একটিমাত্র গাছ দিয়েই তৈরি আস্ত জঙ্গল, ভারতেই রয়েছে এই স্থান

জঙ্গল বলতে ঠিক কী বুঝি আমরা? অনেক রকম গাছ, ঘন সবুজের আস্তরণ; সঙ্গে পশু পাখির অবাধ বিচরণ। এক মুক্ত হাওয়ার মতো! কিন্তু যদি বলা হয়, মাত্র একটি গাছ দিয়েই একটা আস্ত বন তৈরি হয়েছে? আর সেটা রয়েছে এই ভারতেই? এমনই অদ্ভুতভাবেই তৈরি হয়েছে থিম্মাম্মা মারিমানু। ভারত তো বটেই, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গাছও এটি। যেটা একাই তৈরি করেছে প্রায় পাঁচ একর বড়ো একটি জঙ্গল। প্রায় আড়াইটে ফুটবল মাঠের সমান!  

অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিরি শহর থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই সবুজ অঞ্চল। এমনিতে রাস্তা দিয়ে গেলে এখানকার শুখা ভূপ্রকৃতি নজরে পড়বে। তারপরই মুহূর্তে পট পরিবর্তন। চারিদিক থেকে নেমে এসেছে লম্বা লম্বা ডাল। মাথার ওপর পাখির ডাক। এমনই পরিবেশ থিম্মাম্মা মারিমানু’র। পাঁচ একরের এই বিশাল জায়গার আসল জিনিস কিন্তু একটি বটগাছ! এই একটি বটগাছ থেকেই ঝুরি নেমে এসে তৈরি করেছে এই বিশাল অঞ্চল। থিম্মাম্মা মারিমানু সম্পর্কে স্থানীয় একটি কাহিনিও শোনা যায়। পনেরো শতকে ওই অঞ্চলে থিম্মাম্মু নামের এক মহিলা বসবাস করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সেই দুঃখে স্বামীর চিতায় ঝাঁপ দিয়ে ‘সতী’ হন। ওই সময় ভারতের নানা জায়গায় এই প্রথার প্রচলন ছিল। যাই হোক, লোকমুখে শোনা যায়, যেখানে এই ঘটনা ঘটে তার কাছেই বটগাছটি জন্ম নিয়েছিল। কালে কালে সেই গাছটাই তৈরি করেছে বিশাল জঙ্গল… 

স্থানীয় মানুষদের গাছে এই জায়গাটি স্রেফ একটি জঙ্গল নয়; একটি পবিত্র স্থানও বটে। ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে বটগাছ জড়িত প্রবলভাবে। তার ওপর এমন লোককথা। সেই প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামবাসীরা থিম্মাম্মা মারিমানু’র প্রাঙ্গণে পূজার্চনা সারেন। তবে ধীরে ধীরে এই নামটি অন্ধ্রপ্রদেশ আর ভারতে আটকে নেই। ১৯৮৯ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গাছ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল। তারপর থেকেই গোটা বিশ্বে এর খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে। প্রতি বছর বহু পর্যটক এই জঙ্গলকে নিজের চোখে দেখতে আসেন। 

তবে আজ থিম্মাম্মা মারিমানুকে নিয়ে বেশ চিন্তিত পরিবেশবিদরা। এতকাল ধরে এত বিশালভাবে বেড়ে ওঠার ফলে সংরক্ষণের সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার ওপর বেশ কিছু লোকের অত্যাচারের প্রভাবও পড়েছে এর ওপর। স্থানীয় গ্রামবাসীরাই আপাতত এর দেখভাল করছেন। ইউনেস্কোর কাছে আবেদনও করা হয়েছে হেরিটেজ সাইটের জন্য। যদি সেটা করা হয়, তাহলে সেরা পরিবেশবিদরা এর সংরক্ষণের কাজে সাহায্য করতে পারবেন। এদিকে এখনও বেড়েই চলেছে এই বটগাছ। বেড়ে চলেছে বনও। যেন নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায়, সেটাই এখন প্রার্থনা করছেন সবাই।

আরও পড়ুন
কেটে ফেলার পর মাথায় হাত; পৃথিবীর ‘প্রাচীনতম’ জীবিত গাছ ছিল ওটিই!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছিল ‘কার্ল মার্ক্স’, হয়ে গেল ‘জেনারেল শেরম্যান’, ২০০০ বছরের বুড়ো এক গাছের গপ্পো

More From Author See More