করোনার বিরুদ্ধে আয়ুধ ‘অ্যান্টিবডি ককটেল’, বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ?

কোভিডের চিকিৎসা নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েই চলেছে। বদলাচ্ছে চিকিৎসা পদ্ধতি। কখনও আবার পুরনো ওষুধের বদলে নতুন ওষুধ হয়ে উঠছে চিকিৎসকদের হাতিয়ার। এবার সেভাবেই ভারতের বাজারে এসে গেল অ্যান্টিবডি ককটেল। হরিয়ানায় এক ৮৪ বছরের বৃদ্ধের দেহে প্রথমবারের জন্য এই ককটেল ব্যবহার করলেন চিকিৎসকরা। আর সেই ইঞ্জেকশন প্রয়োগের মাত্র ২ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। এই নতুন ওষুধের কার্যকারিতায় রীতিমতো বিস্মিত চিকিৎসকরা।

তবে এই প্রথম নয়। ভারতের আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স-সহ একাধিক দেশেই ব্যবহৃত হয়েছে অ্যান্টিবডি ককটেল। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহারের পরে তার জনপ্রিয়তা বাড়ে আরও। এবার ভারতেও শুরু হল এর ব্যবহার। কিন্তু এই অ্যান্টিবডি ককটেল আদতে কী? 

“ককটেল মানেই একটা মিশ্রণ। মূলত করোনাভাইরাসের একাধিক স্ট্রেনের জন্য অ্যান্টিবডির সংমিশ্রণই এই অ্যান্টিবডি ককটেল। তবে এতে ব্যবহৃত সমস্ত অ্যান্টিবডিই কিন্তু প্রোগ্রামড। অর্থাৎ, ল্যাবরেটরিতে তৈরি। করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলেই আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে সেটা তৈরি হতেও একটা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ককটেল শরীরে ইনজেক্ট করা হলে, সেটা সরাসরি রক্তে মেশে। ফলে দ্রুত কাজ শুরু করে দেয়”, জানালেন টাকি রুরাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ তমোজিৎ গোস্বামী।

ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা রশে ইন্ডিয়া এবং সিপলার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই অ্যান্টিবডি ককটেল। ভারতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের জন্য মূলত দায়ী ছিল ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন। ভাইরাসের এই স্ট্রেনের দুটি মিউটেশনকেই ব্যবহার করা হয়েছে এই ককটেলে। ভারত ছাড়াও বেশ কিছু দেশে বর্তমানে ছাড়পত্র পেয়েছে রশে ও সিপলার তৈরি এই ওষুধ। আর তার কার্যকারিতা?

আরও পড়ুন
করোনাকালে কেমন আছে ‘ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম’?

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সৌমিতা পাল জানালেন, “অ্যান্টিবডি ককটেল মৃত্যুর হার এবং সিভিয়ারিটি কমাতে যথেষ্ট সক্ষম। মূলত এটি ব্যবহার করা হবে আশঙ্কাজনক রোগীদের ক্ষেত্রে। এবং এটা যে খুব তাড়াতাড়িই কোভিড নেগেটিভ করে দিতে পারবে, সেই উদাহরণও সামনে এসেছে। তবে এই মনোক্লোনো অ্যান্টিবডি বানানো বেশ খরচসাপেক্ষ ব্যাপার। এক একটা ইঞ্জেকশন তৈরিতে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। ফলে এটা বাজারে এসে গেলেও সাধারণ মানুষ সেটা কতটা কিনতে পারবেন, সংশয় আছে তা নিয়ে। সরকারি হাসপাতালে যেখানে পর্যাপ্ত গ্লাভস পাওয়া যায় না, সেখানে এত দামি ওষুধ পাওয়া বেশ দুষ্কর।” 

আরও পড়ুন
মজবুত করতে হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, করোনা-মোকাবিলায় নিদান চিকিৎসকদের

হ্যাঁ, কার্যকরী হলেও এই ইঞ্জিকেশনের দাম আকাশ ছোঁয়াই। মাত্র একটি ইঞ্জেকশনের দাম ধার্য করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭৫০ টাকা। ফলে সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছে সোনার পাথরবাটি হয়েই থেকে যাবে এই ওষুধ। 

আরও পড়ুন
করোনার ভারতীয় স্ট্রেন ‘গ্লোবাল কনসার্ন’, উল্লেখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র

তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোভিড চিকিৎসায় এই অ্যান্টিবডি ককটেলই কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ, এই ককটেলে ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের চেনা স্ট্রেনগুলির জন্য তৈরি হওয়ার অ্যান্টিবডি প্রোটিন। কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই চরিত্র বদল করে চলেছে করোনাভাইরাস। বদলে ফেলছে তার স্পাইক প্রোটিনের রাসায়নিক গঠন। ফলে ভবিষ্যতে নতুন কোনো স্ট্রেন এলে অনেকটাই কার্যকারিতা হারাবে এই জীবনদায়ী ওষুধ। তখন আবার প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে গবেষণা। কিংবা অ্যান্টিবডি ককটেলের জায়গায় চলে আসবে অন্য কোনো বিকল্প…

Powered by Froala Editor