'উল্কি দিয়ে যায় চেনা', মানসিক ভারসাম্যহীনদের শনাক্ত করতে নিদান বোম্বে হাইকোর্টের

“আদমশুমারি হলে তার মাথা কেউ গুনবে না।” কবীর সুমনের এই গানের মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে তাঁদের অসহায়তার কথা। তাঁদের বলতে মানসিক ভারসাম্যহীন সেসব মানুষগুলোর কথাই হচ্ছে, যাঁদের মাথার ওপর ছাদ নেই কোনো। খোলা আকাশের নিচে পথে-ঘাটেই তাঁদের দিনযাপন। সত্যিই তো সরকার কি রেখেছে তাঁদের ন্যূনতম খবরটুকু? বরং, মহামারীর আবহে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁরা। থেকে যাচ্ছে সংক্রমণের সম্ভাবনা। এবার তাঁদের জন্যই পদক্ষেপ নিল বোম্বে হাইকোর্ট। মানসিক ভারসাম্যহীন এবং গৃহহীন ব্যক্তিদের টিকাকরণের দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে। মঙ্গলবার এমনটাই রায় দিল বোম্বে উচ্চ আদালত।

কিছুদিন আগের কথা। মহামারীর আবহে মানসিক ভারসাম্যহীন এবং গৃহহীন ব্যক্তিদের মানধিকারের দাবিতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের অভিনেতা টি যে ভানু এবং আইনজীবী সরোশ ভারুচা। দায়ের করা হয়েছিল একটি জনস্বার্থ মামলা। দাবি ছিল, এই ধরনের ব্যক্তিদের টিকাকরণ এবং টিকা-পরবর্তী যত্নের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। 

দুই আবেদনকারীর এই মামলার ভিত্তিতে এদিন রায় দেয় বোম্বে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি এস কুলকার্নির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এই উদ্যোগে। পাশাপাশি মহারাষ্ট্র এবং বৃহন্মুম্বাই কর্পোরেশনকে গৃহহীন ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের ওয়ার্ডভিত্তিক বিশদ নথিও জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

তবে সমস্যা থেকে গিয়েছিল অন্য জায়গায়। এই ধরনের ব্যক্তিদের যে কোনোরকম পরিচয়পত্র নেই। নেই সরকারি তথ্যও। কাজেই ভ্যাকসিনেশন হলেও, তার পরিসংখ্যান থাকবে কীভাবে? দুটি ভ্যাকসিনেশনের মধ্যে বিস্তর সময়ের ফারাক থাকার ফলে ভোটের কালির মতো কোনো শনাক্তকরণ চিহ্নও ফলপ্রসূ হবে না সেক্ষেত্রে। এই সমস্যারও সমাধান দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা। এই ধরনের ব্যক্তিদের টিকাকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ বায়োমেট্রিক সিস্টেম স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি জানানো হয়েছে শনাক্তকরণ চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে স্থায়ী উল্কি বা ট্যাটু। যার মধ্যে লিপিবদ্ধ থাকবে প্রতি পর্যায়ের টিকাকরণের তথ্য। 

আরও পড়ুন
করোনাকালে গৃহহীন ইংল্যান্ডের ৭ লক্ষ পরিবার!

এই আদেশ পালিত হলে শুধু নিরাপত্তাই সুনিশ্চিত করা হবে না, বরং এর ফলে পথবাসী মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের পরিসংখ্যানও উঠে আসবে। এখন দেখার হাইকোর্টের এই রায় কত দ্রুত বাস্তবায়িত করতে পারে সরকার…

আরও পড়ুন
গৃহহীন মানুষদের নিজস্ব সংবাদপত্র, উপার্জনের স্বপ্ন ও একটি বিপ্লবের গল্প

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গৃহহীনদের জন্য পথের ধারেই অত্যাধুনিক বাসস্থান জার্মানিতে