অভিনয়ের চেনা গণ্ডি ভাঙতে চান অঙ্কুশ, আগ্রহী কোভিড-যোদ্ধা হতেও

“আমি যখন প্রথম সিনেমায় এলাম, তখন ছবি পাচ্ছি এটাই আমার কাছে একটা বড়ো বিষয় ছিল। কী ছবি, কেমন ছবি, সেটা বড়ো কথা নয়। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে ততই একটু অন্যরকম কিছু করার তাগিদ এসেছে। এখনও মনে হয়, এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করি যেখানে অঙ্কুশকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।” এসপিসি ক্রাফট আয়োজিত ‘শনিবারের গল্পগুজব’-এর গত পর্বে এই অপ্রাপ্তির কথাগুলোই উঠে এল টলিউডের তারকা অভিনেতা অঙ্কুশের কথায়। সেইসঙ্গে অভিনেতা ও বাচিকশিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টপাধ্যায়ের সঞ্চালনার সূত্র ধরে উঠে এলেন এক অন্য অঙ্কুশ, যিনি তারকা চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে অনেক বেশি নিজের কাছাকাছি।

বর্তমানে যখন করোনা আতঙ্কে সারা দেশ স্তব্ধ, তখন বহু মানুষ নিজের নিজের মতো করে এগিয়ে এসেছেন পরিস্থিতি মোকাবিলায়। সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অঙ্কুশও। সুজয়প্রসাদ সার্থকভাবেই মন্তব্য করেছেন, একজন তারকার পক্ষে তার “নিজের বন্ধনীর বাইরে বেরিয়ে এসে এভাবে সামিল হওয়া অনেক বেশি কঠিন।” আর এই কঠিন কাজের দায়িত্বটাই হাসতে হাসতে সামলে যাচ্ছেন তিনি। শহরের নানা প্রান্তে কোভিড দুর্গত মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁদের অতি পরিচিত তারকা। ‘শনিবারের গল্পগুজব’-এর আড্ডা থেকে অঙ্কুশ জানালেন, তাঁদের হেল্পলাইন নম্বরে দুর্গত মানুষদের পাশাপাশি যোগাযোগ করতে পারেন আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবকরাও। “আপনারা আমাদের ম্যান-পাওয়ার দিন। বাকি আয়োজনের দায়িত্ব আমাদের।” পাশাপাশি তিনি জানালেন, কোথাও কোনো কমিউনিটি কিচেন যদি বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তা পুনরায় চালু করার বিষয়েও যাবতীয় উদ্যোগ নিতে আগ্রহী তিনি।

এইসমস্ত আলোচনার পাশাপাশি বারবার উঠে এসেছে অভিনেতা অঙ্কুশের কথাও। বর্ধমান থেকে কলকাতা শহরে এসে কোনো পূর্বপরিচয় ছাড়াই তিনি হয়ে উঠেছেন টলিউডের একজন প্রথম সারির তারকা। একের পর এক সিনেমার ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে তাঁর একটি জনপ্রিয় চেনা চরিত্রও। আবার সেই চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতেও চান অঙ্কুশ। তাঁর কথায়, “সিনেমার দর্শকের রুচি কিন্তু বদলাচ্ছে। একসময় দক্ষিণী সিনেমার রিমেক তৈরি করলেই তা জনপ্রিয় হয়ে যেত। এখন সেইসব রিমেক তৈরি হওয়ার অনেক আগেই মূল সিনেমাগুলি মানুষ দেখে নিচ্ছেন নানা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দৌলতে। ফলে অভিনেতাকেও নিজেকে বদলাতে হবে।” এই বদল শুধু সিনেমার কাহিনিতেই নয়। অঙ্কুশ চান নিজের চেনা গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতেও। আড্ডার শুরুতেই যখন তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “কমার্শিয়াল স্টারদের সম্বন্ধে জানতে গেলে তো গসিপ ম্যাগাজিন থেকেই জানতে হবে”, তখনই বোঝা যায় এই একরৈখিক পরিচয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন তিনি।


তবু ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর এই জায়গা তৈরি হওয়ার পিছনে অঙ্কুশ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এসকে মুভিজ এবং এসভিএফ ফিল্মসকে। তাঁর কথায়, “তাঁদের তখন একজন নবাগতকে জায়গা দেওয়ার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমাকে তাঁরা তুলে এনেছেন, আমার নিজের একটা জায়গা তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁদের ব্র্যান্ডিং দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন আমাকে। এখানে আমার যোগ্যতার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁদের ব্র্যান্ডিং।” এই কমফোর্ট জোনের মধ্যেই গড়ে উঠেছে তারকা অঙ্কুশের পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও করেছেন অঙ্কুশ। ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ বা ‘বিবাহ অভিযান’-এর মতো সিনেমায় তাঁর কমিক টাইমিং-এর প্রশংসা করেছেন বহু মানুষ। সুজয়প্রসাদের কথাতেও সেই গুণের প্রশংসা শোনা গেল। আর অঙ্কুশ বলছিলেন, “কমিক চরিত্রে অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। কারণ এটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। একজন কৌতুকাভিনেতা প্রয়োজনের থেকে বেশি এক্সপ্রেশন দিলে দর্শক বলবেন ওভার-অ্যাক্টিং, আবার কম হলে বলবেন হাসাতে পারছে না।” তবে এর পরেও তারকা অঙ্কুশের বর্মের বাইরে বেরোতে পারেননি তিনি। সত্যিই কি কোনোদিন মননশীল সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাবেন তিনি? সেদিনই তাঁর অভিনয় দক্ষতার প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হবে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More