পৃথিবীর বিরলতম ক্যানসারের চিকিৎসায় পথ দেখাচ্ছে আণুবীক্ষণিক কৃমি

২০০৩ সালে গুজরাটের ডান্ডি শহরে মারা যান স্যু উইলিয়ামসন। আর সেইসঙ্গে সন্ধান পাওয়া যায় এক বিরল ধরনের ক্যানসারের। এই ক্যানসার মানুষের রক্তবাহ এবং স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে টিউমার তৈরি করে। এবং শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত মানুষটির মৃত্যু ঘটে। কোনো ধরণের চিকিৎসাই জানা নেই গবেষকদের। ইতিমধ্যে স্যু ছাড়াও তাঁর দুজন নাতির শরীরে একই রোগ বাসা বেঁধেছে। এই ক্যান্সারের নাম ফাওক্রোমসাইটোমা বা সংক্ষেপে ফাও। সারা পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৩ জনই। অনেক জায়গায় এটিকে উইলিয়ামসন ডিজিজ বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে এর মধ্যেই রোগটির সম্ভাব্য চিকিৎসার রাস্তাও খুঁজে পেয়েছেন ডান্ডি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। আর এই গবেষণায় সাহায্য করেছে ছোট্ট একটি আণুবীক্ষণিক কৃমি।

প্রথমে উইলিয়ামসন পরিবারের ডিএনএ থেকে নমুনা নিয়ে ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় ইঁদুররা বেশ সুস্থই আছে। ফলে গবেষকরা বুঝতে পারেন, এই রোগ আসলে অত্যন্ত প্রাচীন। আধুনিক বেশিরভাগ প্রাণীই এর বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা অর্জন করেছে। আর তাই বেছে নেওয়া হয় একটি বিশেষ ধরণের কৃমির প্রজাতিকে। কয়েক লক্ষ বছর ধরে এই প্রজাতির জিনে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আর শেষ পর্যন্ত গবেষণায় সাফল্যও পাওয়া যায়। এই প্রাগৈতিহাসিক কৃমির শরীরে একটু একটু করে টিউমার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর সেই ঘটনার পর্যবেক্ষণ থেকে উঠে আসে আরও নানা তথ্য।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টিউমার আক্রান্ত কোষে সাক্সিনেট ডিহাইড্রোজেনেজ বি উৎসেচকের অভাব দেখা যায়। আর এর ফলেই সেই কোষে মাইটকন্ড্রিয়ার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এখন প্রস্ন হল, কীভাবে লড়াই করা সম্ভব এই রোগের সঙ্গে। তার উত্তরও দিয়েছেন গবেষকরা। দেখা গিয়েছে সুস্থ প্রাণীকোষেই এমন উৎসেচক আছে যা এসডিবি-র ক্ষরণ কমিয়ে আনতে পারে। আর এই উৎসেচককে কাজে লাগিয়ে ওষুধ তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। স্যু উইলিয়ামসনকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু তাঁর উত্তরপুরুষ জিনি এবং জেমসকে বাঁচানো যাবে বলেই আশাবাদী গবেষকরা। আর ভবিষ্যতে অন্য কোনো মানুষের শরীরে এই রোগের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলেও একই পদ্ধতি কাজে আসবে। তবে ঠিক কীভাবে উইলিয়ামসন পরিবারের মধ্যে এই জিন ছড়িয়ে পড়ল, সেই তথ্য এখনও অজানাই থেকে গিয়েছে।

Powered by Froala Editor