সকাল সকাল মুম্বাইয়ের বস্তিতে স্যানিটাইজেশন করতে ছুটেছেন এক সমাজকর্মী। এমন তো অনেকেই যাচ্ছেন। সারা শরীর পিপিই কিটে ঢাকা। রীতিমতো যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ। কিন্তু এই দৃশ্য একেবারে আলাদা। যে মানুষটি স্যানিটাইজেশন করতে এসেছেন তাঁর লাল রঙের পোশাকের উপর নানা রঙিন তাপ্পি। মাথায় রামধনু রঙের পরচুল। মুখে সাদা রং। মাস্কের উপর লাল লিপস্টিক দিয়ে আঁকা লম্বা ঠোঁট। তাঁকে দেখেই ‘জোকার! জোকার!’ বলে ছুটে আসছেন ছোটো-ছোটো ছেলেমেয়েরা। আগ্রহ নিয়ে দেখছেন বড়োরাও। কিন্তু জোকারের পোশাকের আড়ালে আসল মানুষটি কে?
পুরনো মুম্বাইয়ের বাসিন্দা অশোক কুর্মি পেশায় একটি ফার্মাকিউটিক্যাল কোম্পানির কর্মচারী। কিন্তু তিনি মনে করেন, তাঁর সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। বন্যা, ঘুর্ণিঝড় বা কলেরার উপদ্রব, বারবার প্রান্তিক মানুষদের কাছে ছুটে গিয়েছেন অশোক। আর এই করোনা অতিমারীতেও তাই ঘরের মধ্যে বসে থাকেননি। ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাই শহরের বুকে রয়েছে অসংখ্য ছোটোবড়ো বস্তি। এশিয়ার বৃহত্তুম বস্তি ধারাভিও মুম্বাইতেই। পৌরকর্মীরা এইসমস্ত অস্বাস্থ্যকর অঞ্চলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু নিজের বিপদের তোয়াক্কা না করেই পৌঁছে যাচ্ছেন অশোক। এমনকি সঙ্গে নেই পিপিই কিটও।
অশোকের মতে, বস্তি অঞ্চলে স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ভীষণভাবে প্রয়োজন সচেতনতা গড়ে তোলা। কিন্তু পিপিই কিট পরে সমস্ত সুরক্ষা নেওয়া যায় ঠিকই, তবে মানুষ এই পোশাক দেখলেই ভয় পায়। বিশেষ করে শিশুরা ভয়ে লুকিয়ে থাকে। অথচ অশোকের এই অভিনব পোশাক দেখে তারা নিজেরাই উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসে। অশোক তখন তাদের হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করে দেন। নিজের ঝোলা থেকে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন মাস্ক এবং স্যানিটাইজার। আর নানা ছবি আঁকা পোস্টারের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন কীভাবে হাত ধহুতে হবে, কীভাবে মাস্ক পরতে হবে। জোকারের পোশাক ছাড়াও কখনও সান্টা ক্লজ, কখনও ডোরেমন বা কখনও স্পাইডার ম্যানের পোশাকেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এসবের মধ্যে জোকারের পোশাকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। এই পোশাকের আড়ালে তাঁর প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখেন অশোক কুর্মি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার বিরুদ্ধে আয়ুধ ‘অ্যান্টিবডি ককটেল’, বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ?