তথ্যচিত্রের টিকিটের অর্থ দিয়েই কোভিড-ত্রাণ, উদ্যোগ বাঙালি পরিচালকের

পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু এখনও মহামারীর সঙ্গে কি যুত করে উঠতে পেরেছি আমরা? বরং তার প্রভাবে হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে আমাদের চারপাশটা। বদলে গেছে আমাদের দৈনিক যাপনের ছবিও। সেখানে মিশে গেছে শোক, একাকিত্ব, হতাশা, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা। এবার করোনা মহামারীর এই খণ্ডচিত্রগুলোকেই এক সুতোয় বাঁধলেন পরিচালক অতনু ঘোষ। সম্প্রতি প্রকাশিত হল, তাঁর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘অনুভবে অতিমারি’।

“গত বছর পয়লা মার্চ আমার মা চলে গেলেন। আর তারপরেই লকডাউন শুরু হল ভারতে। তার আগে হয়তো সিনেমায় দেখেছি, বই-এ পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে যে সেটা সামনে চলে আসবে, সেটা কখনোই ভাবিনি। আমার মনের মধ্যে তখন এমন সব ভাবনা আসতে শুরু করল, যেন আমার জীবনদর্শনেরই বদল হচ্ছে। মনে হত এটা কি শুধু আমার মধ্যেই হচ্ছে? না সকলেই এই ব্যাপারটার সম্মুখীন হচ্ছেন? সেই প্রশ্ন থেকেই এই তথ্যচিত্রটি বানানোর পরিকল্পনাটা আসে।” 

আরও পড়ুন
করোনার বিরুদ্ধে আয়ুধ ‘অ্যান্টিবডি ককটেল’, বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ?

বলছিলেন পরিচালক অতনু ঘোষ। তথ্যচিত্র মূলত নির্মিত হয়েছে কুণাল সেন, অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনোদ ঘোষাল, জয়রাজ ভট্টাচার্য-সহ মোট ১৬ জন ব্যক্তির পৃথক পৃথক বাঙালি ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতার ওপরে। তাঁরা কেউ ভারতের বাসিন্দা, আবার কেউ প্রবাসী। আর তাঁদের চোখ দিয়েই ধরা পড়েছে করোনা মহামারীর বাস্তব পরিস্থিতি। সেই অনুভূতিগুলিকেই সাজিয়ে সাজিয়েই যেন মহামারীর এক লিখিত দলিল বুনেছেন পরিচালক। সেখানে যেমন প্রতিফলিত হয়েছে শ্রমজীবী মানুষদের হাহাকারের কথা, তেমনই অনুরণিত হয়েছে নতুন করে নিজেকে খোঁজার তাগিদ। তথ্যচিত্রটিতে সুর-সংযোজন করেছেন সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র।

আরও পড়ুন
করোনাকালে কেমন আছে ‘ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম’?


আরও পড়ুন
এখনও অবধি করোনা সংক্রমণ শূন্য, অবাক করছে ওড়িশার গ্রাম

বিগত একবছর ধরেই চলেছে তথ্য সংগ্রহ এবং এই তথ্যচিত্রের নির্মাণকাজ। ডিসেম্বরেই শেষ হয় তথ্যচিত্রটির নির্মাণ। বর্তমানে ২৭ মিনিটের দীর্ঘ এই ছবিটি উপলব্ধ মাইসিনেমাহল.কম ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। ৫০ টাকার টিকিটের বিনিময়েই তা দেখতে পাবেন দর্শকরা। তবে কোনোভাবেই বাণিজ্যিক নয় এই সিনেমাটি। অতনুবাবু জানালেন, “টিকিট থেকে প্রাপ্ত পুরো অর্থটাই ব্যবহৃত হবে কোভিডের ত্রাণকার্যে। আমরা এই টাকাটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেব।” এও এক অভিনব উদ্যোগ। মহামারীর এই কঠিন পরিস্থিতিতে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে যেন হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সেই মহামারীই। বলাই বাহুল্য, জীবন্ত এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে এই ছবি।

Powered by Froala Editor

More From Author See More