিংবা মৃত্যুর সম্ভাবনাও। ইতিমধ্যেই এমন একাধিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে মার্কিন প্রদেশ। মাস কয়েক আগেই কোভিডে পিতৃবিয়োগের পর আত্মহত্যা করে এক মার্কিন কিশোর। তা নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে। 

আরও পড়ুন
করোনার বিরুদ্ধে আয়ুধ ‘অ্যান্টিবডি ককটেল’, বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ?

সেইসঙ্গে অ্যাকাডেমিক সমস্যাও গুরুতর চেহারা নিতে চলেছে আগামীদিনে, এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকের পরিবার উপার্জনহীন হয়ে পড়ায়, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড পরিস্থিতিতে। ৯/১১ হামলার পর যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল মার্কিন সরকার— বর্তমানে ঠিক সেভাবেই জরুরি তৎপরতায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি বাবা-মা হারানো শিশুদের শনাক্ত করে, তাদের মানসিক কাউন্সিলিং-এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাও বিশেষ জরুরি বলে অভিমত তাঁদের। তবে সাম্প্রতিক এই রিপোর্টই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে গোটা বিশ্বকে। শুধুই কি আমেরিকার? প্রতিটা দেশেরই বাস্তব ছবি হয়তো এমনটাই। কিংবা আরও ভয়াবহ। এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা কতটুকু? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়...

আরও পড়ুন
করোনাকালে কেমন আছে ‘ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম’?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
এখনও অবধি করোনা সংক্রমণ শূন্য, অবাক করছে ওড়িশার গ্রাম