কোনোরকম প্রতিবন্ধকতাই যে অজেয় নয় তাই-ই প্রমাণ করে দিলেন আন্দ্রেয়া ম্যাসন। ৩৩০ মাইল দীর্ঘ ‘সি টু সামিট’ ট্রায়াথলন সম্পূর্ণ করা প্রথম ক্যানসারকে হারানো মহিলা হলেন তিনিই। তাও মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে জয় করলেন ইংল্যান্ডের লাঙ্কাশেয়ারের ব্ল্যাকপুলের বাসিন্দা আন্দ্রেয়া।
২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই। গুরুতর এন্ডোমেট্রিওসিস এবং জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আন্দ্রেয়া। হয়েছিল অস্ত্রোপচারও। জীবন-মৃত্যুর টানাটানির মধ্যে শেষ অবধি আন্দ্রেয়াই জিতেছিলেন লড়াইটা। তবে জীবনের কিনার থেকে ফিরে এসে জীবনটা আর পাঁচজনের মতো সাধারণভাবেই কাটাতে পারতেন তিনি। তার বদলে তাঁর মতো হাজার হাজার মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য, বিশেষত এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে সচেতন করার জন্যই শুরু করলেন কর্মযজ্ঞ।
প্রজনন সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে কথোপকথনকে চিরকালই খুব একটা ভাল চোখে দেখে না সমাজ। সেক্ষেত্রে মহিলারাও লুকিয়ে রাখেন গভীর সমস্যাগুলিই। অনেকক্ষেত্রেই প্রকাশ্যে আনেন না যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলির কথা। অন্যদিকে নিশ্চুপেই বাসা বাঁধে মারণ রোগ। এই পরিস্থিতিকেই স্বাভাবিক করার জন্য আন্দ্রিয়া গত বছর তার নিজস্ব দাতব্য সংস্থা, ‘লেডি টক ম্যাটার্স’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে সেখানেই শেষ নয়, মহিলাদের এই প্রথাগত ট্যাবু থেকে বাইরে নিয়ে আসতেই এই কঠিনতম চ্যালেঞ্জেই সামিল হলেন তিনি।
ফ্রান্সের আল্পসে শুরু হয়েছিল এই কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। প্রথমে অ্যানেসি লেকের পরিধি ঘিরে ২৩ মাইল সাঁতার কাটা, তারপর ২০৫ মাইল সাইকেলিং এবং শেষে ১০৫ মাইল দৌড়ের মাধ্যমে ইউরোপের দ্বিতীয় উচ্চতম শিখর মন্ট ব্ল্যাঙ্কের শীর্ষে পৌঁছানো। যার উচ্চতা ১৫ হাজার ৭৭৪ ফুট।
আরও পড়ুন
স্থায়ী ‘প্রাইড হাউস’ তৈরির পথে টোকিও, অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম
গত শুক্রবার ৪ তারিখে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে তাঁর এই অভিযান শুরু সময়ই সঙ্গী হয়েছিল অসহ্য যন্ত্রণা, ক্র্যামিং এবং হ্যালুসিনেশন। তবে পিছিয়ে আসেননি আন্দ্রেয়া। ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই শুরু করেছিলেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই। বুধবার আন্দ্রেয়া তাঁর ট্রায়াথলন চ্যালেঞ্জটি সম্পূর্ণ করেন মাত্র ৪ দিন ২৩ ঘণ্টা ৪১ মিনিটে। পুরো সময়টায় এতটুকুও ঘুমাননি তিনি। রাতের অন্ধকারেও চালিয়ে গেছেন পর্বতারোহণ। বিশ্রাম বলতে খাওয়া আর রান্না করার সময়টুকুই।
কঠিনতম চ্যালেঞ্জটি অতিক্রম করে নিজেও উচ্ছ্বসিত আন্দ্রেয়া। জানিয়েছেন, এখনও যে সকল মহিলারা যন্ত্রণাদায়ক এই মারণরোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না চিকিৎসার অভাবে, তাঁদের জন্যই এই হার্ডল অতিক্রম করেছেন তিনি। রাস্তার মাঝপথে কঠিন, অসম্ভব মনে হয়েছে, কখনো বেঁকে বসেছে শরীর। তবু সেসব সামলেও উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি, আবার শুরু করেছেন এই লড়াই। তাঁর এই কঠিনতম চ্যালেঞ্জের বাস্তবায়ন এক আলাদা নজির গড়ল। ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিল সকল ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদেরই...
আরও পড়ুন
ইতিহাসে প্রথমবার, প্রথম ৫০ উদ্ভাবনী শক্তিধর দেশের মধ্যে স্থান ভারতের
Powered by Froala Editor